গত প্রায় তিন দশক ধরে বিশ্বের আপামর সঙ্গীতপ্রেমীর কাছে ভারতীয় সঙ্গীতের সবথেকে জনপ্রিয় ও সর্বজনগ্রাহ্য মুখ তিনি। পেয়েছেন অস্কারও। তাঁকে কেউ বলেন 'দক্ষিণের মোৎজার্ট'। কারও কথায় তিনি হলেন 'সুরের ঝড়'! সেই এআর রহমানের জন্মদিন আজ। ১৯৬৭ সালে ৬ জানুয়ারি তৎকালীন মাদ্রাজ স্টেটে জন্ম হয়েছিল তাঁর। জন্মের সময় নাম ছিল এ এস দিলীপ কুমার। বাবা আর কে শেখর মুধালিয়ার ছিলেন মালায়ালম ও তামিল ছবির সঙ্গীত পরিচালক। তাঁর মায়ের নাম ছিল কস্তুরী দেবী। শিশু শিল্পী হিসেবে একসময় দূরদর্শনের ‘ওয়ান্ডার বেলুন’ শোতে দেখা গিয়েছিল রহমানকে।
কিন্তু, সমস্যা ছিল অন্যত্র। তাঁর নিজের নাম নিজেরই পছন্দ ছিল না। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের অবস্থা যখন সবদিক দিয়েই ক্রমে সঙ্গীন হয়ে উঠছে, সেই সময় ১৯৮৮ সালে তাঁর বোন তাঁর বোন কঠিন অসুখে আক্রান্ত হন। তখন আবদুল কাদের জিলানী নামের এক মুসলিম পীরের দোয়ায় নাকি তার বোন ঐশ্বরিকভাবে সুস্থ হয়ে যান। এর পরেই রহমানের গোটা পরিবারের ইসলাম ধর্মের উপর বিশ্বাস গড়ে ওঠে। ওই পীর যখন অসুস্থ ছিলেন, তখন সুরকারের মা তাঁর শুশ্রূষা করেন। বাবা-মেয়ের মতো সম্পর্ক তৈরি হয় তাঁদের দু’জনের মধ্যে। তাঁর কিছু বাণী ধীরে ধীরে মা ও পুত্রের ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আনে। সুফির প্রভাব পড়ে তাঁদের উপর। কিন্তু কোনও দিন পীর তাঁদের ধর্মান্তরকরণের কথা বলেননি। তবু তাঁরা ঠিক করেন যে, ধর্মান্তরিত হবেন। সুফি সংস্কৃতি ক্রমশ তাঁদের ধ্যানজ্ঞান হয়ে ওঠে। কস্তুরী দেবীর মতোই ছেলেও দিলীপ কুমার থেকে ততদিনে নাম বদলাবেন বলে স্থির করে ফেলেছেন।
জ্যোতিষীর সঙ্গে কথা বলে তারপর তাঁর মা ‘আল্লাহ রাখা’ নামটি রাখেন। আর সঙ্গে 'রহমান'। আল্লাহ রাখা শব্দের অর্থ, ঈশ্বর যাকে রক্ষা করেন।
তারপরই মণিরত্নমের ছবি ‘রোজা’-র সুর দেন এ আর রহমান। তারপর থেকে কার্যত আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। তৈরি হল কালজয়ী কিছু সঙ্গীত। যা মানুষের মনে জায়গা করে নিল চিরতরে। এলো সমস্ত সম্মান ও পুরস্কার। সুফি সংস্কৃতির ভক্ত'র সুরের মূর্চ্ছনায় বুঁদ হয়ে পড়ল আসমুদ্রহিমাচল।