কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়? এই প্রশ্ন সহজ এবং উত্তরও জানা। কিন্তু, কতটা অন্ধকার পেরোলে তবে আলোয় ফেরায় যায়, এই প্রশ্নের ভার যেমন বেশি, উত্তরও তেমনই অধরা। তবু, কেউ কেউ বেড়া ডিঙিয়ে শেষমেশ অধরাকে স্পর্শ করে ফেলেন ঠিকই। তাঁদের কথা তখন ফেরে লোকমুখে। কিন্তু, ঘটনা হল, সমস্ত অধরাকে স্পর্শ করার কাহিনির নেপথ্যে, প্রকাণ্ড জীবনের যে দাঁতে দাঁত চেপে প্রায়-অসম লড়াইয়ের গল্পগুলো থাকে, তা যখন প্রকাশ্যে আসে, তখনই কেবল আমরা জানতে পারি কত ছিন্ন কুয়াশার ইতিহাস।
এমন একটি জীবনের কথাই শনিবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট (Facebook profile) থেকে শেয়ার করলেন বিশিষ্ট অভিনেতা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় (Bengali actor Anindya Chattopadhyay)। জানি দেখা হবে, বাপি বাড়ি যা, চতুষ্কোণ, বেলাশেষে, মহালয়া প্রভৃতি ছবির অভিনেতা অনিন্দ্য জানান, ড্রাগের নেশার পাঁকে ডুবে গিয়েছিলেন তিনি (Bengali actor Anindya Chattopadhyay shared a post on drug addiction)। সুস্থ হওয়ার জন্য বারবার যেতে হতো রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে (Rehabilitation centre)। তাতেও তেমন লাভ হতো না কিছুই। রিহ্যাব থেকে বেরিয়ে ফের নেশা। রিল্যাপস (Relapse)।
তাঁর ফেসবুক পোস্টে তিনি ((Bengali actor Anindya Chattopadhyay shared a post on drug addiction)) লিখেছেন, ‘…যেদিন ছাড়া পেতাম সেদিনকেই রিলাপস, এরম একটা প্যাটার্ন ছিল । ৬/৭ বছর ধরে অনবরত ঘুরতে থাকা একটা বৃত্ত । নয় বাইরে নেশা করছি নয় তালা চাবির ভিতরে ভালো আছি । তালা চাবির বাইরে বেরোলেই আবার নেশা । না নিজে বিশ্বাস করতাম যে আমি কোনোদিন ভালো হতে পারবো না আমাকে কেউ বিশ্বাস করতো যে আমি কোনোদিন নেশা ছেড়ে দেবো…’
যখন সকলেই ধরে নিয়েছিল, আর কিছুই হবে না। নেশা করে শেষ হয়ে যাবে আরও একটি তরতাজা প্রাণ, তখনই তাঁর জীবনে এসেছিল এক উল্লেখযোগ্য ও অনিবার্য বাঁক। যেটির জন্ম ২০০৮ সালের ২৩ জানুয়ারি। এই দিনটির উল্লেখ করে শনিবার অনিন্দ্য ((Bengali actor Anindya Chattopadhyay shared a post on drug addiction)) তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘…কালকে আমার জন্মদিন । কালকে আমার নেশামুক্তির ১৪ বছর । ২৯শে ডিসেম্বর তো বায়োলজিক্যাল বার্থডে। কিন্ত কালকের দিনটা আমার কাছে আরো স্পেশাল…’
নতুন জন্ম। শুনতে সহজ মনে হলেও, এ যে আসলে কতটা কঠিন! সমস্ত অপমান, হেরে যাওয়া, ‘ও তো নেশাখোর’ বলে আত্মীয়-বন্ধু-পরিজনদের নাক সিঁটকিয়ে দূরে সরে যাওয়া, তীব্রতম অবসাদ, সবকিছু থেকে একা হয়ে যাওয়া এবং শেষে মৃত্যু। নেশা করাকে শিল্প, সাহিত্য ও সামাজিক জীবনে অহরহ সেলিব্রেট করতে করতে আমরা মনেও রাখি না যে, এটি আসলে একটি অসুখ। আর, পাঁচটা অসুখের মতোই এই অসুখটিও সবার হয় না। কারও কারও হয়। কিন্তু, একবার হলে, তা থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত কঠিন।
তবু, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের মতোই, যে গুটিকয়েক মানুষ এর থেকে চিকিৎসার সুপ্রভাবটুকুকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেন সম্পূর্ণভাবে, ‘জীবনে ফিরতেই হবে’ এই জেদ সঙ্গে নিয়ে সবরকম ডিনায়াল ভেঙে মেনে নিতে পারেন নিজের অসুখকে, আর নিজেকেই নিজে উপহার দিতে পারেন এক নবজন্ম, তাঁদের জন্যই এখনও আশা রাখতে ইচ্ছে হয়। 'ওয়ান ডে অ্যাট আ টাইম' নীতি মেনে একটা একটা দিন করে ভালো থাকার আশা।
আর, তাঁদের জন্যই একটু অন্যরকমভাবে মনে পড়ে, শশাঙ্ক রিডেম্পশন সিনেমার সেই বিখ্যাত কথাটিও- হোপ... ইজ আ বিউটিফুল থিং। অ্যান্ড হোপ... ইজ লাইফ ইটসেলফ...