অবশেষে ! সোমবার সন্ধ্যায় কেরলের ওয়েনাড লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নাম রাহুল গান্ধীর ঘোষণার পর, এই ব্যাখ্যাই করেছে রাজনৈতিক মহল। এমনকী, কংগ্রেসের একাংশ থেকে দাবি করা হয়েছে, সেই যখন পর্দা উঠল, তাহলে আগে নয় কেন ? প্রিয়াঙ্কার নাম ঘোষণা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে সরাসরি কেউ মুখ খোলেননি। কিন্তু কানাঘুষো যা শোনা যাচ্ছে, তাতে ভারতীয় সংসদে গান্ধী-নেহরু পরিবারের আরও এক প্রজন্মের অভিষেকের জন্য সময় খোঁজা হচ্ছিল। আর প্রিয়াঙ্কার জন্য এটাই মোক্ষম সময় বলে দাবি কংগ্রেসের প্রায় সব শীর্ষ নেতারা। কারণ, এবারের লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের রায়বরেলি এবং কেরলের ওয়েনাড দুটি আসন থেকে জিতে এসেছেন রাহুল। তাই নিয়মের ফলে একটি আসন রাহুলকে ছাড়তে হত। আর তাই ওয়েনাডকে প্রিয়াঙ্কার জন্য সবচেয়ে সেফ আসন বলেই দাবি কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের। কারণ, গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে রাহুলের জয়ের মার্জিন ছিল ৩ লক্ষ ৬৬ হাজারের বেশি। তাই, প্রিয়াঙ্কাও জন্য এই কেন্দ্রেই শ্রেয় বলেই মনে করেছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা। আর এখন দেশে একটা মোদী বিরোধী হাওয়া চলেছে, তাতে ইন্দিরার নাতনির ক্ষেত্রে মার্জিন বাড়তে পারে বলেও মনে করেছেন অনেকে।
সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা ভোটের পর কংগ্রেসের ফল সবাইকে চমকে দিয়েছে। বিশেষকরে উত্তরপ্রদেশে শতাব্দী প্রাচীন দল যে ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাতে প্রিয়াঙ্কার হাত দেখছে রাজনৈতিক মহল। আসন রফার ক্ষেত্রে এবার অখিলেশের সপার সঙ্গে কংগ্রেস সামনে রেখেছিল প্রিয়াঙ্কাকেই। আর এখানেই পঞ্চাশ পেরিয়ে যাওয়া কংগ্রেস নেত্রীর মধ্যে তাঁর ঠাকুমা ইন্দিরার ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন জয়রাম রমেশ, মনিশঙ্কর আয়ারের মতো ওল্ড কংগ্রেসি নেতারা। দরাজ সার্টিফিকেটে তাঁদের দাবি, প্রিয়াঙ্কা এখন পরিণত।
যে লড়াই শুরু হয়েছিল আজ থেকে ২০ বছর আগে। ২০০৪ সালে প্রথম ইউপিএ সরকার আসার আগে একজন শিক্ষানবীশ হিসাবে রাজনীতি শুরু করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সেইসময় অনেকেই হেসেছিলেন। কারণ, রাজনীতিতে শিক্ষানবীশ প্রিয়াঙ্কা ! যে পরিবার ভারতকে সেরা তিন প্রধানমন্ত্রী উপহার দিয়েছে। যে পরিবারের রাজনীতিই ইউএসপি। এরপরেও রাজনীতি শিখবেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি শিখেছেন। তার প্রমাণ-ই বিশ বছর পর ওয়েনাডে তাঁকে প্রথমবার ভোট ময়দানে নামানোর সিদ্ধান্ত।
আর এই বিশ বছরে দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে বঢড়া-পত্নীকে। ২০১৯ সালে সরকারি ভাবে কংগ্রেসে যোগ প্রিয়াঙ্কার। কাজ শুরু আমেঠি ও রায়বরেলির প্রচারক হিসাবে। এক বছর পর, উত্তরপ্রদেশে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়োগ করা হল সাধারণ সম্পাদক হিসাবে। ২০২১ সালে লখীমপুর খেরির ঘটনা নেত্রী হিসাবে প্রথম দেখা গেল প্রিয়াঙ্কাকে। ২০২২, বিধানসভার দামামা বাজাল উত্তরপ্রদেশে। লখনউ থেকে বিরাট মিছিল আয়োজন করলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। স্লোগান উঠল, লড়কি হো, লড় শক্তি হো। কিন্তু ফল প্রকাশের পর ৪০৩ আসনের মধ্যে কংগ্রেসের ঝুলিতে মাত্র দুই। ২০২৩ সালে উত্তরপ্রদেশের সাধারণ সম্পাদক হিসাবেই প্রিয়াঙ্কার উপর আস্থা রাখল কংগ্রেস। এবার লোকসভা ভোটের আগে যাবতীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল প্রিয়াঙ্কাকে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে হাতের তালুর মতো চেনা উত্তরপ্রদেশ থাকতে কেরলের ওয়েনাডে কেন প্রিয়াঙ্কা ? যে উত্তরপ্রদেশের অলি-গলি তাঁর ধমনীতে বইছে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ কী ? রাজনৈতিক মহল বলছে, বিজেপিকে রুখতে দাক্ষিণাত্যে এবার একটা বলয় তৈরি করতে চায় কংগ্রেস। শতাব্দী প্রাচীন এই দলের পিছনে রয়েছে ইন্ডিয়া জোটের বাকি রাজনৈতিক দলগুলি। প্রয়োজন একজন নেতার। যাঁর গ্রহণযোগ্যতা আসমুদ্র-হিমাচল। আর সেই জায়গা থেকে প্রিয়াঙ্কা ছাড়া কংগ্রেসের কাছে অন্য অস্ত্র কোথায়।
তাই অপেক্ষা এখন ওয়েনাডের নির্বাচনের দিন ঘোষণার। যার অনেক আগেই প্রিয়াঙ্কার নাম ঘোষণা করল কংগ্রেস। দক্ষিণের এই মাঠে কী ফাঁকা মাঠে খেলা হবে ? প্রিয়াঙ্কার নাম ঘোষণার পর সেই নিয়ে দ্বিধায় এখন সিপিআই।