মৃণাল সেন । এই নামেই রয়েছে যেন একটা যুগ,যে যুগে এক অন্য কলকাতাকে দেখেছেন বাংলার মানুষরা । কলকাতার ভিতরের জরাজীর্ণ হাড়পাঁজর মৃণাল সেনের ছবিতে ভেসে উঠেছে বারবার । দর্শকরা উপহার পেয়েছেন 'রাতভোর', 'বাইশে শ্রাবণ', 'পদাতিক' -এর মতো কিছু কালজয়ী সৃষ্টি । শিল্পীর মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু তাঁর শিল্প আজও বেঁচে, আজও একই রকমভাবে প্রাসঙ্গিক । ১৪ মে মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকী । বিশেষ দিনে 'সংলাপের জাদুকর', সাহসী ও নিপুণ পরিচালককে এডিটরজি বাংলার তরফ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্য ।
জানা গিয়েছে, সিনেমার ক্ষেত্রে কোনও রকমের আড়ম্বর পছন্দ ছিল না তাঁর । কম খরচেই ছবি বানাতেন । সঙ্গীতের ব্যবহারও কম থাকত । একেবারে অন্য ধারার ছবি তৈরি করতেন তিনি । ছেলে কুণাল সেন জানিয়েছেন, খুব সংবেদনশীল এবং সৎ মানুষ ছিলেন মৃণাল সেন । তবে সংসারের বিষয়ে উদাসীন । কাজ নিয়েই থাকতেন তিনি । শুধু বাংলা নয়, হিন্দি, ওড়িশা, তেলুগুতে সিনেমা বানিয়েছেন । পরবর্তী সময়ে দূরদর্শনের জন্য ১২টা শর্ট ফিল্ম বানিয়েছিলেন।
মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ মে যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখনও দেশ পরাধীন। মাথার ওপর ছিল প্রায় দেড়শো বছরের ঔপনিবেশিকতার চাপ। জন্ম থেকে জীবনের প্রথম দিকটা কাটে ফরিদপুরের ছোট মফস্সল শহরে, যা আজ বাংলাদেশের অন্তর্গত। স্বাধীনতা অর্জনের পর বহু বছর ধরেই সিনেমায় আধুনিকতার নিরিখ কী, এক নাগাড়ে খুঁজে বেড়িয়েছেন তিনি। আসলে খুঁজে বেড়িয়েছেন নিজের জমি। যে জমির মাটি একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়েছে 'বাইশে শ্রাবণ' থেকে 'অন্তরীণ', 'কলকাতা ৭১' থেকে 'ইন্টারভিউ', 'ভুবন সোম' থেকে 'পদাতিক'-এ।
টেলিফিল্ম, শর্টফিল্ম এবং ডকুমেন্টারি বাদ দিলে তাঁর পূর্ণদৈর্ঘ্যের ফিচার ফিল্মের সংখ্যা সাতাশ। বিদেশে, বিশেষ করে রাশিয়া ও ফ্রান্সে যেমন সম্মানিত, তেমনই রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন, পেয়েছেন পদ্মভূষণ, অর্জন করেছেন ভারতীয় সিনেমার সর্বোচ্চ উপাধি 'দাদাসাহেব ফালকে'। প্রয়াত হন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। স্ত্রী গীতা সেনের প্রয়াণের এক বছর বাদেই।