লড়াই, লড়াই, কী তীব্র লড়াই মৃত্যুর সঙ্গে! তবু, শেষরক্ষা হল না। ২০ দিনের অভাবিত লড়াইয়ের শেষে জীবনপ্রদীপ নিভল অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার (Aindrila Sharma passed away)। তবে, মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই এই তাঁর প্রথমবার ছিল না। ২০১৫ সালে যখন প্রথমবার জানতে পারেন কর্কটরোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে, লড়াইয়ের শুরু তখন থেকে। তিনি তখন মাত্র ১৭ বছর বয়সি। ২০১৫ সালের সেই দিনগুলোয় অস্থিমজ্জায় ক্যানসার নিয়ে লড়ছিলেন ঐন্দ্রিলা (Aindrila Sharma passed away)। চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, আর মাত্র ৬ মাস হাতে আছে তাঁর। আশার আলো যখন সকলের চোখ থেকেই নিভে যেতে বসেছে, তখনও হাল ছাড়েননি যাঁর শরীরে সেই ভয়াবহ ব্যাধি, স্বয়ং সেই তিনিই। কী এক জেদের বশে সেই লড়াইয়ে চিকিৎসকদের ভুল প্রমাণিত করে হাসিমুখে মাঠে রয়ে গেলেন ঐন্দ্রিলা।
আরও পড়ুন: টানা ২০ দিনের লড়াই শেষ, প্রয়াত অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা
'ফাইট, কোনি ফাইট' যেন তাঁর জীবনের ছত্রেছত্রে। তিনি জানতেন মৃত্যু আসবে। তিনি জানতেন মৃত্যু আসবেই খুব তাড়াতাড়ি। তার সঙ্গে এই কথাও বোধহয় জানতেন যে, কিছুতেই হারার আগে হারস্বীকার করে নেবেন না তিনি। এভাবেই প্রথমবার ক্যানসারকে পরাজিত করে টানা দেড় বছর যুদ্ধ চালিয়ে ২০১৬ সালে রোগমুক্ত হয়ে ফের জীবনে ফিরেছিলেন শিখা শর্মা-উত্তম শর্মার কনিষ্ঠা কন্যা।
২০১৭ সালে ছোট পর্দায় হাতেখড়ি ঐন্দ্রিলার। ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকে শুরু হয়েছিল অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলার (Aindrila Sharma fought with cancer) যাত্রা। অল্প সময়ে দর্শকেরা ভালবেসেছিলেন তাঁকে।ঐন্দ্রিলার জীবনে এসেছেন অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী। ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিক থেকেই শুরু তাঁদের বন্ধুত্বের। পৃথিবীর অনেক বন্ধুত্বের মতো সেই সম্পর্কও প্রেমে গড়িয়ে গিয়েছিল।
জীবন জীবনের গতিতে একটু একটু করে যখন ফুটে উঠতে উঠতে চলছিল, তখনই ফের হানা দিল ঘাতক। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবার ডান হাত থেকে ঘাড় পর্যন্ত অসম্ভব যন্ত্রণা শুরু হয়। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জানতে পারেন, ফুসফুসে ১৫ সেন্টিমিটারের একটি টিউমার তৈরি হয়েছে। আবার শুরু বাঁচার লড়াই।
২০২২ সালে আবার যুদ্ধজয় করে ছন্দে (Aindrila Sharma fought with cancer) ফেরেন ঐন্দ্রিলা। আবৃত্তি করতে, নাচতে ভালবাসতেন। দ্বিতীয় বার ক্যানসার জয় করে ফেরার পর নাচতে অসুবিধা হত। কিন্তু মনের অবিমিশ্র জোরে ফিরেছিলেন ধারাবাহিকের অভিনয়ে।
অভিনয় করেছিলেন 'ভাগাড়' ওয়েবসিরিজে। অভিনয় করছিলেন ধারাবাহিকে। তাঁর প্রিয় কাজ ছিল 'জিয়নকাঠি' ধারাবাহিকে। সে কথা ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন বারবার। যে জিয়নকাঠিকেই যেন নানাভাবে খুঁজে ফিরেছে সারাজীবন ধরে ২৪ বছরের মেয়েটি।
তারপরই এলো ১ নভেম্বরের সেই দিন। আবার শুরু লড়াই। আবারও প্রার্থনা। পাশে চিরকালীন বন্ধুর মতো সবসময় ছিলেন সব্যসাচী চৌধুরী। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাশে ছিলেন যে আরও কত অগণিত মানুষ! কত প্রার্থনা! রবিবার থেমে গেল সব।
লড়াইয়ের একেবারে নতুন সংজ্ঞা তৈরি করে চিরঘুমে (Aindrila Sharma passed away) তলিয়ে গেলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা।