ঝাঁকড়া চুল । পরনে পাঞ্জাবি । তাঁর হাতের স্পর্শে তবলায় সুর, ছন্দের মায়াজাল তৈরি করতেন শিল্পী । কখনও সেই সুরে প্রেমের ছোঁয়া, কখনও বিরহের কান্না । জন্মের পর থেকেই যাঁর কান শুধু তবলার বোল শুনতেই অভ্যস্ত,যাঁর দিন-রাত কাটত তালে-ছন্দে, আজ সেখানে শুধুই শূন্যতা । শিল্প থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন শিল্পী । সুরের তাল কাটল । আজ জলসা শূন্য । প্রয়াত উস্তাদ জাকির হুসেন । আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন । সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন শিল্পী । উস্তাদের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সঙ্গীত জগত । শোকপ্রকাশ করেছেন বলিউড ও টলিউডের তারকারাও ।
জাকির হুসেনের প্রয়াণে চোখে জল অমিতাভ বচ্চনের । এক্স হ্যান্ডেলে অমিতাভ লেখেন, 'আজ খুবই দুঃখের দিন' । জুড়ে দেন কান্নার ইমোজিও । কমল হাসান লিখলেন, "জাকির ভাই! বড্ড তাড়াতাড়ি চলে গেলেন । তবুও আমাদের জন্য যা রেখে গেলেন, তার জন্য চিরকৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ।"
মায়েস্ত্রোর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ ফারহান আখতারের । তিনি লেখেন, "আমাদের সময়ের অন্যতম সেরা শিল্পী আর নেই। আপনি আপনার সঙ্গীতের মাধ্যমে যে আনন্দ ছড়িয়ে দিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ জাকির ভাই।"
অক্ষয় কুমার লেখেন, "খুব কষ্ট হচ্ছে । উনি প্রকৃত অর্থেই আমাদের দেশের সঙ্গীতজগতের মহীরুহ । ওম শান্তি ।" রিতেশ দেশমুখের কথায়, সঙ্গীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল । তাঁর সঙ্গীত মূল্যবান উপহার । যা আগামী প্রজন্মকেও অনুপ্রাণিত করবে । জাকিরের সঙ্গে ছবি শেয়ার করে শোকপ্রকাশ করেছেন করিনা কাপুর ।
এ আর রহমান লেখেন, "জাকির ভাই একজন অনুপ্রেরণা । অসামান্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী। যিনি তবলাকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। ওঁর চলে যাওয়া আমাদের সকলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। ওঁর সঙ্গে আর কাজ না করতে পারার আক্ষেপটা রয়েই গেল।
উস্তাদের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ বাংলার তারকাদেরও । ইমন চক্রবর্তী জাকিরের একটি সাদা-কালো ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, "সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ..."। মীর আফসর আলি লেখেন, 'তুমি আসবে বলেই জাকির হোসেন ভুল করে ফেলে তালে.. গোটা পৃথিবীর একটা তাল হারিয়ে ফেলল।' শোকপ্রকাশ স্বস্তিকা দত্তেরও ।
জাকিরের মৃত্যু ছুঁয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক জগৎকেও । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মদন মিত্র, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীরাও শোকপ্রকাশ করেছেন ।
১৯৫১ সালে মুম্বইয়ে জন্ম জাকিরের । জানেন কি, জন্মানোর দ্বিতীয় দিনে যখন জাকিরকে তার বাবা উস্তাদ আল্লা রাখার কোলে দেওয়া হয়, তখন তিনি জাকিরের কানে তবলার তাল শুনিয়েছিলেন । সেই শুরু তাঁর সঙ্গে তবলার পরিচয়, যা আমৃত্যু রয়ে গেল । ভারত সরকারের পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন জাকির । ২০০৪ সালে তাঁর হাত ধরেই ভারতে এসেছিল প্রথম গ্র্যামি পুরস্কার। ২০২৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল দিস মোমেন্ট। কখন পন্ডিত রবিশঙ্কর, কখনও উদাস্ত আমজাদ আলি, আবার জর্জ হ্যারিসনের মতো কিংবদন্তিদের সঙ্গত করতেন জাকির । তিনি শুধু একজন সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন না, অভিনেতা শব্দটাও জুড়ে রয়েছে তাঁর নামের পাশে ।
জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন জাকির। হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকো হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন । প্রথমে তাঁর মৃত্যুর ভুয়ো খবর ছড়ায় । কিন্তু, উস্তাদের পরিবারের তরফে জানানো হয়, "তিনি আশঙ্কাজনক। তবে বেঁচে আছেন । সকলে প্রার্থনা করুন ।" তবে, শেষরক্ষা হয়নি । পরিবারের তরফে উস্তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে ।