গত কয়েক দশক ধরেই সমাজে এমন কিছু বলিষ্ঠ নারী এসেছেন, যাঁদের প্রভাব বাস্তবের মাটি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে রূপোলি পর্দাতেও। এই ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই, নেটফ্লিক্সের একাধিক প্রযোজনায় ধ্বনিত হয়েছে নারীশক্তির অবিসংবাদিত জয়। যেখানে বারবার দেখানো হয়েছে, কীভাবে কোনও নারী চরিত্র তাঁদের ক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস এবং লড়াকু মানসিকতাকে সঙ্গে নিয়ে বদলে দিয়েছেন সমাজের আদত চেহারাটাই।
'বম্বে বেগমস' থেকে 'ত্রিভঙ্গ: তেরি মেরি ক্রেজি' পর্যন্ত প্রতিটি নেটফ্লিক্স প্রযোজনার নারী চরিত্ররা যেভাবে সাধারণের মনে জায়গা করে নিয়েছে, তা এক কথায় অনবদ্য।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আগে রইল তেমনই কিছু নারী চরিত্রের কথা ।
'দিল্লি ক্রাইম'-এ শেফালি শাহ অভিনীত ডিসিপি বর্তিকা চতুর্বেদি
২০১২ সালে দিল্লির নির্ভয়া ধর্ষণের ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল এই সিরিজ। যেখানে শেফালি শাহ অভিনয় করেছিলেন সেই ডেপুটি কমিশনারের চরিত্রে, যে চরিত্রটি সমস্ত স্টিরিওটাইপ ভেঙে ওই ভয়ানক খুন ও ধর্ষণের অভিযুক্তদের মূল ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যেই গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছিল। এই চরিত্রে অভিনয়ের সময় যে ধরনের শরীরভাষা পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন শেফালি, তা অন্তত ওই সময়ের ভারতীয় দর্শকের কাছে একেবারে 'নতুন' বলা যায়। সব মহল থেকেই দারুণ প্রশংসা ও ভালবাসা পেয়েছিল শেফালি অভিনীত ওই চরিত্রটি।
'দ্য ফেম গেম'-এ মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত অনামিকা আনন্দ
মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত এই চরিত্রটি একাধারে একজন স্ত্রী, মা, কন্যা, প্রেমিকা এবং বিখ্যাত বলিউড আইকন। তিনি আচমকা উধাও হয়ে যান। একজন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ স্বাধীনচেতা নারীর চমৎকার প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল অনামিকা আনন্দের মধ্যে।
'আরণ্যক'-এ রবীনা ট্যান্ডন অভিনীত কস্তূরী ডোগরা
মাসখানেক আগেই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া এই ওয়েব সিরিজটিতে মুখ্য চরিত্রে ছিলেন রবীনা ট্যান্ডন। এক দায়িত্ববান পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। একদিকে তিনি দু'হাতে ছেলে-মেয়ে মানুষ করা এক মা। বয়স্ক শ্বশুরকে সামলানো এক গৃহবধূ। তুলনায় কম আত্মবিশ্বাসী এক স্বামীর পাশে থাকা এক স্ত্রী। তার সঙ্গেই অত্যন্ত কড়া এক পুলিশ অফিসার। যিনি তাঁর শহরে ঘটে যাওয়া একের পর এক ভয়াবহ সিরিয়াল কিলিং-এর তদন্তে নামেন এবং অসম্ভব একাগ্রভাবে তদন্ত চালিয়ে খুঁজে এআন প্রকৃত খুনিকে।
'বম্বে বেগমস'-এ অম্রুতা সুভাষ অভিনীত লিলি
পাঁচ প্রজন্মের পাঁচ নারী চরিত্রের জীবনের নানা টানাপড়েন নিয়ে তৈরি হয়েছিল এই 'বম্বে বেগমস' ওয়েব সিরিজের কাহিনি। এই ওয়েব সিরিজটির পরিচালক এবং কাহিনীকারও মহিলা। পরিচালনা করেছেন অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তব এবং কাহিনিকার বর্নিলা চট্টোপাধ্যায়। লিলি একজন নর্তকী। তার সঙ্গেই একজন মা'ও বটে। যে ক্রমাগত সমাজের উপরের স্তরের মানুষদের সঙ্গে লড়াই চালায় নিজের হকের জন্য। সেই হক কেবল টাকা নয়। তার প্রাপ্য সম্মানও।
'অজিব দাস্তানস' এ কঙ্কনা সেন শর্মা অভিনীত ভারতী মণ্ডল
কঙ্কনা সেনশর্মা অভিনীত শক্তিশালী নারী চরিত্রের সংখ্যা কম নয়। তবে, 'অজিব দাস্তানস'-এ তিনি যে চরিত্রটি করেছিলেন, তা দেখে নড়েচড়ে বসেছিলেন তাঁর অতি বড় সমালোচকও। ভয়াবহ প্রতিকূলতার মধ্যেও স্রেফ সাহস আর জেদকে হাতিয়ার করে যেভাবে তাঁর অভিনীত চরিত্র ভারতী মন্ডল শেষমেশ পার করে ফেলে বহু ভিক্টরি ল্যাপ, তা দর্শকদের হৃদয়ে থেকে যাবে বহুদিন।
'পাগগ্লাইট'-এ সানিয়া মালহোত্রা অভিনীত সন্ধ্যা
একটি সনাতন ভারতীয় পরিবারের নারী হিসেবে কী কী ধরনের অদ্ভুত ও কখনও কখনও প্রায় অ-মানবিক চাপ মাথায় রেখে ফেলতে হয় প্রতিটি পদক্ষেপ, তা অসামান্য ফুটিয়ে তুলেছিলেন সানিয়া মালহোত্রা তাঁর 'সন্ধ্যা' চরিত্রটির মাধ্যমে। পরিবারকেন্দ্রিক এত অসামান্য ছবি ভারতীয় ছবির দর্শক যে বিশেষ দেখেননি, এমনটা প্রায় হলফ করেই বলা যায়।
'ত্রিভঙ্গ: তেরি মেরি ক্রেজি'-এ কাজল অভিনীত অনুরাধা আপ্টে
ওড়িশি নৃত্যের একটি বিশেষ ভঙ্গিমা, যা দর্শককে অভিভূত করে। এবং, যে ভঙ্গিমার সঙ্গে মিশে আছে এক অপূর্ব কামনার আদলও। এই ছবিতে কাজলের অভিনয় দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়েছিলেন তাঁর অতি বড় সমালোচকও। যেভাবে পর্দায় একইসঙ্গে হিংসাত্মক এবং ওড়িশি নর্তকীর ভূমিকা ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি, তা এক কথায় অনবদ্য। ছবিটিতে তাঁর সঙ্গে অভিনয় করেছেন মিথিলা পালকর এবং তনভি আজমি।
'হাসিন দিলরুবা'-য় তাপসি পান্নু অভিনীত রানি কাশ্যপ
'হাসিন দিলরুবা' একটি ক্ল্যাসিক থ্রিলার ছবি। এই ছবিতে কোমলতা ও নির্মমতাকে একই সময় একই দৃশ্যে অভাবনীয় দক্ষতায় একাধিকবার ফুটিয়ে তুলে সমালোচক ও দর্শকদের হৃদয়ে স্থান পেয়ে গিয়েছিলেন তাপসী পান্নু।