গত প্রায় তিন দশক ধরে বিশ্বের আপামর সঙ্গীতপ্রেমীর কাছে ভারতীয় সঙ্গীতের সবথেকে জনপ্রিয় ও সর্বজনগ্রাহ্য মুখ তিনি। প্রেমে, বিচ্ছেদে, বিরহে , বন্ধুত্বে, রাগে, ক্লেশে তাঁর গান সবসময়ের সঙ্গী হয়ে থেকেছে শ্রোতাদের। পেয়েছেন অস্কারও। তাঁকে কেউ বলেন 'দক্ষিণের মোৎজার্ট'। কারও কথায় তিনি হলেন 'সুরের ঝড়'! এই লিভিং লেজেন্ডের আলাদা করে পরিচয় দেওয়া ধৃষ্টতা, তিনি এ.আর রহমান। তাঁর তৈরি একেকটা গান কানের আরাম, মনের শান্তি। কিন্তু এবার অন্য কারণে হঠাৎ শিরোনামে জাতীয় পুরস্কারজয়ী সঙ্গীত শিল্পী। দীর্ঘ ২৯ বছরের সম্পর্কে বিচ্ছেদ টানছেন রহমান এবং তাঁর স্ত্রী সায়রা বানু। রহমান ভেবেছিলেন ৩০টা বসন্ত একসঙ্গে কাটাবেন। কিন্তু তার আগেই থমকে গেল সব। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টের মাধ্যমে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন রহমান।
আজ থেকে ২৯ বছর আগে দেখা শোনা করেই নাকি চার হাত এক হয়েছিল সেরা এবং রহমানের। সালটা ১৯৯৫। খাতিজা, রহমান ও আমিন, তিন সন্তান নিয়ে ভরা সংসার ছিল তাঁদের। তাঁদের মেয়ে খাতিজার বিয়েও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ কেন বিচ্ছেদের পথই বেছে নিলেন তাঁরা? সেই বিষয়ে যদিও কোনও আভাস দেননি সঙ্গীতশিল্পী। গান আর প্রেম সমান্তরাল ছিল রহমানের জীবনে। এমনকি মধুচন্দ্রমিয়া গিয়েও স্ত্রীকে সঙ্গ না দিয়ে নাকি সারারাত নাকি বীণা বাজিয়েছিলেন তিনি। তারপরেও ২৯টা বছর কেটেছে। কিন্তু হঠাৎই কাটল তাল।
বুধবার হঠাৎ রাত ১২টার পর, এই বিচ্ছেদ নিয়ে বিবৃতি দেন সঙ্গীতশিল্পী এআর রহমান। টুইটারে তিনি লিখছেন, ‘আমরা গ্র্যান্ড থার্টিতে পৌঁছনোর আশা করেছিলাম, কিন্তু সবকিছু, মনে হয়, একটি অদেখা শেষ বহন করে। এমনকি ভগ্ন হৃদয়ের ভারে ঈশ্বরের সিংহাসনও কেঁপে উঠতে পারে। তবুও, এই ছিন্নভিন্নতায়, আমরা অর্থ খুঁজি, তবে টুকরোগুলি আবার তাঁদের জায়গা খুঁজে পাবে না।’ বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ীদের কাছে তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে সম্মান করার আহ্ববান জানিয়ে কিছুটা প্রাইভেসি চেয়ে নিয়েছেন রহমান।
শোনা যাচ্ছে, অনেক মানসিক চাপানউতরের পর এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। প্রেম অগাধ থাকলেও, দুজনের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। তাঁদের সম্পর্ক স্লো ফেডেড হতে হতে এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, যেখান থেকে নাকি আর একে অপরের হাত ধরা সম্ভব নয়। তাই বিচ্ছদের পথই বাছলেন সায়রা এবং রহমান।
১৯৬৭ সালে ৬ জানুয়ারি তৎকালীন মাদ্রাজ স্টেটে জন্ম হয়েছিল তাঁর। জন্মের সময় নাম ছিল এ এস দিলীপ কুমার। বাবা আর কে শেখর মুধালিয়ার ছিলেন মালায়ালম ও তামিল ছবির সঙ্গীত পরিচালক। তাঁর মায়ের নাম ছিল কস্তুরী দেবী। শিশু শিল্পী হিসেবে একসময় দূরদর্শনের ‘ওয়ান্ডার বেলুন’ শোতে দেখা গিয়েছিল রহমানকে। এরপর নিজের নাম বদলিয়ে দিলীপ থেকে আজকের এআর রহমান হন তিনি। ধীরে ধীরে সুফির প্রভাব পড়ে তাঁদের পরিবারে, ইসলাম ধর্মের উপর আকৃষ্ট হয়ে পড়েন তাঁরা। জ্যোতিষীর সঙ্গে কথা বলে তারপর সঙ্গিতশিল্পীর মা ‘আল্লাহ রাখা’ নামটি রাখেন। আর সঙ্গে 'রহমান'। আল্লাহ রাখা শব্দের অর্থ, ঈশ্বর যাকে রক্ষা করেন। এরপর থেকে এই নামেই পরিচিত তিনি গোটা বিশ্বে।
এর পরেই, মণিরত্নমের ছবি ‘রোজা’-র সুর দেন এ আর রহমান। তারপর থেকে কার্যত আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। তৈরি হল কালজয়ী কিছু সঙ্গীত। যা মানুষের মনে জায়গা করে নিল চিরতরে। এলো সমস্ত সম্মান ও পুরস্কার। সুফি সংস্কৃতির ভক্ত'র সুরের মূর্চ্ছনায় বুঁদ হয়ে পড়ল আসমুদ্রহিমাচল। কিন্তু অচিরেই তাল কেটে গেল রহমান আর সায়রার সম্পর্কের।