২৪ জুলাই । আজ আপামোর বাঙালির মন খারাপের দিন । শ্রাবণের এমনই এক বৃষ্টিমুখর দিনে 'উত্তম'-হারা হয়েছিল বাংলা, বাংলা সিনেমার জগত । উত্তম প্রয়াণে কেঁদেছিলেন আপামোর বাঙালি । সালটা ছিল ১৯৮০ । তারপর কেটে গিয়েছে ৪৪ বছর । বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে বহু অভিনেতা এসেছেন, কিন্তু উত্তম কুমারের (Uttam Kumar) জায়গা কেউ নিতে পারেননি । কারণ তিনি যে 'মহানায়ক'। বর্তমান যুগের নায়কদের মতো সিক্স প্যাকস, মাশেল হয়তো ছিল না, কিন্তু তাঁর সেই ভুবনভোলানো হাসি,চোখের চাহনি, তুফান তোলে নারী-মনে । উত্তমকুমার আজও 'রোম্যান্টিসিজম'-এর শেষ কথা । এত বছর কেটে গেলেও এখনও উত্তমে মুগ্ধ আট থেকে আশি । মৃত্যুবার্ষিকীতে জেনে নেওয়া যাক, উত্তম কুমার সম্পর্কে অজানা এক তথ্য ।
১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই প্রয়াত হন উত্তমকুমার । জানেন কি, মৃত্যুশয্যায় উত্তম কুমারের শেষকথাগুলো কী ছিল ?
জানা গিয়েছে, মৃত্যুর আগে কয়েক বছর শ্বাসের সমস্যাজনিত কারণে ভুগছিলেন । হাসপাতালে প্রায়ই চিকিৎসার জন্য যেতেন । ডা. সুনীল সেন-কে বারবার বলতেন, 'আমাকে বাঁচান' । চিকিৎসকরা তাঁকে বারবার জীবনযাত্রার ধরন বদলানোর জন্য বলতেন । চেষ্টা হয়তো করতেন, পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, নিয়মিত ওষুধও খেতেন । কিন্তু, ভাগ্যের লিখন কেই বা খন্ডাতে পারে ।
২৩ জুলাই ১৯৮০ । সলিল দত্ত পরিচালিত ওগো বধূ সুন্দরী-র শেষ দিনের শুটিং চলছিল তখন। সে দিন একটু বেশিই অন্যমনস্ক ছিলেন । শেষ দৃশ্যের শুটিংয়ের সময়ই হাতটা বুকে চলে যায় উত্তম কুমারের । তখনই হার্ট অ্যাটাক হয় অভিনেতার । কিন্তু তিনি বুঝতে দেননি । ঠিক ওভাবেই বুকে হাত রেখে এমনভাবে অভিনয় করলেন যে, কেউ ধরতেই পারবেন না যে তাঁর হৃদয়জুড়ে তোলপাড় হচ্ছে ।
শুটিং সেট থেকেই উত্তম কুমারকে নিয়ে যাওয়া হল বেলভিউ নার্সিংহোমে । জানা গিয়েছে, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনটি হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর । মহানায়ককে বাঁচাতে তখন একটা ইনজেকশনের প্রয়োজন ছিল । কিন্তু, সারা কলকাতা শহর তন্ন তন্ন করে ঘুরেও সেই ইনজেকশন পাওয়া যায়নি । মৃত্যুশয্যায় শুয়ে চিকিৎসক সুনীল সেনের হাত ধরে কাতর কণ্ঠে উত্তম কুমার বারবার অনুরোধ করেছিলেন, 'আমাকে বাঁচান' । শেষপর্যন্ত চেষ্টা করেও কথা রাখতে পারলেন না কেউ । আর সময়ও দিলেন না অভিনেতা । এত অভিমান ? চলে গেলেন উত্তম কুমার ।
২৪ জুলাই গিরিশ মুখার্জী রোডের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় দেহ । মৃত্যুর খবর শুনেই উত্তম কুমারের বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন তাঁর সতীর্থরা । আর মহানায়ককে চোখের জলে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ছুটে এসেছিলেন । মহানায়কের প্রতি আবেগ আর ভালোবাসা দেখেছিল বাংলা । জনতার স্রোত দেখেছিল বাংলা । জনতার সমুদ্র আটকাতে গিয়ে পুলিশ আক্রান্ত হয় । কিন্তু সমুদ্রকে কি আটকানো যায় ?
জানেন কি সুচিত্রা সেনকে শেষবারের মতো একবার দেখতে চেয়েছিলেন উত্তম কুমার । কিন্তু, তাঁর শেষ ইচ্ছে অপূর্ণ থেকে যায় । শুটিংয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন সুচিত্রা সেন, তিনি আর সময় দিয়ে উঠতে পারেননি । শেষ ইচ্ছে অপূর্ণই থেকে যায় উত্তম কুমারের । তবে শেষ একবার মুখোমুখি হয়েছিলেন উত্তম-রমা । উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর । প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে শেষ দেখা করতে রোদচশমা পরে গিয়েছিলেন সুচিত্রা । মালাও দেন উত্তমকে । ওই শেষবার । তারপর উত্তমের চলে যাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই নিজেকে আড়াল করে নেন সুচিত্রা সেন ।