সঙ্গীত জগতের ধ্রুবতারা। ভারতীয় চলচ্চিত্র সঙ্গীতের কিংবদন্তি। ৪ অগাস্ট কিশোর কুমারের ৯৫তম জন্মদিবস। ভারতীয় সঙ্গীত জগতে হাজার হাজার নক্ষত্রের উত্থান হয়েছে। কিন্তু কিশোরদার মতো আরও একজন! না এখনও পায়নি এই দেশ। একথা মেনে নেন এখনকার কিংবদন্তীরাও। কণ্ঠে যেন তাঁর বাগদেবী বাস করেন। সেই কণ্ঠ থেকে নিঃসৃত প্রতিটি সুর, তাল, ছন্দ যেন সরাসরি দেশবাসীর মনে গিয়ে লাগে।
অবিভক্ত ভারতের মধ্যপ্রদেশে বাঙালি গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারে জন্ম। বাবা-মা নাম রেখেছিলেন আভাস। ডাকনাম ছিল কিশোর। দাদা অশোক কুমারের সঙ্গে 'বম্বে টকিজ' ছবিতে গান গেয়েছিলেন। সেই সময় নিজের কিশোর নামটি ব্যবহার করেছিলেন। তখন থেকেই আভাস হয়ে যান কিশোর কুমার। বাংলা, হিন্দি, ভোজপুরি, অসমিয়া-সহ একাধিক ভাষায় তাঁর গানের সংখ্যা ২০০০-এর বেশি।
শুধু গায়কি প্রতিভা নয়, বহুমুখী প্রতিভা ছিল কিশোর কুমারের। সলিল চৌধুরী, শচীন দেব বর্মণ, রাহুল দেব বর্মণ, লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল। বাংলায় পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারদের সঙ্গে তাঁর অজস্র কাজ অমর হয়ে গিয়েছে। শক্তি সামন্ত, হৃষিকেষ মুখোপাধ্যায় ফনী মজুমদারের মতো পরিচালক, প্রযোজকরাও চাইতেন, ছবিতে কিশোর কুমারের একটি গান হোক। সলিল চৌধুরীর সুরে একটি গানে কিশোর কুমার একাই 'ডুয়েট' গেয়েছিলেন। অভিনয় প্রতিভাতেও দুরন্ত ছিলেন কিশোর। 'শিকারী' ছবি তাঁর প্রথম কাজ। মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন দাদা অশোক কুমার। দাদার কথা শুনে ১৯৪৬-১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ২২টি ছবি করেছিলেন কিশোর। কিন্তু তার মধ্যে অধিকাংশই বক্সঅফিসে ফ্লপ করে। এরপরই গানকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি।
বলিউডে তাঁর প্লে-ব্যাকের সিংহভাগ জুড়ে রাজেশ খান্না। তবে দেবানন্দ, অমিতাভ বচ্চন, জিতেন্দ্র, মিঠুন চক্রবর্তী, অনিল কাপুরদের লিপেও বারবার উঠে এসেছেন কিশোর কুমার। আর প্রত্যেকবারই যা আলোড়ন ফেলেছেন। প্রত্যেকটি গান তৈরি করেছে নতুন নতুন ইতিহাস। বাংলায় উত্তম কুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়দের লিপেও শোনা গিয়েছে কিশোর কুমারকে।
প্লে-ব্যাকের ডুয়েটেও ইতিহাস তৈরি করেছেন কিশোর কুমার। আশা ভোঁসলের সঙ্গে তাঁর ডুয়েট সবথেকে বেশি। এছাড়া লতা মঙ্গেশকর, মহম্মদ রফি, মুকেশ, মান্না দে, মহেন্দ্র কাপুর, গীতা দত্ত, সুলক্ষ্যণা পণ্ডিতদের সঙ্গেও ডুয়েট আছে কিশোর কুমারের। সমসাময়িক গায়কদের মধ্যে কিশোরের সবথেকে কাছের ও বন্ধু ছিলেন মহম্মদ রফি। কেরিয়ারে ৮ বার ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন কিশোর কুমার। অমর শিল্পীর জন্মদিনে এডিটরজি বাংলার পক্ষ থেকে তাঁকে শ্রদ্ধা ও প্রণাম।