বলিউডের 'ধক ধক গার্ল' তিনি । মোহিনী, নিশা থেকে পূজা, চন্দ্রমুখী...নানা নামে বলিউডে একসময় ঝড় তুলেছেন । তাঁর মোহময়ী রূপ, জাদুভরা হাসি, চোখের গভীর চাহনি,...পুরুষের হৃদয়ে ঝড় তুলেছে । তাঁর ঠুমকায় নেচেছে বলিউড । সময় পেরিয়েছে, অনেকগুলো বসন্ত পেরিয়ে আজ ৫৭-তে মাধুরী । তবে, তাঁর ম্যাজিক কিন্তু এতটুকু ফিকে হয়নি । অথচ দেখে বয়স বোঝার কোনও উপায় নেই । ফেটে পড়ছে মাধুরীর জেল্লা । তাঁর রূপ, সৌন্দর্য্য টেক্কা দিতে পারে আজকের আলিয়া ভাট, কাটরিনা কইফ, কৃতি স্যাননদেরও । আজও বহু পুরুষের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারেন মাধুরী । বলিউডে প্রায় সাড়ে তিন দশকের বেশি অভিনয় করে মানুষের মণিকোঠায় মাধুরী ।
অনেকেই হয়তো জানেন না, সেলুলয়েডের এই চকচকে দুনিয়ায় আসার পরিকল্পনা বা ইচ্ছে কোনওদিনই ছিল না মাধুরীর । তিনি আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই পড়াশোনায় কেরিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন । মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন মাধুরী । আর সেটা নিয়েই কেরিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন বলি সুন্দরী । কিন্তু, মাধুরী নামটা যে গ্ল্যামার দুনিয়া, পেজ থ্রি-র দুনিয়ার জন্যই লেখা ছিল ।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে বলিউডে ডেবিউ । ১৯৮৪ 'অবোধ' ছবিতে প্রথম অভিনয় । তাপস পাল (Tapas Paul) ছিল তাঁর প্রথম নায়ক । ১৯৮৮ সালে 'তেজাব' ছবির আইটেম সং 'এক দো তিন'-এ তাঁর রূপের ঝলকে সবার নজরে আসেন মাধুরী । এরপর তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । একে একে 'সাজন', 'বেটা', 'আন্দাজ আপনা আপনা','অঞ্জাম', 'হাম আপকে হ্যায় কন','দিল তো পাগল হ্যায়', 'দেবদাস', প্রত্যেক ছবিতেই নজর কেড়েছেন । সেই সময়ের নায়িকাদের মধ্যে সবথেকে বেশি পারিশ্রমিক পেতেন মাধুরীই । 'হম আপকে হ্যায় কউন' ছবিতে অভিনয়ের জন্য নাকি সলমনের থেকেও বেশি পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন তিনি ।
তবে জানেন কি, কেরিয়ারের প্রথম দিকে পরপর প্রায় ৭টি ছবি ফ্লপ হয়েছিল মাধুরীর । সেইসময় একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন বলি অভিনেত্রী । এক সাক্ষাৎকারে মাধুরী জানিয়েছিলেন, প্রতিদিন তিনি কান্না-কাটি করতেন । তবে, কঠিন সময়ে তিনি পাশে পেয়েছেন মা ও বোনকে । মাধুরী কথায়,'বারবার মা বলতেন, চিন্তা করো না, একদিন তুমি অবশ্যই সফল হবে। ' মাধুরীর সফল কেরিয়ারে তাঁর মায়ের ভূমিকাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ । তারপর তেজাব-এর হাত ধরেই সাফল্য আসে মাধুরীর কেরিয়ারে ।
অভিনয় দক্ষতা, নাচের তালে বলিউড যখন কাঁপাচ্ছেন মাধুরী, সেইসময় তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়েছেন একাধিক বলি অভিনেতা । বি-টাউনে কান পাতলেই শোনা যেত, মাধুরীর সঙ্গে তাঁর সহ-অভিনেতার সম্পর্কের গুঞ্জন । যাঁর সঙ্গে মাধুরীর নাম সবচেয়ে বেশি খবরে ছিল, তিনি সঞ্জয় দত্ত। ‘খলনায়ক’ থেকে ‘সাজন’ একাধিক ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছেন তাঁরা । তাঁদের অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি ঝড় তুলেছিল । বাস্তবেও একে অপরের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন মাধুরী-সঞ্জয় ।
সঞ্জয়ের প্রথম স্ত্রী রিচা শর্মা তখন অসুস্থ । সেইসময়ই মাধুরীর কাছাকাছি এসেছিলেন সঞ্জয় । গুঞ্জন ছিল, যেকোনো সময় মাধুরীকে বিয়ে করতে পারেন সঞ্জয়। সেকারণে, খলনায়ক-এ অভিনয়ের সময় মাধুরীকে নির্মাতারা জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিয়ে করা যাবে না, অন্তঃসত্ত্বাও হওয়া যাবে না । এমনকী, এমনই শর্ত দিয়ে চুক্তিপত্রও সই করিয়েছিলেন নির্মাতারা ।
এরপর ১৯৯৩ সালে অস্ত্র আইনে গ্রেফতার হন সঞ্জয় । তারপর আর সঞ্জয়ের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখেননি মাধুরী । অভিনেত্রীর এমন ব্যবহারে সঞ্জয় দত্ত আঘাত পেয়েছিলেন বলেও শোনা গিয়েছিল । যদিও, প্রেমের কথা কোনওদিনই স্বীকার করেননি সঞ্জয় বা মাধুরী কেউই ।
সঞ্জয়ের পর মাধুরীর সঙ্গে নাম জড়ায় অজয় জাদেজা, অনিল কাপুরের সঙ্গে । বলিপাড়ায় গুঞ্জন, জ্যাকি শ্রফ মন দিয়েছিলেন মাধুরীকে । অভিনেতা নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর জীবনে সব কিছুতেই প্রথম পছন্দ ছিল মাধুরী । অভিনেত্রীর বিয়ের খবর শুনে তাঁর হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন তিনি ।
খ্যাতি ও সাফল্যের শীর্ষে থাকা সেই মাধুরীই বিয়ের পর বলিউড থেকে নিজেকে দীর্ঘদিন দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন । এক সাক্ষাৎকারে মাধুরী জানিয়েছিলেন ভাইয়ের মাধ্যমে এক পার্টিতে পরিচয় হয় দুজনের। তারপরই একে-অপরের প্রেমে পড়েন। ১৯৯৯ সালে ডা.শ্রীরাম নেনে-র সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন বলি অভিনেত্রী । তারপর পাড়ি দেন সুদূর আমেরিকায় । ২০০৩ আর ২০০৫ সালে জন্ম হয় দুই ছেলের । ২০১১ সাল নাগাদ দু'জনে সিদ্ধান্ত নেন ভারতে ফেরার। নেনেই নাকি চেয়েছিলেন তাঁর দুই সন্তান ভারতীয় সংস্কৃতিতেই বেড়ে উঠুক।
ভারতে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে বলি কেরিয়ারে শুরু হয় মাধুরীর সেকেন্ড ইনিংস । 'আজা নাচ লে' সিনেমা দিয়ে বলিউডে কামব্যাক । আবারও ফিরে এল মাধুরী ম্যাজিক । আবারও তাঁকে পর্দায় দেখে ঝড় উঠল বহু পুরুষের হৃদয়ে । বড়পর্দা থেকে তিনি পাড়ি দিলেন ওটিটি-তেও । টিভির বিভিন্ন রিয়্যালিটি শো-এর বিচারক হিসেবেও দেখা যায় তাঁকে । গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে এভাবেই আরও গ্ল্যামার বাড়ুক, মাধুরী দীক্ষিতকে জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা ।