শহর কলকাতায় এখন রাস্তায় বেরোলেই চারপাশে চোখে পড়ছে একটা ছবির পোস্টার। ছবির নাম হাবজি গাবজি (Habji Gabji)। পোস্টারে বাবা-মা-সন্তান সকলের চোখই মুঠোফোনে। ছবির ট্রেলার দেখে ফেলেছি সব্বাই। কাজে কম্মে যাওয়ার পথে কানের হেডফোনেও লুপে বেজে চলেছে সে ছবিরই গান। তা সাড়া ফেলে দেওয়া সেই ছবির অভিনেতাদের সঙ্গে একটু আড্ডা দিলে কেমন হয়। এমন ভাবনা থেকেই ছবির আদি অর্থাৎ পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের (Parambrata Chatterjee) কাছে পৌঁছে গেলাম এডিটারজি বাংলার তরফে।
এডিটরজি বাংলাঃ ছবির ট্রেলার দেখে আমরা বুঝে গেছি গেমিং অ্যাডিকশন নিয়ে ছবি। গেমিং অ্যাডিকশনের চেয়েও আরও বড় সমস্যা তো মোবাইলের নেশা। সেই সমস্যাটা আরও গভীরে। এটাকে কীভাবে দেখছেন
পরমব্রতঃ ঠিকই বলেছেন। আসল সমস্যা আরও গভীরে। মোবাইলের নেশায় আমরা অন্য একতা সমান্তরাল পৃথিবীতে বাস করছি। আগে একটা ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলে দেখা যেত, মানুষ মানুষের সঙ্গে আলাপ করছেন। স্বাভাবিক গল্প করছেন, নাম জানছেন, পেশা জানছেন। এখন দেখবেন, সকলেই যে যার মোবাইলে আটকে রয়েছেন। এবং একে অন্যের সম্পর্কে জানতে চাওয়াকে আমরা নাক গলানো হিসেবে ধরি। আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না, আমি নিজেও এটার অংশ।
Tirandaj Shabor Review: দুর্ভাগা সেই দেশ যে দেশে কোনও শবর নেই
প্রশ্নঃ এখন অনেকেই নিজেদের সন্তানের ভিডিও খুব ছোট বয়সে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘনঘন আপলোড করেন, সেই সব ভিডিওতে লক্ষ লক্ষ ভিউ হয়। ভবিষ্যতে সেই সন্তানরাই তো বড় হবে মা-বাবার দিকে আঙুল তুলে বলতে পারেন, "তোমরা আমাকে তোমাদের জনপ্রিয়তার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছ"।
পরমব্রতঃ একশোবার বলতে পারে। আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে সোশ্যাল মিডিয়া বিমুখ মানুষ। আমার কাছের বন্ধুদের অনেকেই দিনরাত সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকেন, তাঁদের কিছু হিসেবও রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে এক সময় কন্টেন্ট কম পড়লে নিজের বাড়ির লোক, নিজের সন্তান সবার ভিডিও আপলোড করা শুরু করছেন। যাদেরকে ব্যবহার করে তাঁরা জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন, তাঁরা অনেক সময় নিজেরা বেশ অস্বস্তি বোধও করেন। আমি নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে এতটা বে আব্রু করায় বিশ্বাসী নই।
প্রশ্নঃ একটু হালকা আলোচনায় আসি। হাবজি গাবজি তে প্রথম শুভশ্রীর সঙ্গে কাজ করা, অভিজ্ঞতা কেমন?
পরমব্রতঃ এখনকার অভিনেত্রীদের মধ্যর শুভশ্রীর-ই ভাল কাজের খিদেটা সবচেয়ে বেশি। শুভশ্রী অভিনেত্রীই হতে এসেছেন, গ্ল্যাম ডল হতে আসেননি, কেউ গ্ল্যামডল হতে চাইতেই পারেন, তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু ও মূলত অভিনয়টা করতেই এসেছে, কাজের ব্যাপারে খুব প্যাশনেট।
প্রায় নিখুঁত ভাবে এক 'অপরাজিত' মাস্টারপিসের জন্মকথা পর্দায় ফুটিয়ে তুললেন অনীক দত্ত
প্রশ্নঃ বাচ্চারা নাকি আপনার কাজ করতে দারুণ ভালোবাসে। কীভাবে এতটা সহজ হন ওদের সঙ্গে?
পরমব্রতঃ 'একেই বলে শুটিং'এ সত্যজিৎ রায় একটা কথা বলেছিলেন, যেটা আমি সবসময় মেনে চলি, বাচ্চাদের বাচ্চা ভাবি না। ওদের সঙ্গে ওদের মতো করে মিশি। আমাদের বড়দের বাস্তব বোধের ঠেলায় কল্পনাবোধ সীমিত হয়ে যায়, যেটা বাচ্চাদের হয় না। আমায় যদি কেউ বলে আমার সারাদিনে সবেচেয়ে বেশি কী করতে ভালো লাগে? আমি বলব, আমায় যদি কেউ সারাদিন দুটো তিনটে বাচ্চার সঙ্গে থাকতে দেওয়া হয়, তাহলেই সবচেয়ে ভাল থাকব। বেবিসিটারের জন্য আমি অ্যাপ্লাই করে রাখতে চাই।
প্রশ্নঃ বাংলা ছবি নিয়ে সম্প্রতি একটা বিতর্ক দানা বেঁধেছে। কেউ বলছেন, বাংলা ছবি দেখা দর্শকের দায়িত্ব, বিপক্ষ যুক্তি, ভাল কন্টেন্ট না পেলে কেন জোর করে হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখবে মানুষ। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?
পরমব্রতঃ আমি বিশ্বাস করি, একটা সময়ে আমরা বাংলায় খুব খারাপ ছবি বানিয়েছি। কোনও জঁর-এর দর্শককেই ধরতে পারিনি। আর অতিমারীতে ওটিটি তে দর্শক এত ভাল ভাল ছবি দেখে নিয়েছেন, এখন যা খুশি তাঁরা দেখবেন না। আস্তে আস্তে একটা ইতিবাচক বদল আসছে। আলাদা আলাদা দর্শক বেছে নিয়ে আমরা যদি নানা ধরণের ছবি বানাতে থাকি, মানুষ হলে গিয়েই বাংলা ছবি দেখবে। সিনেমা দেখাটা দায়বদ্ধতা না। তাই ছবি বাছার স্বাধীনতাটা দিতেই হবে।