শনিবার শেষ হয়েছে এবারের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব। তারপরেই বিভিন্ন সংস্থার তরফে এক্সিট পোল বা বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশ হয়। সেখানে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে ফের দেশজুড়ে গেরুয়া ঝড়ের ইঙ্গিত মিলেছে। শুধু তাই নয় একাধিক বুথ ফেরত সমীক্ষায় প্রকাশিত পশ্চিমবঙ্গেও ২০ টিরও বেশি আসন নিজেদের ঝুলিতে ভরবে পদ্ম শিবির।
নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকেই প্রতিটি বিজেপি নেতার গলায় শোনা গিয়েছিল একটাই স্লোগান, এই বার ৪০০ বার। এমনকি, রাজ্যে যতবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সভা করতে এসেছিলেন তাঁর গলাতেও শোনা গিয়েছিল ওই একই স্লোগান। যদিও শনিবার প্রকাশিত বুথফেরত সমীক্ষায় ৪০০টি আসন দেওয়া হয়নি BJP-কে।
বুথফেরত সমীক্ষা যে সবসময় মিলে যায় এমনটাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। এক্সিট পোলে যে সমীক্ষা দেখানো হয়েছে তাতে বিজেপি যে সাময়িক অতিরিক্ত অক্সিজেন পাবে সেবিষয়ে নিশ্চিত করে বলা যেতেই পারে।
কিন্তু কীভাবে এত ভালো ফল হতে পারে BJP-র? এক্সিট পোলের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে উত্তর ও পশ্চিম ভারতে শুধু যে জমি ধরে রাখতে পারবে BJP এমনটা নয়, দক্ষিণ ভারতেও খাতা খুলতে পারে পদ্ম শিবির। চলতি লোকসভা নির্বাচনে কেরলে একা লড়ছে BJP। বুথ ফেরত সমীক্ষায় পূর্বাভাস মিলেছে, কেরলে একা লড়ে আসন জিততে পারে তারা। পাশাপাশি তামিলনাড়ুতে AIADMK-র সাহায্য ছাড়াই একাধিক আসনে জেতার সম্ভাবনা BJP-র।
অন্যদিকে পঞ্জাব ক্ষমতায় রয়েছে আপ সরকার। কিন্তু বুথ ফেরত সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, সেখানেও চমকে দেওয়া ফলাফল করতে পারে গেরুয়া শিবির। এমনকি দিল্লিতেও BJP-র ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।
গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় চলতি ভোটে BJP চমকে দেওয়া ফলাফল করতে পারে পশ্চিমবঙ্গে। এমনই ইঙ্গিত মিলেছে বুথফেরত সমীক্ষায়। ২০১৯ সালে বাংলা থেকে BJP-র আসন সংখ্যা ছিল ১৮টি, অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষায় প্রকাশ এই লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে BJP জিততে পারে কমপক্ষে ২৫টি আসন।
স্বাধীন ভারতে এর আগে আর কোনও প্রধানমন্ত্রীই টানা তিনবারের প্রতিবারই আসন সংখ্য়া বাড়িয়ে লোকসভা ভোটে জিততে পারেনি। ফলে এক্সিট পোলের ইঙ্গিত মিলে গেলে এক বিরল ইতিহাসের জন্ম দিতে পারেন নরেন্দ্র মোদী।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বুথফেরত সমীক্ষা সঠিক হলে একটা বিষয় মানতেই হবে যে ব্যাপক অসমতা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, মূল্যবৃদ্ধির মতো একাধিক সমস্যা সাধারণ মানুষের সামনে এলেও তাতে মোদীর দল বিজেপির ভোট কমাতে পারে। বরং তা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের মত, চলতি নির্বাচনে ধর্মীয় মেরুকরণ বড় ফ্যাক্টর ছিল বিরোধীদের কাছে। ধর্মের ভিত্তিতে মোদী ভোট ভাগাভাগির চেষ্টা করছেন বলে বিরোধী দলের নেতাদের অনেকেই দাবি করেছিলেন। বিরোধীদের সেই অভিযোগ যে খুব একটা ভুল নয় তাও প্রকাশ পেয়েছে বুথ ফেরত সমীক্ষায়।
দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রে NDA-র বিরোধী জোট তৈরি হলেও তা যে খুব একটা সাধারণ ভোটারদের মনে প্রভাব ফেলতে পেরেছে এমনটাও মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের ধারণা, মোদী বিরোধিতায় কোনও ইস্যুকেই জোড়ালো ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। এমনকি INDIA জোট ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী মুখ কে হবেন সেনিয়েও স্পষ্ট করে কোনও জবাব ছিল না বিরোধীদের কাছে। এটাও বড় কারণ হতে পারে।
বুথ ফেরত সমীক্ষায় যা ইঙ্গিত বিগত তাতে একটা বিষয় নিশ্চিত, বিগত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা কমে নি বরং বেড়েছে। কিন্তু আদতে কি তার প্রভাব পড়েছে EVM-এ? জানা যাবে ৪ জুন।