জাতীয় টাস্ক ফোর্স। গত ৯ অগাস্ট কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার ঘটনার পর জাতীয় স্বাস্থ্য মানচিত্রে এটাই এখন আলোচনার বিষয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পাওয়ার পর জাতীয় টাস্ক ফোর্স নিয়ে একটি পোর্টাল তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী জেপি নাড্ডারা দেশবাসীর কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ কেমন হওয়া উচিত। সেই আবেদনে এখনও পর্যন্ত বেশ ভালোই সাড়া মিলেছে বলে দাবি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের।
গত ২২ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর শুনানির দিন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতাকে কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষনের জন্য একটি জাতীয় টাস্ক ফোর্স তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তারপরেই তৈরি হয় একটি পোর্টাল। যার নাম ‘সাজেশনস টু এনটিএফ’। কেন্দ্রীয় মন্ত্রক জানিয়েছে , পোর্টালে সাজেশন জমা পড়েছে প্রায় ১৭০০টি। ১৫০০ জন মানুষ নির্দ্বিধায়, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই পোর্টালে মতামত জানিয়েছেন। এছাড়াও ৩৭টি প্রতিষ্ঠান বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালও। মন্ত্রকের তরফেই এই তথ্য সামনে আনা হয়েছে।
কীভাবে কাজ করবে টাস্ক ফোর্স?
মূলত দুটি বিষয়ে হাসপাতালের নিরাপত্তর উপরে কাজ করবে টাস্ক ফোর্স। প্রথমত, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের উপর হিংসা এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা। দ্বিতীয়ত, হাসপাতালের চিকিৎসক, ইন্টার্ন, রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের কাজের জন্য নিরাপদ একটি পরিকাঠামো এবং জায়গা তৈরি করা।
এছাড়াও হাসপাতালে কর্মরত মহিলাদের উপর হেনস্থা, আপদকালীন পরিস্থিতিতে হাসপাতালের নিরাপত্তা, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন রুখতে যে আইন, তা সরকারি হাসপাতালগুলির পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও কার্যকর রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখবেন টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা।
সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর শুনানিতে গত মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতের কাছে এই তদন্তের পঞ্চম স্টাটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ওই রিপোর্টে সিবিআই দাবি করেছে আরজি করে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ধৃত কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়। এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিবিআই-এর দেওয়া রিপোর্টের পরেই রাজ্যের কাছে সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
পরবর্তী শুনানিতে রাজ্যকে এই ব্যাপারে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়। তার আগে পর্যন্ত রাজ্যের কোনও সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় সিভিক ভলেন্টিয়ার নিয়োগ করতে পারবে না রাজ্য। যদিও রাজ্যের দাবি সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের আগে আরজি কর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ২৯ জন সিভিক ভলেন্টিয়ারকে। গত মঙ্গলবার , প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় প্রশ্ন করেন, সিভিক ভলান্টিয়ারদের কে নিয়োগ করে ? কী ভাবে নিয়োগ হয় তাঁদের ? এখন রাজ্যে কত জন সিভিক ভলান্টিয়ার আছেন ? তার জবাবে আদালতকে রাজ্য জানায়, সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করেই সিভিক নিয়োগ করা হয়।
যদিও রাজ্যের তরফে দেওয়া এই জবাব সন্তুষ্ট করতে পারেনি প্রধান বিচারপতিকে। পাল্টা তিনি নির্দেশ দেন, রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে বিস্তারিত জানাতে হবে কী ভাবে সিভিক ভলান্টিয়ারের নিয়োগ হয় ? তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী ? নিয়োগের আগে কী ভাবে তাঁদের দেওয়া তথ্য যাচাই করা হয় ? কোন কোন প্রতিষ্ঠানে সিভিক ভলান্টিয়ার আছেন ? সিভিক ভলান্টিয়ারকে কী ভাবে বেতন দেওয়া হয়, কত বাজেট বরাদ্দ করা হয় ?
এর পাশাপাশি আরজি কর মামলায় অন্যান্য বিষয়ে রাজ্যের সামনে সময়সীমাও বেধে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এদিনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, জুনিয়র ডাক্তাররা কি কাজে ফিরেছেন ? তাতে রাজ্য কার্যত সম্মতি জানিয়েছে। দীপাবলির পর হবে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।