কেউ তাঁকে বলেন 'সংলাপের জাদুকর', কেউ বলেন 'পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখানো সবথেকে বলিষ্ঠ চোখ', কারও কাছে আবার তিনি ক্যামেরার লেন্সে দুনিয়াদারিতে এক সাহসী ও নিপুণ পরিচালক। তিনি, মৃণাল সেন, আসলে এই সবটা নিয়েই। আজ তাঁর জন্মদিন। বেঁচে থাকলে জন্মশতবর্ষে প্রবেশ করা হত তাঁর। কিন্তু, তিনি যে চিরকালীন! প্রথম ছবি 'রাতভোর' থেকে শেষ ছবি 'আমার ভুবন' পেরিয়েও যাঁর মনন ও কাজের বিস্তার দিগন্তবিস্তৃত। সত্যজিৎ রায়ের মতো গোড়া থেকেই ধ্রুপদী সাহিত্য বা সাহিত্যিককে নিজের ফিল্মের আশ্রয় করে তোলেননি তিনি। বরং সত্যজিতের সৃজন-ভাবনার বিপরীত বিন্দু থেকেই তাঁর ছবি করা শুরু।
মৃণাল সেন ১৯২৩ সালের ১৪ মে যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখনও দেশ পরাধীন। মাথার ওপর ছিল প্রায় দেড়শো বছরের ঔপনিবেশিকতার চাপ। জন্ম থেকে জীবনের প্রথম দিকটা কাটে ফরিদপুরের ছোট মফস্সল শহরে, যা আজ বাংলাদেশের অন্তর্গত। স্বাধীনতা অর্জনের পর বহু বছর ধরেই সিনেমায় আধুনিকতার নিরিখ কী, এক নাগাড়ে খুঁজে বেড়িয়েছেন তিনি। আসলে খুঁজে বেড়িয়েছেন নিজের জমি। যে জমির মাটি একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়েছে 'বাইশে শ্রাবণ' থেকে 'অন্তরীণ', 'কলকাতা ৭১' থেকে 'ইন্টারভিউ', 'ভুবন সোম' থেকে 'পদাতিক'-এ।
টেলিফিল্ম, শর্টফিল্ম এবং ডকুমেন্টারি বাদ দিলে তাঁর পূর্ণদৈর্ঘ্যের ফিচার ফিল্মের সংখ্যা সাতাশ। বিদেশে, বিশেষ করে রাশিয়া ও ফ্রান্সে যেমন সম্মানিত, তেমনই রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন, পেয়েছেন পদ্মভূষণ, অর্জন করেছেন ভারতীয় সিনেমার সর্বোচ্চ উপাধি ‘দাদাসাহেব ফালকে’। প্রয়াত হন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। স্ত্রী গীতা সেনের প্রয়াণের এক বছর বাদেই।