তাসের ঘরের সম্পর্ক ভাঙনের যুগে, প্রায় এক দশকেরও বেশি সময়ে ধরে প্রেমে রয়েছেন টলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় কাপল অঙ্কুশ হাজরা এবং ঐন্দ্রিলা সেন। টলিউডে তাঁদের মাথার উপর ছিল না কোনও শক্ত পোক্ত হাত। নিজেরাই ঘষে ঘষে কেরিয়ার গড়েছেন, পরিশ্রম করেছেন। সম্প্রতি দুজনে মিলে খুলে ফেলছেন একটি প্রোডাকশন হাউজও।
তবে মাঝে বেশ কিছুদিন পর্দা থেকে দূরে ছিলেন ঐন্দ্রিলা। টলিউডে তাঁর কেরিয়ার এক দশকেরও বেশি। একেবারে ছোট থেকেই তিনি ক্যামেরার সামনে দাপিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু অভিনেতা অভিনেত্রীদের দেখে মানুষ বরাবরই চায় নিজের চোখের আরাম। লকডাউনে বাড়িতে বসে থেকে বেশ খানিকটা ওজন বাড়িয়ে ফেলেছিলেন ঐন্দ্রিলা। চারিদিকে মৃত্যুর খবর, অসুস্থতার খবরে মানসিক ভাবেও তিনি হয়ে পড়েছিলেন বিপর্যস্ত। শরীর চর্চাতেও দিতে পারছিলেন না মন। তাতে অঙ্কুশের কোনও অসুবিধে না থাকলেও, দর্শকদের চোখে যেন কিছুতেই সইছিল না। অভিনেত্রীকে নিয়ে চলেছিল দেদার ট্রোলিং। সেসময় নাকি বাড়তি ওজনের কারণে দুই তিনটি ছবি হাতছাড়াও হয় ঐন্দ্রিলার, কিছু তিনি নিজেও ছেড়ে দেন। এরপর নিজেকে বেশ কিছুদিন সময় দেন ঐন্দ্রিলা। তারপর যেভাবে তিনি ফেরেন, তাতে তো চক্ষু কার্যত চড়কগাছ দর্শকদের।
ঐন্দ্রিলা জানিয়েছিলেন, কোনও প্রযোজকের সঙ্গে সেইসময় দেখা হলেই তাঁরা বলতেন, ‘তোকে একটু ওজন কমাতে হবে’ । ঐন্দ্রিলা এও বলেন টলিউডে এই চল আজও বর্তমান, নায়িকাদের হতে হবে সুন্দরী, ছিপছিপে। ঐন্দ্রিলার সেসময় মনে হতে শুরু করে, সত্যিই তিনি এখনও পর্যন্ত এমন কোনও ছবি করে উঠতে পারেননি, যার জেরে তিনি গলা উঁচু করে বলতে পারেন, ‘ওজনটা আসলে কোনও ব্যাপারই নয়’ । অথচ বলিউডে বিদ্যা বালান, ভূমি পেডেনকাররা বাড়তি ওজন নিয়েই একের পর এক ছবি হিট করে দেখিয়েছেন। কিন্তু ঐন্দ্রিলার কাছে তেমন সুযোগ আসেনি কখনও। তাই নিজেই কসরত শুরু করেন ঐন্দ্রিলা।
এই মুহূর্তে মির্জার ‘মুসকান’-এর ওজন ৫৬ -এর আশেপাশে। কিন্তু এক সময় তা ছাড়িয়ে গিয়েছিল ৭১। খুব অল্প সময়েই নিজেকে স্লিম এন্ড ফিট প্রমাণ করে দিয়েছিলেন অভিনেত্রী। এর পিছনের রাজ্ কী? অভিনেত্রী একাধিক সাক্ষাৎকারে সেই টিপসও দিয়েছেন।
ঐন্দ্রিলা জানান, লকডাউনের পর পর হুড়মুড়িয়ে তাঁর ওজন বাড়তে শুরু করেছিল। ২০২১ সালের জুন মাস থেকে তিনি শরীরচর্চা শুরু করেন। প্রথমদিকে খুব কষ্ট হত তাঁর। প্রিয় মিষ্টি ছুঁতেন না। অন্য খাবারও কম খেতেন। কিন্তু প্রথম দু’মাস তাঁর ওজন এক ছিটেও কমেনি। তবে হাল ছাড়েননি পর্দার ‘মুসকান’ । তবে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা উপবাসের পক্ষপাতী নায়িকা কোনওদিনই ছিলেন না। মেনে চলতেন না কোনও বাধা ধরা ডায়েটও। তাঁর প্রশিক্ষক তাঁকে ৬ বার খেতে বলেছিলেন , তবে পরিমাণ অল্প।
খিদে পেলে খেতেন পেঁপে সেদ্ধ। ঐন্দ্রিলা এই বিষয়টিতে খুবই গুরুত্ব দিতে বলেছেন, তিনি জানান পেঁপে সেদ্ধর বিকল্প হয় না। এতে ভাল থাকে লিভারও।
এছাড়া তিনি সকাল দুপুর রাত মিলিয়ে কুসুম ছাড়া মোট ৬টি করে ডিমসেদ্ধ খেতেন। দুপুরে খেতেন সবজির জ্যুস, প্রোটিন শেক আর ফল। মাঝে খিদে পেলে খেতেন শশা। এরপর বেশ কিছুদিন কসরতের পর অল্প ভাত খাওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন অভিনেত্রী। তবে খাদ্য তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল জ্যুস, ব্ল্যাককফি। এরপর ওজন কমতে থাকে ঐন্দ্রিলার। তিনি অনুমতি পান বাড়িতে মায়ের তৈরি খাবার খাওয়ার। ধীরে ধীরে খেতেন মাছ মাংসও।
তবে কেক পেস্ট্রির মায়াটা সেসময় একেবারে ঝেড়ে ফেলতে হয়েছিল তাঁকে। কফি খেতেন কাঠ বাদামের দুধ দিয়ে। চিনির বদলে ব্যবহার করতেন গুঁড়। তবে চিট ডে-তে বিরিয়ানির আলু বা ফুচকা কিছুই ছাড়েন না তিনি।
ওজন কমিয়ে যখন ঐন্দ্রিলা ক্যামেরার সামনে ফিরলেন, তখনও দর্শকদের চিন্তার শেষ নেই। কেউ কেউ তখন বলেন ঐন্দ্রিলার চোখ নাক মুখ সব বদলে গিয়েছে। তিনি নাকি কোথাও থেকে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে এসেছেন। তাঁর উত্তরে ঐন্দ্রিলা বলেছিলেন, শরীরের মেদ কমলে মুখেরও কমে। তাই চোখ নাকের আকৃতি খানিক পরিবর্তন সকলেরই হয়।
ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে যখন একের পর এক কথা বলছে দর্শক, অঙ্কুশ বরাবর জানিয়েছেন তিনি ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে গর্বিত। ঐন্দ্রিলার ছবি শেয়ার করে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন পর্দার মির্জা।
ওজন কমিয়ে এরপর ঐন্দ্রিলা উপহার দেন তাঁদের অঙ্কুশের সঙ্গে তাঁর প্রথম ছবি ‘ম্যাজিক’, এরপর ‘মির্জা’ ছবিতেও জুটিকে দেখে চোখ জুড়িয়েছে দর্শকদের।
তবে ঐন্দ্রিলা জানান, এমন একটা দিন নিশ্চিত আসবে, যেখানে অভিনেতা অভিনেত্রীদের ওজন নয় বরং অভিনয়টাই মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে।