অনিকেত মাহাতো। শুধু নামটুকুই যথেষ্ট। গত দেড় মাসে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে চলা জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের প্রথম সারির মুখ অনিকেত এখন আরজি কর হাসপাতালের সিসিইউ তে ভর্তি। ধর্মতলার অনশন মঞ্চ থেকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অনিকেতের আরোগ্য কামনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা, অনিকেতের সহযোদ্ধারা।
কেউ লিখছেন, 'সুস্থ হয়ে এসো, অনেক কথা আছে'। কোনও সহকর্মী আবার অনিকেতের সঙ্গে ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে আবেগতাড়িত হয়ে লিখছেন, তাঁদের বন্ধুর এতটুকু কষ্ট হলে প্রতিশোধ নিতে ভুলবে না জুনিয়র ডাক্তাররা।
দশ দফা দাবিতে গত শনিবার রাত থেকেই আমরণ অনশনে বসেন ৬ জুনিয়র ডাক্তার। রবিবার সন্ধেয় সেই অনশনে যোগ দেন আরজি কর হাসপাতালের পিজিটি অনিকেত। তবে তার আগেই জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে একেবারে প্রথম সারির মুখ হয়ে উঠেছেন অনিকেত।
স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানে দেখা করতে এসে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে 'বাবু' বলে সম্বোধন করায় স্বাভাবিক ভাবেই আলাদা করে প্রচারের আলো পড়ে অনিকেতের ওপর। জানা গিয়েছে আর জি কর আন্দোলনের মূল সংগঠক হিসেবে অনিকেতকেই নাকি বেছে নিয়েছেন আন্দোলকারীরা । এত বড় আন্দোলন সংগঠিত করার দক্ষতার জন্য তাঁকে বেছে নেওয়া হয়েছে । রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞ চোখ আন্দোলনের প্রধান মুখকে চিনে নিয়েছে । শুরু থেকেই অনিকেত ছাড়াও আন্দোলনের একেবারে পুরোভাগে ছিলেন কিঞ্জল নন্দ, দেবাশিস হালদার, অমৃতা ভট্টাচার্য, রুমেলিকা কর, আসফাকুল্লা নাইয়ারা।
ঝাড়গ্রাম জেলার শিলদার বাসিন্দা অনিকেতের বাবা অপূর্ব কুমার মাহাতো অবসরপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট। মা তারারানী মাহাতো গৃহবধূ। বিনপুর দু’নম্বর ব্লকের সন্দাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মুড়ারী গ্রামের অনিকেতের জন্ম ভিটে। পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ানের একটি প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনা শুরু। তারপর শিলদা রাধাচরণ বিদ্যামন্দির থেকে মাধ্যমিক, ঝাড়গ্রামের কুমোদ কুমারী ইনস্টিটিউশন থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাস করেন অনিকেত। তারপর আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এনাস্থেশিয়া নিয়ে এমডি পড়ছেন অনিকেত।
শুক্রবার সকালে কেমন আছেন অনিকেত? হাসপাতালে উঠে বসেছেন। অনিকেতের জন্য তৈরি করা হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ডও। বেশ কয়েকটি রক্তপরীক্ষা করা হয়েছে। শরীরে পাঠানো হয়েছে আইভি ফ্লুইডও। অনিকেতের শারীরিক অবস্থা নিয়ে আর এক জুনিয়র ডাক্তার আশফাক-উল্লাহ-নাইয়া জানিয়েছেন, ঠিক সময় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। না-হলে প্রাণঘাতী হতে পারত। টানা ৪ দিনের অনশনের জেরে অনিকেতের লিভার ও কিডনিতে প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
অনিকেতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও বাকি ৬ জন অনশনরত জুনিয়র ডাক্তার তনয়া পাঁজা, স্নিগ্ধা হাজরা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্যরা ধর্মতলার অনশন মঞ্চেই আছেন, তাঁদেরও শরীর দুর্বল। অন্যদিকে দশ দফা দাবি নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজেও দুই জুনিয়র ডাক্তার অনশনে বসেছেন।
প্রথম দাবি- RG কর হাসপাতালে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় প্রকৃত অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে দ্রুত শাস্তি দিতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি- স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রশাসনিক অক্ষমতা এবং দুর্নীতির দায় নিতে হবে স্বাস্থ্য দফতরকে। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে অতি দ্রুত তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে হবে।
তৃতীয় দাবি- রোগীদের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে রেফারেল সিস্টেম চালু করতে হবে।
চতুর্থ দাবি- সরকারি হাসপাতালে ফাঁকা বেডের তালিকা একটি মনিটারে দেখাতে হবে।
পঞ্চম দাবি- আন্দোলনকারীদের পঞ্চম দাবি অতি দ্রুত মেডিক্যাল কলেজগুলিতে টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।
ষষ্ঠ দাবি- জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি প্রতিটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পুলিশি নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে হবে। সিভিক ভলান্টিয়ারের বদলে দায়িত্ব দিতে হবে পুলিশকে।
সপ্তম দাবি- অতি দ্রুত প্রতিটি হাসপাতালে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে।
অষ্টম দাবি- থ্রেট কালচার পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করতে হবে। যাঁরা এর সঙ্গে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হবে।
নবম দাবি- প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
দশম দাবি- পশ্চিমবঙ্গ হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে বেনিয়মের অভিযোগগুলির দ্রুত তদন্ত করতে হবে।