প্রেম, ভালবাসা...শব্দগুলো বড় সুন্দর । আর তার অনুভূতি আরও । কিন্তু, যখন শোনা যায়, প্রেমিক প্রেমিকাকে গলা কেটে খুন করছে, কিংবা প্রেমিকার ৩৫টা টুকরো করছে, তখন প্রেম-ভালবাসার সৌন্দর্য্য যেন মুহূর্তে হারিয়ে যায় । ভালবাসায় বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে মানুষ । কিন্তু, সত্যিই কি বিশুদ্ধ ভালবাসা পৃথিবীতে বেঁচে নেই ? একটা-দু'টো ঘটনাতেই দেখেই কি ভালবাসার উপর থেকে ভরসা হারিয়ে ফেলা যায় ? বোধ হয় না, প্রেম, ভালবাসা আছে...বিগত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেরকমই কিছু পোস্ট উঠে আসছে । একদিকে, প্রেমিকাকে ৩৫টা টুকরো করা, অন্যদিকে, সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলার ভালবাসা, দুইয়েরই তুলনা করে পোস্ট করছেন নেটিজেনরা । সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলা 'ভালবাসা'-র উদাহরণ হয়ে উঠছেন ।
হাসপাতালে ঐন্দ্রিলার লড়াই চলছে এখনও । জ্ঞান ফেরেনি । প্রথমে চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন । আশার কথা শুনিয়েছিল সব্যসাচী । কিন্তু, ব্রেন স্ট্রোকের পর পরপর হার্ট অ্যাটাক । আরও অবস্থার অবনতি হয় ঐন্দ্রিলার । সবাই ধরেই নিয়েছিল আর ফিরবেন না ঐন্দ্রিলা । মিরাকলের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন সব্যও । কিন্তু, মিরাকল হয়েছে । কোনও এক অলৌকিক শক্তি যেন মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে আবার ফিরিয়ে এনেছে ঐন্দ্রিলাকে । সব্যসাচী নিজে জানিয়েছেন একথা । এই যে বারবার হাজারও প্রতিকূলতার মধ্যে ঐন্দ্রিলার ফিরে আসার লড়াই কিন্তু কোথাও ভালবাসার জোরে । মা-বাবা-দিদির ভালবাসা তো আছেই । কিন্তু, কোথাও গিয়ে যেন সব্যর ভালবাসা ঐন্দ্রিলার বেঁচে থাকার শক্তি জোগাচ্ছে বারবার । ঐন্দ্রিলার মা নিজে জানিয়েছিলেন সব্যর ডাকে সাড়া দিচ্ছেন ঐন্দ্রিলা ।
যে প্রেম, ভালবাসা নিয়ে এত চর্চা চলছে সোশ্যাল মিডিয়া, তার শুরু কোথায় জানেন ? কালার্স বাংলার 'ঝুমুর' ধারাবাহিকের মাধ্যমে টেলিভিশন জগতে পা রাখেন ঐন্দ্রিলা শর্মা । এই ধারাবাহিকে তাঁর বিপরীতে ছিলেন সব্যসাচী চৌধুরী । সেখান থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও গভীর হয় প্রেম । তারপর তাঁদের গল্প কম-বেশি সকলেরই জানা । সব্যসাচীর সঙ্গে আলাপ হওয়ার আগে একবার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন অভিনেত্রী । তখন বয়স ১৭ । মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করে জিতে গিয়েছিলেন । তারপরই বিনোদন জগতে পা রাখা অভিনেত্রীর । আর সব্যসাচীর তারঁ জীবনে আসা । যদিও, সেইসময় তাঁদের প্রেম সেভাবে চর্চায় ছিল না বললেই চলে ।
২০২১ । ততদিনে 'জিয়নকাঠি' ধারাবাহিক করে বেশ জনপ্রিয় ঐন্দ্রিলা । 'বামাক্ষ্যাপা' করে সব্যসাচীও তখন জনপ্রিয়তা পেয়েছে । চুটিয়ে দু'জনে প্রেম করছেন । কিন্তু,সেই সুখ বেশিদিন সহ্য হল না । আবার ঐন্দ্রিলার শরীরে বাসা বাঁধল ক্যানসার । এবারের লড়াইটা ছিল আরও কঠিন । তবে,ঐন্দ্রিলার একার লড়াই ছিল না । এবারের লড়াইয়ে সবসময় তাঁর 'জিয়নকাঠি' হয়ে সঙ্গে থেকেছেন সব্যসাচী । সেই লড়াইয়ের বিভিন্ন মুহূর্তে ছবি এখন নতুন করে ভাইরাল হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় । সম্প্রতি, এক ছবি ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যাচ্ছে হাসপাতালের বেডে শোয়া ঐন্দ্রিলাকে খাইয়ে দিচ্ছেন সব্যসাচী । কিংবা মাঝরাতে অসুস্থ ঐন্দ্রিলার নাচ করার ইচ্ছা পূরণ, জীবনের ওঠা-নামা, হাসি কান্নায় দুজন দু'জনের পাশে থেকেছেন সবসময় ।
দ্বিতীয়বার ক্যানসারকে জয় করে ফিরে আসেন ঐন্দ্রিলা । শুরু হয় আবার নতুন করে পথ চলা । সেই লড়াইয়ের গল্প বারবার ঐন্দ্রিলার মুখে শোনা গিয়েছে, কখনও 'দিদি নম্বর ওয়ান'-এ, কখনও আবার 'দাদাগিরি'-তে । আর তাঁর সেই গল্পে রয়েছে সব্যসাচী, যাঁর ভালবাসায় বাঁচার ইচ্ছা দ্বিগুন হয়েছে বারবার । ঐন্দ্রিলা বলেছেন, "আমার দ্বিতীয় দিনের কেমো চলছে । আমি তখন চোখ বন্ধ করে আছি । হঠাৎ চোখ খুলে দেখি ও আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । চোখ খুলেই ওর মুখটা দেখলাম । একটা অদ্ভুত শান্তি অনুভব করলাম ।' ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচীর ভালবাসা এমনই ।
সব্যসাচীরও সুখ-দুঃখে সবসময় পাশে থেকেছেন ঐন্দ্রিলা । ব্রেন স্ট্রোকের আগেই 'ভালবাসার' জন্মদিন সেলিব্রেট করেছিলেন অভিনেত্রী । তখনও ভেবেছিলেন কি তাঁর জীবনে আরও একটা অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে ? এ অন্ধকার আরও গভীর । কিন্তু, কবি গুরুর কথায়, 'অন্ধকারের উৎস হতেই উৎসারিত আলো'। আলো আবার আসবে, সব্যসাচীর ভালবাসা যে তাঁর সঙ্গে আছে । দিন-রাত হাসপাতালেই ঐন্দ্রিলার সুস্থ হওয়ার আশায় রয়েছেন সব্য । অনেকে বলছেন, হাসপাতালের নিচে দোকান থেকে ম্যাগি খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন । হাসপাতালই হয়ে উঠেছে তাঁর ঘর-বাড়ি । ঐন্দ্রিলাকে ফিরিয়ে আনতেই হবে, তাঁরা যে একসঙ্গে স্বপ্ন দেখেছে আগামীর । তাঁদের প্রেম এভাবেই বেঁচে থাক,মানুষকে আরও ভালবাসতে শেখাক সব্যসাচী-ঐন্দ্রিলা ।