আর জি করের ঘটনায় যখন তোলপাড় বাংলা, বিচারের দাবিতে, নারী নিরাপত্তার দাবিতে চলছে 'রাতদখল'...সেইসময় টলি অন্দরেও উঠছে একটা ঝড় । এক অভিনেত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে পরিচালক অরিন্দম শীলকে । শনিবার রাত থেকে খবরটা যেন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে । আর জি করের ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই গত কয়েকদিন ধরে টলিপাড়ার অভিনেত্রীরা বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মেয়েদের দুরবস্থা নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন । এই নিয়ে ঋতাভরী চক্রবর্তী খোলা চিঠিও লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে । এরই মধ্যে শনিবার অরিন্দমের সাসপেনশনের খবর প্রকাশ্যে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, শতরূপা সান্যাল, রূপাঞ্জনা মৈত্র থেকে বেনি বসুরা । অথচ দিন কয়েক আগে আর জি করের ঘটনার বিচার চেয়ে, মেয়েদের সুরক্ষার দাবিতে মিছিলে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল অরিন্দম শীলকে । অথচ তাঁর বিরুদ্ধেই যৌন হেনস্থার মতো এত বড় অভিযোগ ! সাসপেনশনের পর এই বিষয়ে মুখ খুলেছেন পরিচালক । কী ঘটেছিল শুটিংয়ের দিন ? কেন তাঁর বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ । সেই বিষয়ে একাধিক সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলেছেন পরিচালক-অভিনেতা
অরিন্দম জানিয়েছেন, তখন মে মাস । একটা ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের শুটিং চলছিল । স্ক্রিপ্টে লিপলক থাকলেও, অভিনেতা বা অভিনেত্রী তা করতে স্বচ্ছন্দ বোধ না করায়, সেটা তিনি স্ক্রিপ্ট থেকে সরিয়ে দেন । সিনে তাঁরা কীভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার শটটা দেবেন, সেটাও বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন পরিচালক । অরিন্দমের কথায়, 'প্রত্যেক শিল্পীকেই শট অভিনয় করে দেখিয়ে দিই'। সেইমতো সিনটা বোঝাতে গিয়ে তাঁর মুখটা অভিনেত্রীর গালে ছুঁয়ে যায় । অরিন্দমের দাবি, সবটাই ঘটেছে অনিচ্ছাকৃত । কোনও মহিলাকে তাঁর অসম্মান করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না । সেইসময় ঘটনার সাক্ষ্মী হিসেবে তাঁর কস্টিউম সহকারী, ক্যামেরাপার্সনও ছিলেন । কিন্তু, তারপরেও তাঁর বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ আনা হল ।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি, ওই অভিনেত্রী যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলে অরিন্দমের বিরুদ্ধে মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন । অভিযোগের ভিত্তিতে দু'জনকেই ডেকে পাঠায় কমিশন । গোটা বিষয়টা, অর্থাৎ শুটিংয়ের দিন ঠিক কী ঘটেছিল, সেটা তিনি স্পষ্টভাবে জানান কমিশনকে । বারবার তিনি দাবি করেছেন, যা ঘটেছে তা অনিচ্ছাকৃত । এতে যদি অভিনেত্রীর খারাপ লাগে, অসম্মানিতবোধ করেন, তার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেন অরিন্দম । পরিচালক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "কমিশনের তরফে লিখিত দিতে বলা হয়। আমি রাজি হই। তবে কমিশনের তরফে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় আমায় বলেন, অনিচ্ছাকৃত এই শব্দটি লেখা যাবে না। কারণ মেয়েটির তো খারাপ লেগেছে। আমি তাতেও রাজি হই। "
কমিশনের কাছে ক্ষমা চাওয়ার সেই চিঠিটা প্রকাশ্যে আসতেই অরিন্দমকে সাসপেন্ড করে ডিরেক্টরস গিল্ড । অরিন্দমের আক্ষেপ, গিল্ডের তরফে তাঁর সঙ্গে কোনও কথা বলা হয়নি । হঠাৎ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে । কিছুদিন আগেও টলিউডের একটা ইস্যুতে সকলের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলেন । অথচ, সেই গিল্ড তাঁর কাছ থেকে একবার জানতে চাইল না যে কী হয়েছে । তাঁর প্রশ্ন আর কতজনকে বলতে হবে যে তিনি নির্দোষ, যা ঘটেছে অনিচ্ছ্বাকৃত ।
অরিন্দমের সাসপেনশনের খবর প্রকাশ্যে আসতেই স্বস্তিকা লেখেন, "পাপের ঘোড়া উল্টোয়। ভেবেছিলাম বোধহয় নিজের জীবনে দেখে যেতে পারবো না। ভগবান তুমি এইটুকু কথা রেখেছো। এটাই অনেক।"
শতরূপা সান্যাল লেখেন, "বাংলা সিনেমা ও থিয়েটারের নোংরা সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। সাবাস , মেয়েরা! এখানে থেমোনা! পুরুষ ও পুরুষতন্ত্রের প্রভুত্বের দিন শেষ হোক! মার ঝাড়ু মার, ঝাড়ু মেরে ঝেঁটিয়ে বিদায় কর, যত আছে নোংরা, সবই খ্যাংড়া মেরে ঘর থেকে দূর কর!!"
অরিন্দমের সাসপেনশনের খবর পেতেই রীতিমতো সেলিব্রেশন মুডে রয়েছেন শিল্পী বেনি বসু । সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বস্তিকা, সুদীপ্তা, ঊষসী, অপর্ণা সেনদের ট্যাগ করে ক্যাপশনে, রাজ কি আয়াগি বারাত সিনেমার গানের একটা লাইন লিখেছেন । সেইসঙ্গে জানিয়েছেন, রবিবার রাতটা তাঁরা শুধু নাচবেন । এর আগেও বেনি-কে সিনে, থিয়েটার দুনিয়ায় মেয়েদের নিরাপত্তার ইস্যু নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছিল ।