শ্রদ্ধা ওয়ালকর হত্যাকান্ডে জটিলতা ক্রমশ বাড়ছে। পুলিশের হাতে খুনের কোনও প্রত্যক্ষ প্রমাণ উঠে আসেনি। তাই আইনের চোখে এখনও নিখোঁজ শ্রদ্ধা।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় আফতাব খুনের কথা স্বীকার করেছেন। আদালতেও আফতাবের দাবি, রাগের বশে খুন করে ফেলেছিলেন। কিন্তু আফতাবের আইনজীবীর দাবি, আদৌ খুনের কথা স্বীকার করেননি। আইনের চোখে কাউকে মৃত বললে তাঁর দেহ পাওয়া জরুরি। খুনের হাতিয়ারও উদ্ধার করতে হবে। অভিযোগ, মেহরুলির জঙ্গলে শ্রদ্ধার মৃতদেহের টুকরোগুলি আফতাব ছড়িয়ে দিতেন। তল্লাশি করে, সেখানে শরীরের বড় টুকরো পায়নি পুলিশষ যা উদ্ধার হয়েছে, তার মধ্যে চোয়াল, কবজির কাটা অংশ, হাড়গোড়ের ছোট টুকরো। সবই ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেগুলি শ্রদ্ধার কিনা, তা প্রমাণ করতে হবে পুলিশকে।
দিল্লির যে ফ্ল্যাটে আফতাব ও শ্রদ্ধা লিভ ইন করতেন, সেই ফ্ল্যাটের রান্নাঘর ও বাথরুমের টাইলসেও রক্তের চিহ্ন পেয়েছে ফরেনসিক। সেই রক্ত শ্রদ্ধার কিনা, তা প্রমাণিত হয়নি। শ্রদ্ধার বাবা ও ভাইয়ের ডিএনএ পরীক্ষা করিয়ে তা মিলে গেলে, এটা বড় প্রমাণ হয়ে উঠতে পারে। ফরেনসিক পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে এখনও এক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। অভিযোগ, গত ১৮ মে খুন হন শ্রদ্ধা। দীর্ঘকাল ধরে আফতাবের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তাঁর। অভিযোগ, শ্রদ্ধাকে খুন করে ৩৫ টুকরো করেছিলেন আফতাব। আমেরিকার ওয়েব সিরিজ থেকে খুনের অনুপ্রেরণা পান আফতাব। গুগল করে দেহের টুকরো সংরক্ষণ ও রক্তের দাগ পরিষ্কারের পদ্ধতি খুঁজেছিলেন বলে দাবি পুলিশের। ফ্ল্যাটে নতুন ফ্রিজ কিনে শ্রদ্ধার দেহের কাটা টুকরোগুলি সংরক্ষণ করে রাখতেন আফতাব। ফ্রিজ উদ্ধার হলেও খুনের অস্ত্র খুঁজে পায়নি পুলিশ। কী দিয়ে দেহাংশ কাটা হয়েছে, তাও খোঁজার চেষ্টা করছে দিল্লি পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা। পরে ব্লেড, ছুরি, করাত-সহ একাধিক হাতিয়ার পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তা আফতাব এই কাজে ব্যবহার করেছে কিনা, তা প্রমাণ করা যায়নি।
আফতাবের আইনজীবী অবিনাশ কুমার জানিয়েছেন, দিল্লি পুলিশ শ্রদ্ধা খুনের মামলার যে তদন্ত করছেন, তা পারপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ নির্ভর। আফতাব যা তথ্য দিয়েছে, তার উপর নির্ভর করেই তদন্ত এগোচ্ছে। কিন্তু পুলিশের কাছে এখনও এমন প্রমাণ নেই, যাতে প্রমাণিত হয় আফতাব খুনি। শ্রদ্ধা যে খুন হয়েছেন, তা পুলিশকে প্রথমে প্রমাণ করতে হবে। পুলিশের দাবি, শ্রদ্ধার উপর অত্যাচারের বেশ কিছু অভিযোগ পুলিশ পেয়েছে। পুলিশের দাবি, শ্রদ্ধা তাঁর বন্ধুবান্ধবদেরও একথা জানিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্টও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শ্রদ্ধার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। দিল্লি পুলিশের ২০টি দল এই খুনের মামলায় তল্লাশি করছে। সূত্রের খবর, ২০০ জন পুলিশকর্মী তদন্তে আছেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের সঙ্গে আছেন ফরেনসিক টিম।
তবে একাংশের মতে, আফতাবের দেওয়া তথ্যের উপর তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। দিল্লি পুলিশের তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে সিবিআই তদন্ত চেয়ে পিল করা হয়েছিল। কিন্তু সেই মামলার আবেদন খারিজ করা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে, অভিযুক্ত আফতাব এখনও পর্যন্ত সঠিক তথ্য দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁদের তদন্ত ৮০ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্ট আসলে ১০০ শতাংশ হয়ে যাবে।