মেঘলা আকাশ, যখন-তখন ঝেঁপে নামছে বৃষ্টি । ভেজা রাস্তা-ঘাট । রোদের তীব্রতা নেই । বলতে গেলে খাতায় কলমে এখন চলছে বর্ষাকাল । কিন্তু, অনুভূতি যেন গরমকালেরই । সেই ঘাম,অস্বস্তি, পাখা ছাড়া দু'দন্ড থাকা যাচ্ছে না । মাঝে মাঝে এসিও চালাতে লাগছে । মানুষের মুখে মুখে একটা কথা শোনা যাচ্ছে, গরম কি আর কমবে না ? চলতি বছর সেই এপ্রিল থেকে গরমের তীব্রতা টের পেয়েছেন মানুষ । হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন একের পর এক মানুষ । এই বিষয়ে সম্প্রতি, রাষ্ট্রসংঘের একটি সমীক্ষায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে ।
গরমের তীব্রতা কতটা নিয়ে একটি সমীক্ষা করে রাষ্ট্রসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা । সমীক্ষার সেই 'কল টু অ্যাকশন অন এক্সট্রিম হিট' রিপোর্ট অনুযায়ী, এবার হিটস্ট্রোকের কারণে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভারতে । সেই সংখ্যাটা শতাধিক বলে দাবি করা হচ্ছে । রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৩০ জুনের হিসেব অনুযায়ী, ভারতে অন্তত ৪০ হাজার হিট স্ট্রোকের ঘটনা ঘটেছে । আর তাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি । এমনকী গত ১০০ দিনে দেশে রেকর্ড গড়েছে তাপমাত্রা । যা উদ্বেগের বলছেন বিশেষজ্ঞরা ।
এতো গেল ভারতে কথা । বিশ্বের বাকি দেশগুলিতেও একই ছবি । আমেরিকা, জাপান থেকে সৌদি আরব...সর্বত্র গরমের তীব্রতা বাড়ছে । একের পর এক রেকর্ড গড়ছে তাপমাত্রা । ২০২৪ সালের জুন মাস নাকি এত বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম ছিল । রিপোর্টে আরও দাবি করা হয়েছে,বিশ্বে ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে হিটস্ট্রোকের কারণে প্রতি বছর অন্তত ৪ লক্ষ ৯০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে । যার মধ্যে ৪৫ শতাংশই এশিয়ার ঘটনা ।
তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ক্ষতি
চলতি বছর গরমের তীব্রতার কারণে বহু দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে । অত্যধিক গরমে স্বাভাবিকভাবেই কর্মক্ষমতা কমে যায় । আর কর্মক্ষমতা কমলে উৎপাদনশীলতা কমে । সেক্ষেত্রে অনেকটা ক্ষতিগ্রস্থ হয় বিভিন্ন ক্ষেত্র । এছাড়া, গরমের কারণে বহু দেশে প্রচুর শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে । আবার গরমের কারণে অনেকের শরীরে অসুস্থতাও বেড়েছে ।
যত দিন যাচ্ছে, যত সময় এগোচ্ছে, দেখা যাচ্ছে গরমের তীব্রতা বাড়ছে । ২০০০ সালে আজকের দিনের মতো, এতটা গরম কিন্তু পড়ত না । আগে তো পাখার হাওয়াতেই ঘাম শুকিয়ে যেত । কিন্তু, এখন বেশিরভাগ বাড়িতে এসি । গরমকালে এসি চাহিদার তুলনায় জোগান দিতে হিমশিম খান দোকানদাররা । এভাবে হু হু করে তাপমাত্রা বাড়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বিশ্ব উষ্ণায়ণকেই দায়ী করছেন ।
কংক্রিট, ইট পাথরের অট্টালিকার ভিড়ে গাছপালা আর জায়গা পাচ্ছে না । হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ, কেটে ফেলা হচ্ছে গাছ । ফলে প্রকৃতি আরও উষ্ণ হচ্ছে । যে পরিমাণে এসির ব্যবহার বেড়েছে, সেদিক থেকেও দূষিত হচ্ছে পরিবেশ । মানুষই এই সুন্দর পৃথিবীকে ধংসের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ।