সুকুমার রায়ের সন্তান তিনি (Satyajit Ray)। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর নাতি। সাহিত্যের আবহমানকালের অনিবার্য ধারাটি যে সত্যজিতের (Satyajit Ray 101) রক্তে থাকবেই, এ তো সহজবোধ্য। কিন্তু, শুধু তো রক্ত-ই সব নয়। তার জন্য দরকার যে নিরলস সাধনা এবং সিনেমা (Satyajit Ray films) নামক মাধ্যমে সবটুকু দিয়ে দেওয়ার পরেও শিল্পের আরও এক জনপ্রিয় মাধ্যম সাহিত্যের (Satyajit Ray literature) জন্যেও নিজের মধ্যে বটগাছের বীজের মতো করে রেখে দেওয়া এক অদম্য প্যাশন। যার আঁচ দীর্ঘ কয়েকযুগ ধরে পরতে পরতে উপভোগ করে গিয়েছে বাংলাভাষার মননশীল পাঠক।
বাঙালির অতি প্রিয় গোয়েন্দা ফেলুদা (Feluda) থেকে বৈজ্ঞানিক প্রফেসর শঙ্কু কিংবা চিরকুমার ও মজলিশি তারিনীখুড়ো, প্রতিটি চরিত্রই তৈরি হয়েছে সততা, নির্লোভ ও আর অনুসন্ধিৎসু মননের বুনোটে। সত্যজিতের লেখার (Satyajit Ray literature) ছত্রে ছত্রে থাকে সাধারণ জ্ঞান, ইতিহাস থেকে বিজ্ঞানের সহজপাঠ। খুব সহজ সরল ভাষায় যিনি পাঠককে বুঝিয়ে গিয়েছেন বড় বড় দর্শন।
আরও পড়ুন: প্রতিভাকে সঠিকভাবে চিনতে পারার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল তাঁর ছবির জাদু
১৯৬৫ সালে 'ফেলুদা' (Feluda) সিরিজের প্রথম গল্প 'ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি' পত্রিকায় প্রকাশ হতেই তা পাঠক মহলে সমাদৃত হয়। ফেলুদা সিরিজের মোট ৩৫ টি সম্পূর্ণ ও চারটি অসম্পূর্ণ গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়। সিরিজের সমস্ত গল্পে ফেলুদাকে দেখা যায় বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা বা মগজাস্ত্রের উপর ভর করে জটিল থেকে জটিলতর রহস্যের জট খুলে দিতে। শুধু কলকাতার মধ্যে নয়, রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে, আবার কখনও দেশের সীমানা পেরিয়ে আবার কখনও অজ পাড়া গাঁয়ে।
আবার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, নির্লোভ, সৎ একজন মানুষ, জীবনের কোনও পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি সেই প্রোফেসর শঙ্কু চরিত্রের মাধ্যমে সত্যজিৎ (Satyajit Ray) নিত্য নতুন অভিযানের মাধ্যমে পাঠকের সামনে খুলে দেন কল্পবিজ্ঞানের এক অবাধ জগৎ। ১৯৬১ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম গল্প 'ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি'।
আরও পড়ুন: ক্যালেন্ডারের পাতায় সত্যজিৎ রায়ের অপু-দুর্গা থেকে ফেলুদা, অভিনব উদ্যোগ দে'জ মেডিক্যালের
তেমনি ষাট পেরোনো তারিণী খুড়ো। যুবক বয়স থেকে নানা ধরনের চাকরি করতে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার গল্প শোনান তারিণী খুড়ো শোনান বাচ্চাদের। সেখানে আবার পাঠকের (Legendary Satyajit Ray) কাছে উজাড় করে দেন ভূতের ও হাসির গল্পের ঝুলি। যার অধিকাংশ গল্পে দেখা যায় উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে কীভাবে একের পর আসন্ন বিপদকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন তারিণী খুড়ো।
এর সঙ্গেই রয়েছে সত্যজিতের লেখা (Satyajit Ray literature) অনবদ্য ছোটগল্পগুলিও। সেখানে যেমন রয়েছে 'খগম' বা 'সেপ্টোপাসের খিদে'র মতো হাড়হিম করে দেওয়া গল্প। তেমনই রয়েছে 'আর্যশেখরের জন্ম ও মৃত্যু'র মতো আন্তর্জাতিক মানের মনস্তাত্বিক গল্প। 'পিকুর ডায়েরি'র মতো জটিল গল্পে তিনি দেখিয়েছেন, একটি শিশুর মনেও বাবা-ময়ের সম্পর্ক কী নিদারুণ প্রভাব ফেলতে পারে।