রাহুল দেব বর্মণ (R D Burman) মানে সুরের সাগর । সুর তাঁর রন্ধ্রে রন্ধ্রে । তাঁর অন্যতম সঙ্গী গুলজার (Gulzar) বলতেন, ড্রাইভিং হুইলে টোকা দিতে দিতে সুর করে ফেলতে পারতেন পঞ্চম । সেই সমস্ত সুরের ভাবনা, প্রয়োগ বরাবরই ব্যতিক্রম যার সাক্ষী টলিউড, বলিউড থেকে আপামর শ্রোতা। ভারতীয় সঙ্গীত জগতে তাঁর অবদান ভোলার নয় । আজ রাহুল দেব বর্মণের জন্মবার্ষিকী (R D Burman Birth Anniversary)।
ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক,সিনেমা জগতে সুরের ঝড় তুলেছিলেন রাহুল দেব বর্মণ । আশা, লতা,রফি, কিশোরের সঙ্গে জুটি বেঁধে 'কুছ তো লোগ কাহেঙ্গে','ক্যায়া হুয়া তেরা ওয়াদা', 'ব়্যায়না বিত জায়ে', 'কুছ না কহো'-র মতো অসাধারণ গান উপহার দিয়েছেন এই ইন্ডাস্ট্রিকে। পাশাপাশি বাংলা ছবির জগতকেও সমৃদ্ধ করেছেন অজস্র অসাধারণ সুর দিয়ে। তাঁর ‘মনে পড়ে রুবি রায়’ আজও শ্রোতাদের মুখে মুখে। যুগ বদলেছে, শ্রোতা বদলেছে, কিন্তু, তাঁর গানের জনপ্রিয়তা একইরকম রয়ে গিয়েছে । শুধু কি সুর, কয়েকটি ছবিতে গানও গেয়েছেন তিনি । ভাল মাউথ অরগানও বাজাতে পারতেন ।
আরও পড়ুন, New Cinema Bismillah : অগাস্টেই মুক্তি পাচ্ছে ঋদ্ধি-শুভশ্রীর বিসমিল্লাহ, মুক্তি পেল টিজার পোস্টার
রাহুল দেব বর্মন প্রথম যে গানটায় সুর করেছিলেন, সেটি হল, 'অ্যায় মেরি টোপি পলটকে আ'। এই গানটি পরে তাঁর বাবা শচীন দেব বর্মণ ব্যবহার করেছিলেন ১৯৫৬ সালের 'মিস্টার ফান্টুস ফিল্মে'। মজার কথা, যখন এই গানের সুর করেছিলেন রাহুল, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর । ১৯৬১ সালে এককভাবে প্রথম 'ছোটে নবাব' সিনেমায় সুর দেন রাহুল । যদিও, এই সিনেমায় শচীন কর্তার সুর দেওয়া কথা ছিল । কিন্তু, সময় দিতে না পারায় রাহুল দেব বর্মণ সুর দেন এই সিনেমায় ।
রাহুল দেব বর্মণের প্রথম স্ত্রী ছিলেন রীতা । দুজনের দেখা দার্জিলিঙে । বেশ কিছুদিন সংসার করার পর ১৯৭১-এ বিবাহ বিচ্ছেদ । শোনা যায়, ওই বিচ্ছেদের সময়ই হোটেলের এক ঘরে বসে রাহুল দেব বর্মণ সুর করেছিলেন সেই বিখ্যাত গান 'মুসাফির হু ইয়ারো'! এরপর আশার সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করেন রাহুল ।
রাহুল দেব বর্মণ মোট ৩৩১ টি ছবিতে গানের সুর দিয়েছেন । এরমধ্যে ২৯২টিই হিন্দি ছবি। ৩১টি বাংলা ছবিতে সুর দিয়েছিলেন । এছাড়া তিনটি তেলুগু ছবি, দুটো তামিল এবং দুটো ওড়িয়া ছবিতে তিনি সুর দেন। এছাড়া একটি মারাঠি ছবিতে সুরকার হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। জীবনে শেষ সুর দেন নাইন্টিন ফরটি সেভেন এ লাভ স্টোরি ছবিতে। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সেই ছবির গানে বিমোহিত হয়েছিল গোটা ভারত। কিন্তু রাহুল দেব বর্মণ সেই সাফল্য দেখে যেতে পারেননি। ছবির গান মুক্তির আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। সেই ছবিতে সুর দেওয়ার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে মরণোত্তর ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন। তাঁর জন্মবার্ষিকীতে editorji বাংলার তরফ থেকে রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ।