ধারাবাহিক মানেই প্রতিদিনের মনোরঞ্জনের ঠিকানা । দূরদর্শন থেকে শুরু হয়েছিল সফর । সেই সফর আরও দীর্ঘ হয়েছে । জুড়েছে নতুন নতুন চ্যানেল । তবে, তবে, গত কয়েক বছরে বদলে গিয়েছে সিরিয়ালের ধারা । জন্মভূমি, জননী, খেলা-র মতো ধারাবাহিক চলেছে বছরের পর বছর । কিন্তু, এখন দেখা যাচ্ছে ধারাবাহিক শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে । কারও আয়ু ৬ মা, মাস, কারও ৪ মাস । টিআরপিও কমেছে । তাহলে কি সিরিয়াল থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন দর্শকরা ?
দ্রুত ধারাবাহিক বন্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে নবীন-প্রবীণ অভিনেতারা বলছেন, টিআরপি সবটা নিয়ন্ত্রণ করে। রেটিং ভাল না হলে বিজ্ঞাপন আসে না । আবার কেউ বলছেন, মানুষের রুচি বদলেছে । অনেকে আবার দোষ দিচ্ছেন দুর্বল চিত্রনাট্যকে । সম্প্রতি, এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন সুদীপা চট্টোপাধ্যায় । একটি পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় । অভিনেত্রীর মতে,বাংলার দর্শক মূলত ঝুঁকছে পাকিস্তানি সিরিয়াল, কোরিয়ান ড্রামা, বাংলাদেশি নাটকের দিকে । তার কারণ, প্রতিবেশী দেশগুলির সিরিয়ালে গল্পের যে বুনট, তা দর্শকদের টেনে রাখে । বাস্তবটাকে দেখানো হয় । কিন্তু, বাংলা ধারাবাহিক সেই বাস্তব থেকেই সরে আসছে । ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই গল্প, একই সেট...ধৈর্য্য হারাচ্ছেন দর্শকরা । টিভি ইন্ডাস্ট্রিক প্রযোজক, পরিচালকদের জেগে ওঠার বার্তা দিয়েছেন অভিনেত্রী ।
সুদীপা জানিয়েছেন, মন খারাপ থেকেই এত কথা লিখেছেন । কেন মন খারাপ অভিনেত্রীর ? আসলে সুদীপা তাঁর পোস্টে পাকিস্তানি সিরিয়াল কভি ম্যায়, কভি তুম ধারাবাহিকটির একটি পোস্টার শেয়ার করেছেন । সেখানে দেখা যাচ্ছে,ধারাবাহিকের শেষ পর্ব টিভিতে নয়, দর্শকদের দাবিতে বড় পর্দায় মুক্তি পাচ্ছে । ভারতের তথা বাংলার দর্শকরা এমনটা ভাবতেই পারেন না । এই প্রসঙ্গ টেনে সুদীপা লেখেন, 'দর্শক বাধ্য হচ্ছেন,আমাদের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের টিভি সিরিয়াল মুগ্ধ হয়ে দেখতে…
কি সুন্দর গল্পের বন্ধন,কি ন্যাচলার মেক-আপ,কি স্বাভাবিক জামা কাপড়,কোনও সেট নয় । লোকেশনে গিয়েই শুটিং হয় । ...আমরা কোনওদিনও ভাবতে পারি একটা গল্প মানুষ এত পছন্দ করেছে যে নির্মাতারা বাধ্য হয়ে বড়পর্দায় শেষ এপিসোড দেখাবে ।
সুদীপা-র প্রশ্ন, 'আর কবে আমাদের চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বুঝবেন, যে দর্শক টিভি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন? বাধ্য হচ্ছেন- বাংলাদেশি নাটক, পাকিস্তানি সিরিয়াল,আর কোরিয়ান ড্রামা দেখতে। এটা কতদিন অস্বীকার করবেন? সেই এক গল্প, এক পোশাক, এক সেট। এবার জাগুন! আর কতদিন শাঁখা-সিঁদুরের দিব্যি দিয়ে এক গল্প নতুন মোড়কে চালাবেন? মেয়েদের কাহিনিটা আরেকটু সম্মান দিয়ে ভাববেন কি?'
ধারাবাহিকের টিআরপি প্রসঙ্গে সুদীপার বক্তব্য, আগে সর্বোচ্চ টিআরপি ছিল ১১ বা ১২ । এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৭.৭-এ । টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি একটা বড় মাপের ইন্ডাস্ট্রি । এই ইন্ডাস্ট্রির উপর নির্ভর করে অনেকের সংসার চলে । সেই ইন্ডাস্ট্রি কে নিয়ে এত ছেলেখেলা-বেশিদিন সইবে না। সুদীপা জানিয়েছেন, তাঁর এই পোস্টের পর তাঁকে আবার ট্রোল করা হবে, নিন্দুকেরা নানারকম কথা বলবেন । কিন্তু, অভিনেত্রী তাঁর ইন্ডাস্ট্রিকে ভালবাসেন । তাই আর চুপ করে থাকতে পারেননি । অভিনেত্রীর দাবি, সবাই কত এগিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু, বাংলা যদি মেয়েদের সবার মন জয় করার কাহিনি শোনাতে ব্যস্ত থাকে, তাহলে এভাবেই পিছিয়ে পড়তে হবে । বাংলা সিরিয়াল ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি ।
প্রসঙ্গত, সিরিয়াল নিয়ে একটি মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত । সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, সেখানেই নাকি তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, যাঁরা ধারাবাহিক করেন তাঁদের অবস্থা নাকি খারাপ ৷ তারপরই ট্রোলড হতে শুরু করেন অভিনেতা । এই বিষয়ে বনি সম্প্রতি মুখ খুলেছেন । অভিনেতার দাবি, তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে । একটি ভিডিও শেয়ার করে বনি জানিয়েছেন, তিনি বলেছিলেন, তাঁর এতটাও খারাপ অবস্থা নয় যে কারও সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করে তাঁকে সিরিয়াল করতে হবে । খারাপ লাগা থেকেই তিনি বলেছিলেন । কোনওভাবে দর্শকদের কাছে ভুলবার্তা পৌঁছেছে । তাঁর দাবি, সিরিয়ালকে খারাপ বলছেন না তিনি । কোনও প্রফেশনকে তিনি ছোট করতে চাননি ।
সম্প্রতি, জি বাংলায় দু'টি নতুন ধারাবাহিক শুরু হচ্ছে । একটা হল পরিণীতা ও আরেকটি হল মিত্তিরবাড়ি । টেলিপাড়ায় গুঞ্জন ছিল, দুই ধারাবাহিকের আগমনে শেষ হয়ে যেতে পারে জগদ্ধাত্রী বা নিম ফুলের মধু-র মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিক । তবে, এখনও সেই বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি । জি বাংলার ধারাবাহিকগুলির স্লটে বড় পরিবর্তন হচ্ছে । কোন ধারাবাহিকের সময় বদলে গিয়েছে, দেখে নিন একনজরে
দুপুর সাড়ে তিনটে - অমরসঙ্গী
বিকেল চারটে - রান্নাঘর
বিকেল সাড়ে চারটে - দিদি নং ওয়ান
সাড়ে ৫টা - পুবের ময়না
সন্ধে ৬টা - নিম ফুলের মধু
১১ নভেম্বর থেকে রাত আটটার স্লটে শুরু হচ্ছে পরিণীতা । প্রথমে জানানো হয়েছিল, সন্ধে ৭টায় দেখানো হবে ধারাবাহিকটি । পরে বদলে দেওয়া হয় সময় ।