আরজি কর মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে ডিউটিরত মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় উত্তাল গোটা বাংলা। সোশ্যাল মিডিয়াতেও চলছে প্রতিবাদ। শহরজুড়ে ঘটনার তদন্তের দাবিতে নানা মিছিলে পথ হাঁটছেন শয়ে শয়ে মানুষ। এসবের মাঝে নানা প্রতিবাদ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেই নিগৃহীতা চিকিৎসকের নাম, ছবি সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে, যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে কি ভিক্টিমের পরিচয় প্রকাশ্যে আনা বৈধ? জেনে নেওয়া যাক এই বিষয়ে কী বলছে ভারতীয় দণ্ড বিধি।
ইন্ডিয়ান পিনাল কোড অনুযায়ী,যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে এমন কোনও পুরুষ বা মহিলার পরিচয় প্রকাশ্যে আনা যাবে না। এই আইন ভাঙলে শাস্তি স্বরূপ দু'বছরের কারাদণ্ড, বা জরিমানা অথবা দুই-ই হতে পারে।
২০১৮ সালে কাঠুয়া ধর্ষণ কাণ্ডে এই আইন ভাঙার কারণে ১২ টি সংবাদ সংস্থার প্রতিটিকে ১০ লক্ষ টাকা করে জরিমানা করেছিল দিল্লি হাইকোর্ট।
২০১৮ সালে, নিপুন সাক্সেনা ওই মামলায় রায়দান কালে বলেন "এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, সমাজে যৌন অপরাধ, বিশেষ করে ধর্ষণের শিকার যাঁরা, তাঁদের প্রতি অপরাধকারীর চেয়েও খারাপ ব্যবহার করা হয়। মামলার শুনানিতে একরকম স্বীকার করে নেওয়া হয়, ভারতের ফৌজদারি আইনে, সাক্ষীদের রক্ষা করার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। আর সেই কারণেই, নিগৃহীতা ও তাঁর পরিচয় সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত জরুরি।
তারপর এ বিষয়ে এক নিয়মাবলি পেশ করেন বিচারপতিরা, তাতে উল্লেখ করা হয়,
১)কোনও ভাবেই ছাপার অক্ষরে বা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে বা সোশাল মিডিয়ায় নির্যাতিতার নাম প্রকাশ্যে আনা যাবে না বা এমন কোনও তথ্য প্রকাশ করা যাবে না যা থেকে নির্যাতিতার পরিচয় জানতে পারা যায়
২) নির্যাতিতার মৃত্যু হলে বা তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে থাকলেও তাঁর নাম প্রকাশ করা যাবে না। এমনকি তাঁর আত্মীয় পরিজন অনুমতি দিলেও না। একমাত্র কোনও এক বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়রা আদালতের বিচারপতি, সেই কাজটি করতে পারেন।
৩) ধর্ষণ বা পসকো আইনের বিবেচ্য কোনও অপরাধ সংক্রান্ত এফআইআর-এর বিষয় বস্তু প্রকাশ্যে আনা যাবে না।
৪) অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস, বা অপর্যাপ্ত ক্ষতিপুরণের বিরুদ্ধে নির্যাতিতা আবেদন করতে চাইলে তাঁর পরিচয় প্রকাশ করার কোনও প্রয়োজন নেই
৫) নির্যাতিতার নাম রয়েছে এমন সব নথি পুলিশকে সিল-করা খামে রাখতে হবে। সেগুলি জনসমক্ষে বা প্রকাশ্যে যাচাই করার প্রয়োজন হলে, পুলিশ নির্যাতিতার নাম মুছে তবেই নথির প্রতিলিপি পেশ করতে পারবে।
৬) কর্তৃপক্ষ নির্যাতিতার পরিচয় জানলে, গোপন রাখতে হবে
৭) পসকো কোর্টের আওতায় থাকা কোনও নাবালক/নাবালিকার নির্যাতনের ক্ষেত্রে, বিশেষ আদালত একমাত্র তার স্বার্থ রক্ষার্থে তার নাম প্রকাশের অনুমতি দিতে পারে।
৮ সরকার নতুন আইন না আনা পর্যন্ত, মৃত বা মানসিক ভারসাম্যহীন নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ্যে আনার জন্য যদি তাঁর নিকট আত্মীয়রা আবেদন করেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন দায়রা বিচারপতি।