নতুন চাকরিতে প্রথম দিন। উষ্ণ অভ্যর্থনা পাবেন, কাজ বুঝে নেবেন অল্প অল্প, তা না, প্রথম দিনেই এসে পড়ল পাহাড় প্রমাণ কাজের চাপ। বুঝিয়ে দেওয়া হল নতুন অফিসে ওয়র্ক লাইফ ব্যালেন্স বলে কিছু থাকবে না। শুধু কাজই থাকবে। নিয়মিত ওভারটাইম করতে হবে, তাও বাড়তি টাকা ছাড়াই। ম্যানেজারের দুর্ব্যবহারে প্রথম দিনেই চাকরি ছাড়লেন ইঞ্জিনিয়র।
নিজের নতুন অফিসের বিষাক্ত পরিবেশের কথা রেডিটে শেয়ার করলেন কর্মী। ওয়র্ক-লাইফ ব্যালেন্স বলে যে একটা শব্দ রয়েছে, এবং যা নিয়ে আজকাল আলোচনা বাড়ছে, তাঁকে অলীক কল্পনা, পশ্চিমী ধারণা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ম্যানেজার। খাতায় কলমে ৯ ঘণ্টার শিফট, কিন্তু প্রথম দিন থেকেই ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতে বলা হয়েছে। কর্মী আপত্তি জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন কাজের বাইরে নিজের ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে, নিজের জন্য সময় রাখতে চান, সে সব শুনে হাসি ঠাট্টা করেছেন ম্যানেজার।
৭ অক্টোবর চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। বসের দুর্ব্যবহার, বিষাক্ত কাজের পরিবেশ দেখে সেদিনই ইস্তফা দিলেন কর্মী। রেডিটে ওই ইঞ্জিনিয়র তাঁর সিদ্ধান্তের জন্য বাহবা পেয়েছেন দারুণ। অনেকেই বলেছেন এই ধরণের ম্যানেজার, সংস্থার বিরুদ্ধে মুখ খোলা উচিত।
সদ্য ওই চাকরিতে যোগ দেওয়া কর্মীর বার্ষিক বেতন ছিল ৭ লক্ষ টাকা। স্টার্টআপ সংস্থায় কখনও কখনও সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কাজ করতে হয়, সেই নিয়ে সমস্যা ছিল না বলেই জানিয়েছেন ওই কর্মী, কিন্তু সেটা নিয়ম হয়ে দাঁড়ালে সমস্যার। বাড়তি কাজ করলেও বাড়তি পারিশ্রমিকের ব্যবস্থা ছিল না ওই সংস্থায়, তাছাড়া কর্মীদের কাজের বাইরেও একটা জীবন থাকতে পারে, ম্যানেজার তা বিশ্বাস করেন না, এতেই আপত্তি ছিল ওই কর্মীর।
সম্প্রতি মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপে চূড়ান্ত পরিণতির বেশ কিছু ঘটনা সামনে এসেছে এ দেশেই। অফিসে কাজ করতে করতেই চেয়ার থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে লখনউয়ের ব্যাঙ্ককর্মীর। অফিসে কাজ করতে করতে চেয়ার থেকে পড়ে মৃত্যু হল ৪৫ বছরের সদফ ফতিমার। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের অ্যাডিশনাল ডেপুটি ভিপি সদফ ফতিমার নাকি কাজের সাংঘাতিক চাপ ছিল, বলছেন ফতিমার সহকর্মীরাই।
অফিসে কাজের অস্বাভাবিক চাপে ২৬ বছরের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। কর্ম সংস্কৃতি পাল্টান, এই মর্মে সংশ্লিষ্ট সংস্থার চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠিয়েছেন মৃতার মা। ২৬ বছরের আন্না সেবেস্টিয়ান পেরাইলের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে গত সপ্তাহেই। মা অনিতা অগাস্টিন EY India-এর চেয়ারম্যান রাজিব মেমানিকে চিঠিতে লিখেছেন, মেয়ে লড়াকু ছিল, কিন্তু কাজের চাপ, কাজের পরিবেশ, কাজের দীর্ঘ সময় মেয়ের শরীর মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছিল। ক্রমশ ঘুমহীনতা, উদ্বেগ, মানসিক চাপ মেয়েটাকে গ্রাস করতে থাকে। অনিতা জানিয়েছিলেন অফিসের কাজের বাইরেও কাজ দেওয়া হতো তাঁর মেয়েকে, ছুটির দিনে, অফিসের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর রাতেও কাজ করতে হতো। রাতে কাজ দিয়ে পরের সকালের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলতেন ম্যানেজার।
২৬ বছরের আন্না, তারপর ৪৫ বছরের ফতিমা, পরপর দুই মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসায় তা নিয়ে এখন দেশজুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ভারতের অফিসের নেতিবাচক কর্ম সংস্কৃতি নিয়ে আগেও বিস্তর খবর সামনে এসেছে। মাসেই বেঙ্গালুরুর এক ঘটনা সামনে এসেছিল। অভিমানে চাকরি থেকে ইস্তফা দিলেন বেঙ্গালুরুর ৩৭ বছরের অধ্যাপক, কারণ, নিজেকে উজার করে দেওয়া সত্ত্বেও বছরের পর বছর বেতন বাড়ছিল না ইঞ্জিনিয়রিং কলেজের সহকারী অধ্যাপকের। হালে আবার ইপিএফ দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিল প্রতিষ্ঠান। নিজের ইস্তফাপত্রটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে অধ্যাপক জানিয়েছিলেন, কেন চাকরি ছাড়ছেন, সেই প্রশ্নটুকু পর্যন্ত কেউ করল না তাঁকে।