দীর্ঘ লড়াইয়ের শেষ। দু'সপ্তাহের বেশি টানা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আজ চির ঘুমে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। মাত্র ২৪ বছরে নিভল জলজ্যান্ত এক প্রাণ। তবে ঐন্দ্রিলার লড়াই শুধু শেষ হয়েছে, হার হয়নি। বাংলার অগণিত অনুরাগীর মনে ঐন্দ্রিলা জায়গা করে নিয়েছেন পাকাপাকি। এত অল্প সময়ে দর্শকদের মনে, অনুরাগীদের মনে এমন দাগ কাটতে পারেন ক'জন, ঐন্দ্রিলা পেরেছেন। ঐন্দ্রিলার আরোগ্য কামনায় বিনিদ্র রাত কাটিয়েছে এই বাংলা, প্রার্থনা করেছেন সাধারণ মানুষ থেকে তারকা, সকলেই।
গত ১ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অভিনেত্রী। পরের ১৫ দিন নানা ওঠা পড়া, কখনও ভেন্টিলেশনে, কখনও ভেন্টিলেশনের বাইরে,আচ্ছন্ন অবস্থায় থেকেছেন অভিনেত্রী। তবে ঐন্দ্রিলার শারীরিক অবস্থা সংকটজনকই ছিল। দু'দিন আগে বন্ধু সব্যসাচী, সকলকে মিরাকলের জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ করেছিলেন। মিরাকল হল না। লড়াই-এ চ্ছেদ পড়লই। বড় তাড়াতাড়ি থেমে গেল ঐন্দ্রিলার পথ চলা।
১৯৯৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঐন্দ্রিলার জন্ম, বাড়ির সকলেই চিকিৎসা সংক্রান্ত পেশার সঙ্গে যুক্ত। বাবা-দিদি চিকিৎসক। মা নার্স। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তে মাঝপথে সিদ্ধান্ত বদলে অভিনয়ে আসা সকলের আদরের 'মিষ্টি'র।
ঐন্দ্রিলার লড়াইয়ের গল্পটা অসম্পূর্ণ থাকে একটা মানুষের কথা না বললে। সব্যসাচী চৌধুরী। অভিনেত্রীর বন্ধু, প্রেমিক...আরও অনেক কিছু। অভিনেত্রীর লড়াই যতটা তাঁর, ততটাই সব্যসাচীর। জিতে যাওয়াটুকুতেও দুজনের ভাগ সমান সমান। দ্বিতীয়বার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সময় থেকে হাসপাতালে ঐন্দ্রিলার সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন সব্যসাচী। এবারেও তাই। অভিনেত্রীর সংজ্ঞা ছিল না, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর চোখ খুলে একবারও তাকাননি বন্ধুর দিকে, কিন্তু সব্যসাচী কিন্তু অবিরাম কথা বলে গেছেন ঐন্দ্রিলার সঙ্গে, থেকেছেন হাত ছুঁয়ে, শেষ পর্যন্ত।
সদ্য প্রয়াত ঐন্দ্রিলার লড়াইটা তো কেবল বিগত ১৫ দিনের নয়। জীবনে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হওয়া আজ থেকে ৯ বছর আগে। মারণ রোগ ক্যানসার বাসা বাঁধল ফুটফুটে একটা মেয়ের শরীরে, তখন একাদশ শ্রেণি। হাসি মুখে অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে জিতে গেলেন। সামনে তখন নতুন একটা জীবন। অভিনয় জগতে পা রাখা। সব চলছিল ছবির মতো। তারপর ২০২১। আরও একবার গাঢ় হল অন্ধকার। আবারও ক্যানসার। আবারও যন্ত্রণা ভোগ, এবং নিভতে নিভতে আবারও ফিনিক্স পাখির মতোই জ্বলে ওঠা ২৩ বছরের এক প্রাণের।
বহরমপুরে বড় হয়ে ওঠা মেয়েটা ততদিনে জেনে গেছেন জীবন সবসময় গোলাপের গুচ্ছ নিয়ে অপেক্ষা করে না, রাস্তা সবসময় মসৃণ থাকেনা, শুধু পথ করে নিতে হয়, নিজের মতো। পথ করেই নিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা, ফিরে এসেছিলেন অভিনয়ে, নাচে। তীব্র যন্ত্রণার গল্প বলতেন হাসি মুখে। সে পথে, আবারও বাঁধা, আবারও অন্ধকার এল। একই ভাবে ফেরা হয়তো হল না। তবে লড়াইয়ের আরেক নাম হয়ে থেকে গেলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। সেই হাসি মুখ, সেই দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে যাওয়া, সেই নিভতে নিভতে বারবার জ্বলে ওঠা, সব অসম্ভবকে সম্ভব করে দেওয়া, এই সব ঐন্দ্রিলাই পারেন।