বলিউডের সঙ্গে ক্রিকেট জগতের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে । সেটা শুধু আজ নয়, বহুদিনের । বর্তমানে যেমন অনুষ্কা-কোহলি কিংবা আথিয়া-রাহুল, তেমনই আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগের জনপ্রিয় জুটি শর্মিলা ঠাকুর ও মনসুর আলি খান পতৌদি । একজন বলি ডিভা আরেকজন ক্রিকেট জগতের টাইগার । সেইসময় দু' জনের প্রেম, সম্পর্ক বেশ চর্চিত ছিল । তাঁদের প্রেমের গল্প নাকি সিনেমার থেকে কিছু কম ছিল না । তবে, প্রথম দেখায় নাকি একেবারেই পতৌদির প্রেমে পড়েননি শর্মিলা । বলি সুন্দরীকে রাজি করাতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি টাইগারকে । শর্মিলাকে ইমপ্রেস করার জন্য তাঁকে পতৌদি প্রথম কী উপহার দিয়েছিলেন জানেন ? কীভাবে তাঁদের প্রেমে লেগেছিল বিয়ের রং জানেন ? আজ শর্মিলা ও টাইগার পতৌদির প্রেমের গল্পের সেরকমই কিছু অজানা কাহিনী তুলে ধরা হল ।
শর্মিলা ও মনসুর পতৌদির সম্পর্ক নিয়ে একসময় নানারকম মন্তব্য উড়ে এসেছিল । অনেকেই বলেছিলেন, তাঁদের সম্পর্ক টিকবে না, বিয়ে ভেঙে যাবে । কিন্তু, সেসব ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে তাঁদের গভীর প্রেম, ভালবাসা । বরং শর্মিলা ও পতৌদির প্রেম অনেকের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ।
কীভাবে শুরু হল তাঁদের প্রেম ?
ক্রিকেটের ভক্ত ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর । কিন্তু, বলিউড, সিনেমা...এসবে খুব একটা আগ্রহ ছিল না টাইগার পতৌদির । এমনকী, শর্মিলাকে চিনতেনই না । অবশ্য শর্মিলাও পতৌদির সম্পর্কে জানতেন না । ১৯৬৫ সালের কথা । এক অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল দু'জনের । আর প্রথম দেখাতেই শর্মিলার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন টাইগার পতৌদি । নিজের মনের কথাও জানিয়েছিলেন । কিন্তু, শর্মিলা প্রথমে একেবারেই নাকি পাত্তা দেননি । এরপরই অভিনেত্রীকে নানারকমভাবে 'ইমপ্রেস' করার চেষ্টা শুরু করেছিলেন পতৌদি ।
শর্মিলার সঙ্গে আলাপ আরেকটু জমিয়ে তোলার জন্য একদিন তাঁর বাড়িতে ৫ খানা ফ্রিজ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মনসুর আলি খান । তাঁর এমন কাণ্ডে কিছুটা অবাক আর রাগও করেছিলেন শর্মিলা । ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ফ্রিজগুলি । কিন্তু, রাগটা বেশিদিন আর স্থায়ী হয়নি । এই ঘটনার কয়েকদিনের মধ্যে ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন শর্মিলা । সেই ম্যাচে ইংল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে ২০০ রান অর্থাৎ ডবল সেঞ্চুরি করেছিলেন টাইগার পতৌদি । ব্যস আর কী, সেখানেই পতৌদির প্রেমে ক্লিন বোল্ড হয়ে যান শর্মিলা । টাইগারের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন । এরপর দু'জনে প্রথম দেখা করেছিলেন কলকাতায় । আর তারপর থেকেই শুরু দু'জনের রূপকথার গল্প । টাইগারের প্রেমসাগরে ডুব দিয়েছিলেন শর্মিলা । একবার যখন টাইগার তাঁর দলের সঙ্গে আহমেদাবাদ যাচ্ছিলেন, শর্মিলা তাঁকে বিদায় জানাতে গাড়িতে পালওয়াল থেকে দিল্লি পৌঁছেছিলেন ।
প্যারিসে শর্মিলাকে প্রপোজ
টাইগার মনে মনে ঠিকই করে নিয়েছিলেন, শর্মিলাকেই বিয়ে করবেন । তাই শর্মিলাকে প্রপোজ না করেই মায়ের সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যান ও জানিয়ে দেন তাঁরা বিয়ে করছেন । কিন্তু, শর্মিলা বিয়ে করতে চান কি না, সেটা জানতেই চাননি । কিন্তু শর্মিলা চেয়েছিলেন, তাঁকে অফিশিয়ালি প্রোপোজ করুক টাইগার পতৌদি । সেই বিষয়ে তিনি পতৌদিকে জানিয়েওছিলেন । তখন ১৯৬৯ সাল । প্যারিসে, 'অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস' সিনেমার শুটিং করছিলেন শর্মিলা । আর পতৌদি কিছু না জানিয়েই পৌঁছে গিয়েছিলেন প্যারিস । শর্মিলার ইচ্ছামতোই প্রেমের শহরে মাঝ রাস্তায় অভিনেত্রীকে বিয়ের জন্য প্রোপজ করেছিলেন টাইগার পতৌদি । সঙ্গে সঙ্গে 'সম্মতি' তো দিয়েইছিলেন শর্মিলা, কিন্তু শোনা যায়, একটা শর্তও রেখেছিলেন ।
কী শর্ত ছিল ?
শর্মিলা বলেছিলেন, কোনও ম্যাচে পরপর তিনটে ছক্কা মারলে, তবেই তিনি মনসুরকে বিয়ে করবেন । টাইগারও মেনে নিয়েছিলেন সেই শর্ত ।
দু'জনের প্রেমের গল্পের আরও একটা অজানা আর মজার কাহিনী আছে । শর্মিলা উর্দু জানতেন না, এটা টাইগারও জানতেন । একদিন শর্মিলাকে কবিতা শুনিয়েছিলেন টাইগার । উর্দু কবিতা । আর বলেছিলেন, এটা তিনি শর্মিলার জন্য লিখেছেন । শুনে তো খুবই খুশি হয়েছিলেন শর্মিলা । এমনকী, শ্যুটিং চলাকালীন তিনি ফিরোজ খানকে কথাটা জানিয়েও ছিলেন । তখন ফিরোজ খান তাঁকে বলেন, টাইগার তাঁকে মিথ্যা বলেছে, এটা আসলে মির্জা গালিবের লেখা ।
ব্যস আর কী, এই ছোটখাটো ঘটনা, মিষ্টি মুহূর্তে মধ্যে দিয়ে তাঁদের প্রে, ভালবাসা আরও গভীর হয়েছে । এরপর তাতে রং লাগে বিয়ের । আর তাঁদের এই মিষ্টি প্রেমের গল্প চিরকালের মতো গেঁথে রয়ে যায় সকলের মনে ।