নিরালায়, নিঃসঙ্গ-একাকী !
গত ৫ অগাস্ট পরবর্তী সময় থেকে এটাই তাঁর জীবনে। মসনদ, রাজপাট সব হারিয়ে আজ তিনি নিঃস্ব। কিন্তু এখনও ফিরে আসার আগুন তাঁর মনের মধ্যে। তাই নতুন বাংলাদেশ গড়ার এখন স্বপ্ন দেখেন মুজিব-কন্যা। আর এই স্বপ্নের মধ্যেই ভারতের মাটিতে ১০০ দিন কাটিয়ে দিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত অগাস্ট মাসে ছাত্র আন্দোলনের জেরে পালাবদল হয়েছে বাংলাদেশে। ৫ অগাস্ট ভারতীয় সময় দুপুরে আন্দোলনের সামনে কার্যত মাথা ঝোঁকাতে হয়েছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। প্রশ্ন ছিল বাংলাদেশ ছেড়ে কোথায় যাবেন তিনি ? ওই সময় উঠে এসেছিল অনেক দেশের নাম। কিন্তু হাসিনার হেলিকপ্টার উড়েছিল দিল্লির দিকে। কলকাতার আকাশ হয়ে তাঁর উড়ান ল্যান্ড করেছিল হিন্ডোন এয়ারবেসে। এরপর...?
এই প্রশ্নের উত্তর সম্প্রতি খোঁজার চেষ্টা করেছিল ব্রিটিশ ব্রর্ডকাস্টিন কর্পোরেশন বা বিবিসি। তাঁদের দিল্লির প্রতিনিধি যোগাযোগ করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে। মন্ত্রকের এক কর্তা বিবিসির কাছে তিনটি ব্যাপারে দাবি করেছেন।
বিবিসিকে ওই কর্তা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর জন্য ততটুকুই নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে, যেটুকু না হলে নয়। হাসিনাকে ঘিরে রয়েছেন সাদা পোশাকের রক্ষীদের সঙ্গে কম্যান্ডো। এই কম্যান্ডো অবশ্য ভারতীয় সেনা বাহিনীর নয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, ঢাকঢোল পিটিয়ে বা ঘটা করে শেখ হাসিনাকে কোনও নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না। বরং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে গোপনীয়তাকে।
এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ওই কর্তার দাবি, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কোথায় এবং কীভাবে রয়েছেন তা ভীষণভাবেই গোপন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি হাসিনাকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া এবং তাঁর সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি যত সম্ভব এড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি মার্কিন মুলুকে পালাবদল হয়েছে। ডেম্যোক্রাটদের হারিয়ে ওয়াশিংটনকে ফের লাল করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন এই পালাবদলে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে বাংলাদেশও। বিশেষ করে, হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামি লিগ। কূটনৈতিক মহলের দাবি, আওয়ামি লিগকে এই স্বপ্ন হয়তো দিল্লি থেকে বসেই দেখিয়েছেন শেখ হাসিনার। কারণ, ট্রাম্পের জয়ের পরেই তাদের নেত্রী হাসিনার কথা উল্লেখ করে একটা বিরাট পোস্ট করেছিল আওয়ামি লিগ। এবং সেই পোস্টে উল্লেখ ছিল ট্রাম্পের সঙ্গে হাসিনার সম্পর্কের কথা।
গত ১০০ দিনে হাসিনাকে বাংলাদেশ ফেরত পাঠাতে বারবার দিল্লির কাছে অনুরোধ এসেছে ঢাকার দিক থেকে। হাসিনাকে হাতে পেতে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছে ইউনুস সরকার। দুর্নীতির তদন্তে জেলবন্দি আওয়ামি নেতা এবং দেশের প্রাক্তনমন্ত্রীরা।
এই পরিস্থিতিতে হাসিনাকে নিয়ে মুখে কুলুপ দিল্লির। কিন্তু জানেন কী, এই দিল্লিই ছিল একসময় মুজিব-কন্যার ঘর গেরস্থ। সেই বাড়ি ছিল লাজপৎ রোডের ইনার রিং রোডে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত এই বাড়ির ছিল হাসিনার ভারতের ঠিকানা। সেই বাড়ি এখন পরিণত হয়েছে হোটেলে।