সালটা ২০২০ । করোনা আতঙ্ক তখন ধীরে ধীরে জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে দেশে । সেইসময়, সেই বছরই আরও একটা খারাপ খবরে থমকে গিয়েছিল গোটা দেশ । ১৪ জুন । টিভির পর্দায়, মোবাইল স্ক্রিনে যখন জ্বলজ্বল করছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের ছবিটা, আর নীচে লেখা ছিল বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ । এক মুহূর্তের জন্য নিজের চোখকে, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেননি অনেকেই । সুশান্ত কি আত্মহত্যা করেছিলেন ? নাকি পরিকল্পিত খুন ? নাকি আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া হয়েছিল ? মুম্বই পুলিশের দাবি করল, সুশান্ত আত্মহত্যা করেছেন । কিন্তু, পরিবার দাবি করল, অভিনেতা আত্মহত্যা করেননি, করতে পারেন না । সবটাই ষড়যন্ত্র । সুশান্তের মৃত্যু মামলায় নাম জড়াল অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীর । ওই ঘটনায় মাদকযোগের অভিযোগ উঠে আসে । আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হন রিয়া । গ্রেফতার হন তাঁর ভাইও । তারপর একমাস কারাবাস, পরে জামিনে মুক্তি । সম্প্রতি, সুপ্রিম কোর্টও রেহাই দিয়েছে অভিনেত্রীকে ।
২০২০ সালেই সুশান্তের মৃত্যুর ঘটনায় পটনায় একটি মামলা দায়ের করে অভিনেতার পরিবার । অভিনেতার মৃত্যুর যথাযথ তদন্তের দাবি জানানো হয়। মৃত্যুর তদন্তের দায়ভার দেওয়া হয় CBI-কে । তদন্তে নেমে রিয়া ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করেছিল বম্বে হাইকোর্ট । যা বাতিল করে দেয় বম্বে হাইকোর্ট । সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায় মামলা । কিন্তু, দেশের শীর্ষ আদালত বম্বে হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রেখেছে । একইসঙ্গে সিবিআইকে ভর্ৎসনাও করেছে সুপ্রিম কোর্ট ।
কী বলেছে সুপ্রিম কোর্ট ?
সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কেবলমাত্র হাই প্রোফাইলের মামলা হওয়ার কারণে রিয়া চক্রবর্তী এবং তাঁর পরিবারের পক্ষে বম্বে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানানো যায় না । শুধু তাই নয়, সুশান্ত মৃত্যু মামলায় নাম জড়ায় রিয়ার ভাই শৌভিক চক্রবর্তী ও বাবা ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তীর । সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি আর গভাই ও কে ভি বিশ্বনাথন তাঁদের নির্দোষ ঘোষণা করেন ।
২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল । গত চার বছরে সুশান্ত মৃত্যু মামলায় কোনও নতুন তথ্য উঠে আসেনি । তবে, সুশান্তের মৃত্যু মামলায় নাম জড়িয়ে রিয়াকে কম কটাক্ষের শিকার হতে হয়নি । সুশান্তের মৃত্যু, রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গ্রেফতারি থেকে ধীরে ধীরে রিয়ার কামব্যাক...টাইমলাইনে চোখ রাখা যাক
সুশান্ত সিং রাজপুতের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন রিয়া । বান্দ্রার ফ্ল্যাটে একসঙ্গেই থাকতেন রিয়া, সুশান্ত । কিন্তু, অভিনেতার মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগেই নাকি ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আসেন রিয়া । সুশান্তের মৃত্যুর পর ফ্ল্যাটেও গিয়েছিলেন অভিনেত্রী । কিন্তু, রিয়ার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ তোলেন সুশান্ত ।
২০২০ জুলাই মাসে রিয়া ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে পটনায় একটি মামলা দায়ের করে সুশান্তের পরিবার । আত্মহত্যার প্ররোচনা, অন্যায়ভাবে আটকে রাখা, প্রতারণার অভিযোগ তোলা হয় ।
২০২০ সালের অগাস্ট মাস । সুশান্তের মৃত্যুর ঘটনায় অর্থ পাচারের তদন্ত শুরু করে ইডি । বেশ কয়েকবার রিয়া ও তাঁর ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় । ওই মাসেই সুশান্ত মৃত্যু মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের কাছে । মাদকপাচারের যোগও উঠে আসে সুশান্তের মৃত্যু মামলায় ।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস । সুশান্তকে মাদক পাচারের অভিযোগে রিয়াকে গ্রেফতার করে এনসিবি । রিয়াকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রাখা এক মাস । পরে তাঁর জামিন মঞ্জুর করে বোম্বে হাইকোর্ট । জামিনে মুক্তি পাওয়ার আগের দিন নাকি জেলের মধ্যেই নাচ গান করে সকলকে আনন্দ দিয়েছিলেন সুশান্তের চর্চিত প্রেমিকা। এমনকি মিষ্টিও খাইয়েছিলেন সকলকে । কিন্তু, ওই একটা ঘটনা রিয়াকে শারীরিক, মানসিক সব দিক থেকে প্রভাবিত করেছিল । জেল থেকে বাইরে আসার পর থেকে তাঁকে নিয়ে ট্রোলিং শুরু হয় । তাঁকে 'খুনি' নামে দেগে দেওয়া হয় । 'ডাইনি' তকমাও দেওয়া হয় । মানসিক অবসাদেও ভুগছিলেন দীর্ঘদিন । এতবড় অপমানের বোঝা কাঁধে নিয়ে কখনও সেবিষয়ে খুব একটা মুখ খোলেননি । একটা সময় নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন সব কিছুর থেকেই ।
২০২৩ সালে কামব্যাক হয় রিয়ার । এমটিভি রোডিজ-এর গ্যাং লিডার হয়ে প্রত্যাবর্তন করেন রিয়া । MTV থেকেই রিয়ার পথচলা শুরু হয়েছিল। আবার সেখান থেকেই পথ চলা শুরু হয় ।
অতীতের সমস্ত মন খারাপ ভুলে নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছেন রিয়া ৷ প্রথমে বান্টি সজদেব-এর সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল রিয়া-র । এখন আবার নিখিল কামাথের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে অভিনেত্রীকে । কখনও চর্চিত প্রেমিক নিখিলের বাইকের পিছনে চেপে, কখনও একসঙ্গে মুম্বইয়ের রাস্তায় ক্যামেরাবন্দী হয়েছেন দু'জনে ।