সত্যজিৎ রায় বাঙালির আইকন, তাঁকে নিয়ে ছবি বানালে তা সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং সমালোচনার পথ খুলে দেয়। অপরাজিত ছবিটি বানিয়ে পরিচালক অনীক দত্ত সেই ঝুঁকি নিলেন, এবং পাশ করলেন উইথ ডিস্টিঙ্কশন। যে ছবি বাংলা সিনেমাকে আন্তর্জাতিক সিনেমার ভাষা দিল, সেই ছবির হয়ে ওঠা নিয়ে গল্প। নেপথ্যের গল্প পড়া থাকলেও, জানা থাকলেও নতুন করে পর্দায় সেই মুহূর্তগুলোয় ফিরতে একঘেয়ে লাগেনি অনীক দত্তের ছবিতে।
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ছবি মুক্তির অনেক আগে থেকেই ছবির চরিত্র এবং তাঁদের লুকের সঙ্গে দর্শকরা পরিচিত ছিলেন। তা সত্ত্বেও পর্দায় এক একটা দৃশ্যে জিতু কমলকে দেখে চমকে যেতেই হয়েছে, বারবার। সেই কৃতিত্ব যতটা মেকআপের ততোটাই অভিনেতারও প্রাপ্য। কারণ শুধু চেহারায় সত্যজিৎ হলে বাঙালি ছেড়ে কথা বলত না। অভিনেতার শরীরি ভাষা এ ছবিতে কথা বলেছে। ছবির বক্সঅফিস সাফল্যের দিকটি যেমনই হোক, জিতু কমলের অভিনয় জীবনের একটি মাইলফলক হিসেবে থেকে যাবে এ ছবি। বিজয়া রায়ের চরিত্রে সায়নীও যথাযথ।
আরও পড়ুন, এবারও নন্দনে ব্রাত্য অনীক দত্তের সিনেমা, ভুল পদক্ষেপ নন্দনের, মন্তব্য সায়নীর
পথের পাঁচালির আইকনিক দৃশ্যগুলোর পুনর্নির্মাণ প্রায় নিখুঁত। আর সে সব দৃশ্যের জন্য, মুহূর্তের জন্য এক আনকোরা পরিচালকের এবং ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকা সকল কলাকুশলীর অন্তহীন অপেক্ষা, ঘুমহীন রাত, পরিশ্রমকে বড় জীবন্ত লেগেছে 'অপরাজিত' তে।
এ ছবির আরেক সম্পদ, ছবির সঙ্গীত, পণ্ডিত রবিশঙ্করের সুরস্মৃতি ফিরিয়ে আনার কাজটা দেবজ্যোতি মিশ্র দক্ষতার সঙ্গে করেছেন। ছবির আলো এবং অন্ধকারের দুইয়ের পরিমিত ব্যবহার প্রশংসার দাবি রাখে।
আরও পড়ুন, Editorji exclusive: বাঙালির আইকনের চরিত্রে জিতু কমল, 'অপরাজিত' মুক্তির ঠিক আগে স্নায়ুর চাপ বাড়ছে?
মাস্টারপিসের জন্ম একদিনে হয়না, নানা ঘাত প্রতিঘাত বাধা, লড়াই পেরিয়ে একটা পথের পাঁচালি হয়েছিল। একবছর ছবির শুটিং বন্ধ থাকার পর শেষে সরকারি সাহায্যের আশ্বাস, মাঝের পথটা খুব মসৃণ ছিল না, সেই যন্ত্রণাটুকু আরেকটু ধরা যেত ছবিতে। সিনেমার শেষটা মার্টিন স্করসিসের ফোনটা দিয়ে না করলেই হতো হয়তো। ছবিটা যেহেতু মূলত পরিচালকের প্রথম ছবি নিয়েই শুধু ওই দৃশ্যের জন্যই ১০ টা বছর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দরকার আদৌ ছিল কি? ওটুকু ছাড়াও তো বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে সত্যজিৎ কে উদযাপন করা যায় দিব্যি।