চলতি বছরের জুলাই মাস । হঠাৎ স্টুডিওপাড়ায় হইচই । ডিরেক্টর্স গিল্ড বনাম ফেডারেশন । দিনের পর দিন চলে যাচ্ছে । সমস্যার সমাধান হচ্ছে না । শুটিং ফ্লোরে অভিনেতারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা গিয়ে বসে থাকছেন । কিন্তু,টেকনিশিয়নদের দেখা নেই । ফেডারেশনের আচরণে ক্ষুব্ধ হলেন পরিচালকরাও । শুরু করলেন কর্মবিরতি । বন্ধ হয়ে গেল শুটিং । স্টুডিওপাড়ায় বন্ধ হল লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন । শুটিং বন্ধ হতেই চিন্তায় পড়ে যান সিরিয়াল, সিনেমার কলাকুশলীরা । অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে দু'দিনের মধ্যে জট কাটে । আবারও আগের মতোই শুটিং শুরু হয় । কিন্তু, জট কি সত্যিই কেটেছিল ? প্রশ্ন উঠছে নতুন করে । সম্প্রতি, ডিরেক্টর গিল্ডসের তরফে একটি সাংবাদিক বৈঠক করা হয় । সেখানেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ চক্রবর্তীরা । তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ৬ মাস হয়ে গেলেও কোনও সমস্যার সমাধান হয়নি । এমনকী, বাধ্য হয়ে আইনের দ্বারস্থ হতে হয়েছে তাঁদের ।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, কোন সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, দিব্যি সিরিয়াল-সিনেমার শুটিং চলছে । বিষয়টা একটু খোলসা করেই বলা যাক । সম্প্রতি, ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ করে, সমস্যা মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন । নভেম্বরেই সেই কমিটির রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু রিপোর্ট তো দূরের কথা, সেই কমিটি পর্যন্ত গঠন করা হয়নি । সেকারণেই আইনের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন তাঁরা ।
কেন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা তো সকলেই জানেন । তাও আরেকবার স্মৃতিচারণ করা যাক । ফেডারেশনকে না জানিয়ে বাংলাদেশে শুটিং করার অভিযোগ উঠেছিল রাহুল মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে । পরিচালকের উপর তিন মাসের কর্মবিরতি জারি করা হয়েছিল । কিন্তু, সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ডিরেক্টর্স গিল্ড । সেইমতো রাহুল শুটিং ফ্লোরেও গিয়েছিলেন । কিন্তু, টেকনিশয়নরা তাঁকে বয়কট করেন । ফেডারশনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় রাহুলের উপস্থিতিতে শুটিংয়ে কোনও টেকনিশিয়ান উপস্থিত থাকবেন না । তারপরই কর্মবিরতি, দফায় দফায় বৈঠকের পরও জট কাটে না । মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন তাঁরা । তারপর তিনি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন ।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুদেষ্ণা রায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সুব্রত সেন, অনির্বাণ চক্রবর্তী,পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরি, জয়দীপ মুখোপাধ্যায়রা । তাঁরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী যে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেখানে থাকার কথা ছিল প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, গৌতম ঘোষ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ইন্দ্রনীল সেন । পরিচালকদের সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, মামলার সমস্ত কাগজপত্র দিল্লিতে 'কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া'-র কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা । ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে ।
সুদেষ্ণা রায়ের অভিযোগ, কমিটি গঠন নিয়ে কোনও নোটিফিকেশনও এখনও হয়নি । তাঁদের লড়াই কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং যে অনিয়ম ও বেআইনি কাজ চলছে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদই তাঁদের লক্ষ্য । পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট জানালেন, যা হবে আইনি পথে । মৌখিক ভাবে আর কিছুই হবে না । তাঁর আরও অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে মাথাব্যথা নেই রাজ্য সরকারেরও।
এদিকে, আরও একটা প্রশ্ন উঠছে, টলিউডের এই পরিস্থিতির প্রভাব কি কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে পড়বে । কয়েকদিন আগে এমনও গুঞ্জন ছড়িয়েছিল চলচ্চিত্র উৎসব বয়কট করছেন পরিচালকরা । ৪ ডিসেম্বরই কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হয় । এই আবহে পরমব্রত জানিয়ে দেন উৎসবের সঙ্গে পরিচালক সংগঠনের কোনও বিরোধ নেই। ফলে, বয়কটেরও কোনও প্রশ্ন নেই । সুদেষ্ণা রায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য-সহ সব পরিচালকদের গলাতেও একই সুর শোনা যায় ।
কিন্তু, ঘুরে ফিরে আরও একটা আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে । পরিচালকদের আইনি সিদ্ধান্তের পর কি বড় কোনও পদক্ষেপ করবে ফেডারেশন ? দুই সংগঠনের মধ্যে কি বিরোধ চরমে পৌঁছবে ? ফের শুটিংয়ে প্রভাব ফেলবে ? উত্তর দেবে সময়ই ।