ঐন্দ্রিলা নেই। এটুকুতে ২৪ বছরের মেয়েটার গল্পটা শেষ হয়না, শুরু হয় কেবল। কারণ, আসল সত্যিটা হল ঐন্দ্রিলা আছে, থাকবে, লড়াইয়ের আরেক নাম হয়ে। শরীরে কেমোর যন্ত্রণা, অথচ ঠোঁটে সেই ভুবন ভোলানো হাসি। ওই হাসির রেশটুকুই থেকে যাবে বাংলার মনে, বাঙালির মনে।
লড়াই-এর শুরু সাত বছর আগে, মাত্র ১৭ বছর বয়সে। জন্মদিনে ঐন্দ্রিলা জানতে পারলেন অস্থিমজ্জার ক্যানসারে আক্রান্ত তিনি। দেড় বছরের লড়াই শেষে জয় তো হল। ঠিক ফিরে এলেন। তারপর অভিনয় জগতে পা রাখা। ২০২১ এর ফেব্রুয়ারিতে ফের ফিরল বিভীষিকাময় সেই সব দিন। আবার মারণ রোগ বাসা বাঁধল। আরও দীর্ঘ লড়াই। এ লড়াইয়ে ঐন্দ্রিলার পাশে পরিবার আর বন্ধু সব্যসাচী ছিলেন সবসময়। কিন্তু পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখত ঐন্দ্রিলার হাসিমুখটাই। কেমোয় চুল উঠেছে, মাথায় কখনও ফেট্টি বেঁধেছেন, মনোবল অটুট ছিল মেয়েটার।
বিয়ের কনের সাজে ফটো শুট করেছেন, সবাই বলেছিল পরচুলা পরতে, পরেননি ঐন্দ্রিলা। চুল উঠে যাওয়া চেহারা সকলের সামনে দেখানোর সাহস দেখিয়েছেন। তখন বয়স মাত্র ২৩। ওই বয়সে এত ইতিবাচক! এত পরিণত মনন! অবাক হয়ে দেখল বাংলা।
দ্বিতীয়বার ক্যানসারের চিকিৎসাকালে খুব কাছের মানুষকে হারালেন ওই একই রোগে। সে কথা পোস্ট করলেন, তবু মনে মনে দমলেন না। রং হারানোর দিনগুলোতেও রং খেলতেন, নিজের আর আশেপাশের মানুষদের জীবন রঙিন রাখতেন সকলের আদরের মিষ্টি।
চিকিৎসার মাঝেই নিজের সবচেয়ে আনন্দের শখ নাচে মুক্তি খুঁজেছিলেন, ছন্দে ফিরছেন, সে কথা জানিয়েছিলেন সকলকে। সামান্য ভাল লাগা তৈরি হলেও তার ভাগ দিতেন সকলকে। ঠিক এ ভাবেই, এই নিভতে নিভতে জ্বলে ওঠা ঐন্দ্রিলাকেই মনে থেকে যাবে, আজীবন। জীবনটাকে নিংড়ে নিয়ে বাঁচতে পারা কাকে, বলে শিখিয়ে দিয়ে গেলেন ঐন্দ্রিলা।