একবিংশ শতকেও ক্যানসার শব্দের পাশ থেকে ‘মারণ রোগ’ শব্দটি পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এই রোগের কথা শুনলেই যেন হাড় হিম হয়ে আসে। ক্যানসার (Cancer) মানেই সাক্ষাৎ মৃত্যু যেন অপেক্ষা করছে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য বৈজ্ঞানিকদের নিরন্তর চেষ্টাতে আগের থেকে অবস্থার অনেকটা উন্নতি হলেও, এই রোগের সঙ্গে জুড়ে থাকা উদ্বেগ কমেনি কিছুতেই। এখনও পর্যন্ত, মানবদেহে দুশোটির বেশি ক্যানসারের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। শুধুমাত্র ২০২২ সালে , বিশ্বব্যাপী ক্যানসার-আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ কোটির কাছাকাছি। ওই বছর, ক্যানসারে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৯৭ লক্ষ। বিশ্বজুড়ে, হৃদরোগের পরেই মৃত্যুর সবথেকে বৃহত্তম কারণ হল এই কর্কট রোগ।
যদিও সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে উন্নত হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। অসংখ্য কেসে, ক্যানসারের পুরোপুরি নিরাময়ও সম্ভব হয়েছে। এই কঠিন রোগের সঙ্গে লড়াইয়ে দরকার অপরিসীম মনের জোরও। কেমোর মতো থেরাপি নিতেও থাকতে হয় বিপুল সহ্যশক্তি।
আজ এডিটরজি বাংলার পর্দায় কুর্নিশ জানবো, বলিউডের বেশ কিছু তারাদের, যাঁরা ক্যানসারের কাছে হার মানেননি। বরং, ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে ফের নিজেদের কাজে ফিরেছেন। উপহার দিয়েছেন একাধিক মনে রাখার মতো ছবি।
‘হীরামান্ডি’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তাঁর নিজের নামের থেকে তাঁকে ‘মল্লিকাজান’ নামেই ডাকতে পছন্দ করছেন দর্শকেরা। নয়ের দশকের এই অভিনেত্রী বলিউডকে উপহার দিয়েছেন ‘মন’, ‘দিল সে’, ‘বম্বে’র মতো একাধিক সুপারহিট ছবি। এই বলি সুন্দরী ওভারির ক্যানসারের কবলে পড়েন ২০১২ সালে। কেমো নিতে হয়।নিউইয়র্কে অস্ত্রোপচারও হয়। ওমন সুন্দর ঢেউ খেলানো চুল উঠে যেতে শুরু করে। একসময় মনীষার ছবি দেখে আতঁকে উঠেছিলেন সকলে। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ২০১৫ সালে ক্যানসার মুক্ত হন মনীষা কৈরালা। সেই বিভীষিকাময় সময়টাতে মনীষার অনেক কাছের বন্ধুও দূরে চলে গিয়েছিলেন। মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েছিলেন মনীষা, গ্রাস করেছিল একাকিত্ব। তারপর তিনি লড়লেন, জিতলেন এবং স্বমহিমায় ফিরলেন।
বলিউডের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত পরিচালক অনুরাগ বসু। ‘মার্ডার’, ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’, ‘গ্যাংস্টার’, ‘বরফি’ বলিউডে তাঁর অবদানের শেষ নেই। এমন প্রতিভাবান পরিচালকের শরীরেও থাবা বসিয়েছিল ব্লাড ক্যানসার। সালটা ২০০৪, কেরিয়ারের মধ্যগগনে পরিচালক, স্ত্রী ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। অনুরাগ জানতে পারেন তিনি ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক জানেন, ডাক্তাররা নাকি জবাব দিয়েও দিয়েছিলেন। বলেছিলেন আর ২ সপ্তাহ আয়ু তাঁর। তখন গ্যাংস্টারের শ্যুটিং চলছে। ক্যানসারের তোয়াক্কা না করেই শ্যুটিং চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই সেসময় পরিচালকের পাশে থেকেছিলেন বন্ধুর মতো। ক্যানসার জয় করে ফেরেন অনুরাগ। তারপর ফের একাধিক চোখ জোড়ানো ছবি উপহার দিয়েছেন অনুরাগ।
তাঁর প্রথম পরিচয়, তিনি বলিউডের স্বনামধন্য অভিনেত্রী। পাশাপাশি রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ও। বিজেপির টিকিটে সাংসদও হয়েছিলেন তিনি। ৬৮ বছর বয়সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন কিরণ খের। ২০২১ সালে তাঁর ক্যানসার ধরা পড়ে। তবে এখন তিনি সুস্থ। শুরু করেছেন কাজও।
২০১৮ সালে ধরা পড়েছিল অভিনেত্রী সোনালি বেন্দ্রের ক্যানসার। মেটাস্ট্যাটিক ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন সোনালি। দীর্ঘদিন তাঁর চিকিৎসা চলে নিউইয়র্কে। ২০২১ সালে ক্যানসার মুক্ত হন সোনালি। সুস্থ হওয়ার পর থেকে তিনি ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা ছড়ানোর কাজ করছেন। কেমোর পর তাঁর চেহারাতেও এসেছিল বদল, সেসব দিন আজও বিভীষিকা অভিনেত্রীর কাছে। সোনালি জানান, তাঁর যে ক্যানসার হয়েছে একথা ভুলে থাকতে অধিকাংশ সময় ঘুমিয়ে থাকতেন তিনি।
তিনি বলিউডের ‘বাবা’, অভিনেতা সঞ্জয় দত্তের জীবন যেন আস্ত একটা সিনেমা। তাই হয়ত এই লিভিং লেজেন্ডের জীবন নিয়ে ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে ছবিও। চতুর্থ স্টেজে ফুসফুসের ক্যানসার ধরা পড়েছিল তাঁর। কিন্তু ‘বাবা’কে রুখবে সাধ্য কার? তোয়াক্কা করতেন না সঞ্জয়, ক্যানসার নিয়েই যেতেন জিমে। করোনা আবহ, লকডাউন চলছে তখন। সঞ্জয় জানতে পারেন তিনি আক্রান্ত। তাঁর মা-বৌ ক্যানসারে মারা গিয়েছিলেন, ভেবেই বেশ কিছুক্ষণ হাউহাউ করে কেঁদেছিলেন মুন্নাভাই। তারপর মনস্থির করেছিলেন, ক্যানসারকে কোনও ভাবেই নিজের শরীর ও জীবনের উপর অধিকার ফলাতে দেবেন না তিনি। চিকিৎসা চলাকালীন KGF এর শ্যুটিং ও করেছিলেন সঞ্জয় দত্ত।
‘কফি উইথ করণ’-এ এসে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর জানিয়েছিলেন তাঁর ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার কথা। সেই সময় চলছে করোনার প্রকোপ। তখনই ক্যানসার আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। তবে এখন তিনি সুস্থ। সম্প্রতি ‘রকি অর রাণী কি প্রেম কাহানি’ ছবিতে আলিয়ার ঠাকুমার ভূমিকায় দেখাও গিয়েছে অভিনেত্রীকে। খুব শিগগিরিই বাংলা ছবিতেও দেখা যাবে তাঁকে।
এই মারণ রোগ ক্যানসারকে হারিয়ে এই তারকারা এই মুহূর্তে একেবারে সুস্থ, তাঁদের রোগমুক্ত সুন্দর জীবনের শুভেচ্ছা রইল এডিটরজি বাংলার তরফে।