তাঁদের ‘প্রাক্তন’ করবে? টলিউডে এমন সাধ্য কার আছে? উত্তম-সুচিত্রার পর বঙ্গ চলচ্চিত্রে চিরন্তন বলতে যদি আর কোনও জুটির কথা মাথায় আসে, নিঃসন্দেহে সেই দুটি নাম প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। নয়ের এর দশকে দর্শকদের হলমুখী করতে অক্সিজেন জুগিয়েছিল বুম্বা-ঋতুর জুটি। সেই সময় পর্দায় তাঁদের ছবি মানেই সুপারহিট। সমসাময়িক অনেক জুটিই সেইসময় ছিল, কিন্তু তাঁদের জুটিকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি কেউই-ই। প্রসেনজিৎ ঋতুর ছবি মানেই খইয়ের মতো উড়ে যেত টিকিট। তাঁদের জুটি রীতিমতো ঈর্ষণীয় ছিল সমসাময়িক নায়ক-নায়িকাদের কাছে।
অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র, প্রয়াত অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়দের অভিযোগ ছিল, এই জুটির প্রতাপেই নাকি কাজ হাতছাড়া হয়ে যেত তাঁদের। অন্য অভিনেতাদের নেওয়া হলেও নাকি, ঋতু চাইতেন প্রসেনজিৎ-কেই। বুম্বা দা-কেও নিয়েও একই অভিযোগ ছিল তৎকালীন নায়িকাদের।
তাঁদের অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি দেখে তখন গোটা বাংলা ভেবেই নিয়েছিল এই জুটির মধ্যে নিশ্চিত প্রেম রয়েছে। ঋতুপর্ণা সেইসময় তাপস পাল, চিরঞ্জিত, অভিষেক, ফিরদৌসদের সঙ্গেও অনেক ছবি করেছেন, অন্যদিকে প্রসেনজিৎ-এর তখন নায়িকা রচনা, শতাব্দী, ইন্দ্রাণী হালদার, চুমকি চৌধুরীরা। কিন্তু প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার জুটিটা যেন ছিল টলিউডের ‘চেরি অন দ্য কেক’। একেরপর এক সুপারহিট ছবির সাফল্য তখন পালক হয়ে জুড়ছে জুটির মুকুটে। ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘মধুর মিলন’, ‘জামাই বাবু জিন্দাবাদ’, ‘তুমি এলে তাই’, ‘পবিত্র পাপী’, ‘অগ্নিশিখা’- নাম নিতে বসলে প্রতিবেদন লম্বা হবে আরও।
দুজনেই যখন কেরিয়ারের মধ্যগগনে, হঠাৎ চিড় ধরল তাঁদের সম্পর্কে। যেন থমকে গেল টলিউডের চাকা। তোলপাড় হল পেজ থ্রির পাতা। কোনও এক অজ্ঞাত কারণে জুটি থামিয়ে দিলেন একসঙ্গে ছবি করা। দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে প্রসেনজিতের দ্বিতীয় বিয়ে তখন ভাঙতে বসেছে। এদিকে ইন্ডাস্ট্রিতে প্রসেনজিৎ ও ঋতুপর্ণার সম্পর্ক নিয়ে তখন নিত্যনতুন মশলাদার গুজব রটছে। ইন্ডাস্টি থেকে শুরু করে চারদিকে এতটাই মিথ্যে রটনা রটছিল তাঁদের নিয়ে যে শেষমেষ তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন আর একসঙ্গে কাজ করবেন না তাঁরা। এন্ট্রি নিলেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। বিয়ে করে নিলেন ঋতুও।
তারপর থেকেই নিজেদের আলাদা আলাদা প্রমাণ করার তাগিদ শুরু হল তাঁদের। সৃজিতের হাত ধরে এক অন্য প্রসেনজিৎকে দেখে চমকে গেল টলিউড। আর ঋতুও তখন একের পর এক ছবিতে একাই একশো। তারপর তাঁদের মান অভিমানের পালা সাঙ্গ হয়ে ফিরতে যেন লেগে গেল প্রায় ১৪ টা বছর।
Tollywood Starkids: স্টারকিড নন, তাঁরা 'শিল্পী সন্তান', হালফিলে টলিউডের পঞ্চপাণ্ডব
যেন এই ‘মায়ার বাঁধন’ আলগা হওয়ার নয়। অসাধ্য সাধন করলেন শিবপ্রসাদ-নন্দিতার জুটি। জুটিকে ফেরালেন পরিচালকদ্বয়। আর তাঁদের যোগ্যতাই যেন তাঁদের এগিয়ে নিয়ে গেল ‘অযোগ্য’র দিকে। জুটি এবার হাঁকাতে চলেছেন হাফ সেঞ্চুরি। বাংলা ছবির ইতিহাসে নিঃসন্দেহে এ এক রেকর্ড। এর আগে কোনও জুটিই একসঙ্গে ৫০টি ছবিতে কাজ করেননি। আগামী মাসেই মুক্তি পাচ্ছে প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার ৫০ তম ছবি 'অযোগ্য'। জুটির রানরেট সেঞ্চুরি ছুঁয়ে যাক, বাংলা ছবির দর্শকরা এটুকু চাইলে ক্ষতি কোথায়?