শীতকাল মানেই বাংলার সিনেপ্রেমী এবং বইপ্রেমীদের উৎসবের মরশুম। অন্যদিকে এই আবহেই ক্রমশ উত্তাপ বাড়ছে বাংলাদেশের। রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক চাপানউতোরের জেরে ধীরে ধীরে দূরত্ব বাড়ছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের মধ্যেও। সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাস সহ আরও ৪ সন্ন্যাসীর গ্রেফতারির পর থেকেই কার্যত বাংলাদেশ উত্তাল। ঘটনায় ফুঁসছে এপার বাংলাও। রেশ এসে পড়ল চলতি মরশুমের আন্তর্জাতিক বইমেলা এবং চলচ্চিত্র উৎসবেও।
এবছর বইমেলা এবং চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ‘কার্যত’ ব্রাত্য বাংলাদেশ। সরকারের পালাবদল এবং ওই দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের ঘটনায় ক্রমেই বাড়ছে অস্থিরতা। চলতি বছরের কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসব থেকে বাদ পড়ছে বাংলাদেশের ছবি, বইমেলাতেও থাকছে না বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন।
এবছর কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভাল শুরু হচ্ছে ৪ ডিসেম্বর থেকে। প্রতিবার বাংলাদেশের ছবি দেখতে মুখিয়ে থাকেন এপারের সিনেপ্রেমীরা। একবার চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত ‘হাওয়া’ দেখতে লাইন নন্দনে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, মুশারফ করিমদের মতো ওপার বাংলার শিল্পীদেরও আনাগোনাও লেগেই থাকে এই ঐতিহ্যবাহী এই চলচ্চিত্র উৎসবে। রাজনৈতিক অবস্থা ও ভিসা জটিলতার কারণে এবার বাংলাদেশের সিনেমা দেখানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন উৎসবের চেয়ারম্যান গৌতম ঘোষ।
চেয়ারম্যান গৌতম ঘোষ পিটিআইকে জানিয়েছেন, ‘আগের বছরগুলোর চেয়ে এবার পরিস্থিতি আলাদা। ভিসা জটিলতা তো আছেই। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের কারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিবেশী বাংলাদেশের কোনো সিনেমা এবার উৎসবের তালিকায় নেই।’শুধু ছবিই নয়। এবারের বিভিন্ন বিভাগ, প্যানেলিস্ট, ওয়ার্কশপের তালিকাতেও নাম নেই কোনও বাংলাদেশী শিল্পীর। অন্যদিকে আরজিকর কাণ্ডের বিচার এখনও অধরা। এবার তার জেরেও খানিক জৌলুস কম।
একই ছবি বইমেলার ক্ষেত্রেও। আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি থেকে চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কলকাতা বইমেলার আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়কে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি জানান, ‘‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তাদের পক্ষে বইমেলায় আসা অসম্ভব। যদি কেন্দ্রীয় সরকার কোনও নির্দেশ না দেয়, তা হলে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণ করতে বলার প্রশ্নই ওঠে না। তবে, বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের জন্য বরাদ্দ জায়গা ফাঁকা পড়ে থাকবে না।’’
গিল্ড সূত্রে খবর, অক্টোবর মাস জুড়ে বইমেলার জন্য আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। দরখাস্ত জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ অক্টোবর। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনও প্রকাশনা সংস্থার তরফে চিঠি আসেনি গিল্ডের কাছে। ১৯৯৬ সাল থেকে কলকাতা বইমেলায় অংশ নিয়ে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু এবার আর বইমেলার চেনা জায়গায় দেখা যাবে না বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। তবে আসন্ন কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের জায়গায় নতুন স্টলের অনুমোদনের সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়ে দিয়েছেন ত্রিদিব।
উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল সনাতনী হিন্দু নেতা ও ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে। তারপর থেকেই চট্টগ্রাম, রংপুর-সহ একাধিক জায়গায় বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে বলেই অভিযোগ উঠেছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গে বা ভারত নয়, সনাতনী এই নেতার মুক্তির দাবিতে আন্তর্জাতিক চাপও ধীরে ধীরে বাড়ছে। ইতিমধ্যে কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় পথে নেমেছেন হিন্দুরা।