মোদী ঝড়েই (Narendra Modi) ২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের মহড়া জিতে নিল বিজেপি (Bjp)। গত বছর বাংলায় বিধানসভা (Bengal assembly) ভোটে বিজেপিকে একাই রুখে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কিন্তু পাঁচ রাজ্যের ভোটে এমন প্রতিরোধ দেখা গেল না। বরং দ্বিতীয়বার উত্তরপ্রদেশ (Uttarpradesh) জয় করে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বস্তি দিলেন যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath)। দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশ তো বটেই উত্তরাখণ্ড (Uttarakhand) এবং গোয়াতেও (Goa) দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের পথে বিজেপি। বড় জয় উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরে (Manipur)। তবে বিজেপির এই বড় জয়ের মধ্যে লোকসভার ভোটের সেমিফাইনালে চমক হয়ে থাকল পাঞ্জাব। বিজেপি-কংগ্রেসের পর এই প্রথম কোনও রাজনৈতিক দল দিল্লির বাইরে এসে সরকার গঠন করল। কোনও আসন না পেলেও গোয়ায় প্রথমবার ভোট ময়দানে নেমে তৃণমূলের প্রাপ্তি পাঁচ শতাংশ ভোট। সর্বভারতীয় তৃণমূলের তরফে টুইট করে জানানো হয়েছে, গোয়ায় হার তারা মাথা পেতে নিচ্ছেন।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, বাংলায় বিপর্যস্ত হওয়ার পর উত্তরপ্রদেশ নিয়ে ভাবনা শুরু করে বিজেপি। তাই গত বছর পুজোর পর থেকেই আদাজল খেয়ে ময়দানে নেমে পড়েন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা (J P Nadda) ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। প্রথা ভেঙে দেশের সর্ববৃহৎ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকেই ভোটের পোস্টার বয় হিসাবে তুলে ধরা হয়। রাজনৈতিক মহলের দাবি, এই নির্বাচনে সেটাই ক্লিক করেছে বিজেপির পক্ষে। পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে এবার মুসলিম এবং দলিত ভোট বেশি করে নিজেদের পালে টানতে সফল হয়েছে বিজেপি। প্রায় একবছর ধরে কৃষক আন্দলোন নিয়ে দেশ উত্তাল হলেও, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বেশ ভাল ফল করেছে গেরুয়া শিবির। হাথরস, লখিমপুর খেরির মতো একধিক বিজেপি বিরোধী অঞ্চলেও গেরুয়া প্রার্থীরা জয়লাভ করেছে। তারপরেও অবশ্য তিনশো পার হয়নি। কারণ, দ্বিমুখী লড়াইয়ে অখিলেশের চ্যালেঞ্জে পূর্ব এবং উত্তরাঞ্চলে বেশ চাপে পড়ে যায় পদ্মশিবির। তাই, মিলে গিয়েছে বুথ সমীক্ষার দাবিও। যেখানে দাবি করা হয়েছিল, রাজ্য ক্ষমতায় ফিরলেও ৩০০-এর গন্ডি পার করতে পারবে না বিজেপি। রাজ্যের ৪০৩ আসনের বিধানসভায় ২৭০ আসন পেয়ে সরকার গঠন করতে চলেছেন যোগী আদিত্যনাথ। ১২০ আসন পেয়েছে রাজ্য বিরোধী অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি। আর রাজ্য-রাজনীতি আগেই ব্রাত্য হয়েছিল, এবারের ভোটে আরও ব্রাত্য হল কংগ্রেস ও বিএসপি।
আরও পড়ুন : ভোটে জিতে একের পর এক রেকর্ড গড়লেন যোগী আদিত্যনাথ
বিজেপির হাত থেকে উত্তরাখণ্ড বার করার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা ছিল কংগ্রেসের। কিন্তু বঙ্গতনয়া লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মরিয়া চেষ্টায় তা ব্যর্থ হল। গত পাঁচ বছরে বিজেপি শাসিত সবচেয়ে বিতর্কিত রাজ্যে ফের ক্ষমতা দখল করল বিজেপিই। শুধুমাত্র ঘরে-ঘরে প্রচারকে হাতিয়ার করে আর বাঙালি ভোটব্যাঙ্ককে কাজে লাগিয়ে পাহাড়ে ফের পদ্ম ফোটালেন বাংলার লকেট। ৭০ আসনের বিধানসভায় একাই ৪৪টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করবে বিজেপি। উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরেও কংগ্রেসকে উড়িয়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। এমনকী গোয়াতে বিজেপির সরকার গঠন এখন কার্যত সময়ের অপেক্ষা বলেই দাবি সেখানের বিজেপি নেতা এবং রাজ্যের বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্তের। তাঁর দাবি, রাজ্যে বিজেপিকে সরকার গঠনে সমর্থন আছে মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টি। যারা কীনা এই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জোটসঙ্গী ছিল। গোয়ায় গত একমাসের বেশি সময়ে নির্বাচনে প্রচারে বারবার গিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু প্রথমবার নির্বাচনে লড়াই করে তৃণমূলের প্রাপ্তি শূন্য। তবে ভোট পেয়েছে পাঁচ শতাংশ।
আরও পড়ুন : উত্তরাখণ্ডে বিজেপির জয়ের নেপথ্যে বাংলার লকেট, গেরুয়া দাপট মনিপুরেও
তবে, লোকসভা ভোটের আগে পাঞ্জাবে অবশ্য একযোগে কংগ্রেস এবং বিজেপিকে একাই উড়িয়ে দিয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। পাঁচ বছর আগে এই রাজ্যে ভোটে লড়াই করে কমবেশি ২০টি আসন পেয়েছিল আপ। আর এবার ৯০ আসন দখল করে সরকার গঠন করতে চলেছে আম আদমি পার্টি। ঘোষণা মত, তাদের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছে ভাগবত মান। শপথ নেওয়ার আগেই অবশ্য তিনি দাবি করছেন, নতুন পাঞ্জাব তৈরি হবে। যে কোনও বিভেদ থাকবে না। থাকবে না কোনও বৈষম্য।