ঐন্দ্রিলার লড়াই থেমে গেল বড্ড তাড়াতাড়ি। সদ্য ফোটা একটা ফুল ঝরে গেল অকালেই। সদ্য প্রয়াত অভিনেত্রীর গল্পটা এখন কম বেশি সকলেরই জানা। আট থেকে আশি সকলের মুখে ঐন্দ্রিলার লড়াইয়ের কথা। আর তারই সঙ্গে ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচীর কথা। ঐন্দ্রিলা শর্মা-সব্যসাচী চৌধুরী। টেলিপাড়ায় একটু কান পাতলেই শোনা যেত, ওরা সম্পর্কে আছেন। শুধু এটুকু বললে আসলে কিছুই বলা হয় না। ওরা বন্ধুত্বে ছিলেন, প্রেমে ছিলেন, ভালবাসায় ছিলেন। যে ভালবাসা আজকের দিনে বিরল, তেমনই একটা গল্প ছিল ওঁদের।
জীবনের ওঠাপড়াগুলোয় ওঁরা হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে ছিলেন। ছিলেন বেঁধে বেঁধে। বিগত কয়েকদিনে, ওদের গল্প ছিল সবার মুখে মুখে। ঐন্দ্রিলার লড়াই যতটা ওঁর ততটাই সব্যসাচীর, শেষ পর্যন্ত। দ্বিতীয়বার অভিনেত্রীর শরীরে যখন ক্যানসার বাসা বাঁধল, ততদিনে তাঁর জীবনে সব্যসাচী এসে গেছেন। ঐন্দ্রিলার যন্ত্রণা ভাগ করে নিয়েছেন সব্যসাচী। ঐন্দ্রিলার মতো হাসপাতাল হয়ে উঠেছিল সব্যসাচীরও ঘরবাড়ি। ঐন্দ্রিলার মন ভাল রাখার দায়িত্বটুকু নিজের কাঁধেই নিয়ে নিয়েছিলেন। এবারেও তাই। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর ঐন্দ্রিলার সংজ্ঞা কখনই ফেরেনি পুরোপুরি। আচ্ছন্ন থাকতেন। বন্ধুর সঙ্গে অবিরাম গল্প করে যেতেন সব্যসাচী। যদি, কখনও সাড়া দেন, যদি চিনতে পারেন, সেই প্রতীক্ষায়।
জীবনের সুখে আনন্দে ব্যথায় যন্ত্রণায় দুজনের ভাগ ছিল সমান সমান। কারোর কম নয়, কারোর বেশি নয়। সব্যসাচী গল্প লিখতেন, সে গল্পের প্রথম শ্রোতা হতেন ঐন্দ্রিলা, বরাবর। জীবনের পথে চলার ঐন্দ্রিলার যতবার হাঁফ ধরত, গতি কমিয়ে নিতেন সব্যসাচী। এবারের গল্পটা সামান্যই আলাদা। এবার বন্ধু বড় বেশি হাঁপিয়েছে, সব্যসাচীর গল্প শোনার জন্যেও আর ওঠা হবে না ঐন্দ্রিলার। কিন্তু গল্প তো থামবে না। ওঁদের গল্পও শেষ হবে না। এ রূপকথায় নটে গাছ মুড়োবে না কোনও দিন।