ঘুরতে যাবেন, অথচ টিকিট কাটার সময় নেই হাতে! অথবা, মাত্র একদিন আগেই ঠিক হয়েছে বন্ধু বা কাছের মানুষরা মিলে ঘুরতে যাবেন ট্রেনে করে, কিন্তু, এসি কোচে টিকিট কী করে পাবেন বুঝতে পারছেন না?! কুছ পরোয়া নেহি! এইসব ক্ষেত্রে আপনার সময় বাঁচাতে ও টেনশন কমাতে রয়েছে ভারতীয় রেলের তৎকাল টিকিট বুকিং পদ্ধতি। তবে, এখানেও বেশ কিছু ফ্যাকড়া রয়েছে। তৎকাল বুকিং আছে মানেই আপনার টিকিট নিশ্চিত, এমনটা নয়! বেশ কিছু ধাপ পেরিয়ে তবেই নিশ্চিতভাবে হাতে আসতে পারে এই তৎকাল টিকিট! তবে, সেই কাজটাও করতে হবে অতি দ্রুতগতিতে! সকলের আগেই! নইলে হাতের একেবারে কাছে এসেও ফসকে যেতে পারে সুযোগ!
১৯৯৭ সাল। দেশের রেলমন্ত্রী তখন নীতীশ কুমার। ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রবল, অথচ টিকিট কাটার সময় নেই- এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। এছাড়া, খুব ইমার্জেন্সি পরিস্থিতির জন্য যখন টিকিটের প্রয়োজন হয়, তখনও কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রেনের টিকিট নিয়ে যারপরনাই ভোগান্তি সহ্য করতে হত রেলযাত্রীদের। সেই কষ্ট দূর করতেই তৎকাল টিকিটের সূচনা করে ভারতীয় রেল। দেশের সবধরনের দূরপাল্লার ট্রেনের সমস্ত শ্রেণীর যাত্রীদের জন্যই এই তৎকাল টিকিট চালু করা হয়।
এই তৎকাল পদ্ধতি শুরু হওয়ার পর কেটে গিয়েছে ২৭ বছর। অফলাইনের মতোই বহু বছরই চালু হয়েছে তৎকালের অনলাইন বুকিং-ও। তবে, এখনও তৎকাল টিকিট কাটা নিয়ে নানা ধোঁয়াশা রয়েছে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে। ঠিকঠাক পদ্ধতি না জানার ফলে তৎকালে টিকিট কেটেও নিশ্চিতভাবে হাতে টিকিট পান না অনেকেই।
কীভাবে হবে এই সমস্যার সমাধান? জেনে নিন!
IRCTC-র অফিশিয়াল ওয়েবসাইট (www.irctc.co.in.)-এ গিয়ে লগ ইন করে দ্রুত টিকিট কাটতে হবে। এখানে এই 'দ্রুত' শব্দটা খুব জরুরি। সামান্য দেরি হলেও আপনার টিকিট হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে!
যাওয়ার ঠিক আগেরদিন কাটতে হয় তৎকালের টিকিট। তবে তার জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে। ঠিক ওই সময়েই তৎকালের টিকিট কাটতে হবে। দিনের অন্য কোনও সময়ে কাটা যাবে না। এসি কামরার জন্য টিকিট পেতে হলে লগ ইন করতে হবে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে। আর যদি স্লিপারের টিকিট কাটতে হয়, তার জন্য ১০টা ৫৭ মিনিটে লগ ইন করতে হবে। লগ ইন করার পর কোন জায়গা থেকে কোন জায়গায় যাবেন, তা লিখে সাবমিট করতে হবে। তারপর, IRCTC-র তৎকাল বুকিং শুরু হওয়া মাত্রই বুক করে ফেলতে হবে নিজের টিকিটটি।
তৎকাল পদ্ধতিতে টিকিটের দাম সাধারণ টিকিটের দামের থেকে বেশি। ফার্স্ট ক্লাসে তৎকালে টিকিট বুক করতে হলে, সাধারণ টিকিটের চেয়ে ৩০ শতাংশ দাম বেশি নেয় IRCTC। সেকেন্ড ক্লাসের ক্ষেত্রে টিকিটের মূল্য অন্তত ১০ শতাংশ বেশি হয়।
তৎকালে বুকিং শুরু হওয়ামাত্রই টিকিট কেটে ফেললে নির্দিষ্ট কামরায় আপনার আসন নিশ্চিত। টিকিট বুক করাকালীন সময় যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্য সংশ্লিষ্ট যাত্রীদের নাম, বয়স-সহ বিস্তারিত তথ্য IRCTC ওয়েবসাইট বা অ্যাপে রেখে দিলে সুবিধা। এছাড়া, 'My Profile'-এ গিয়ে ড্রপডাউনের Master List-এ সম্ভাব্য যাত্রীদের নামের তালিকা তৈরি করা যায়। টিকিট না কাটলেও আগে থাকতে যাত্রীদের নাম, লিঙ্গ, বয়স, কেমন আসন ও কেমন খাবার পছন্দ, তা জানিয়ে রাখা যায়। আসলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টিকিট কাটার সময় নাম-ধাম লিখতে লিখতে অনেকটা সময়ে বেরিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই ঠাঁই মেলে ওয়েটিং লিস্টে।
একবার Log In করার পর আপনার ও আপনার সঙ্গীদের তথ্য নথিভুক্ত করলে ব্যবস্থা রয়েছে সেভ করে রাখার। একবার সেভ করে নিলে পরের বার থেকে আর নতুন করে একই তথ্য পূরণ করার প্রয়োজন হবে না। নিজে থেকেই পূরণ হয়ে যাবে যাবতীয় তথ্যগুলি। ফলে সরাসরি টাকা জমা করে দিলেই কেল্লাফতে।
টিকিটের দাম মেটানোর পদ্ধতির জন্যও যে সময় লাগে তা-ও বাঁচাতে পারবেন। কীভাবে? Online Card বা UPI-তে, যেভাবেই টাকা দিন না কেন, তা আগে থেকে নথিভুক্ত করে রাখার সুবিধা রয়েছে। তাছাড়াও ভাড়ার টাকা IRCTC-র ওয়ালেটে রেখে দেওয়া যায়। সেখান থেকে টাকা নিয়েই সঙ্গে সঙ্গে ভাড়ার টাকা মেটানো সম্ভব।