জলে গেলেন মা জগদ্ধাত্রী। জানান দিল এবারের মতো দেবীপক্ষ শেষ। এমনিতেই বাংলায় বারো মাসে তেরো পার্বন। আর সেই পার্বনের অঙ্গ ভোট-উৎসব। লোকসভা ভোটের পর পুজোর আগে রাজ্যে হয়েছিল চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন। বকেয়া ছিল আরও ছটি। এবার তাদের পালা। প্রতিটি কেন্দ্রই উল্লেখযোগ্য। তবে বিশেষ করে নজর উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি এবং উত্তরবঙ্গের মাদারিহাটের দিকে।
পাহাড়ে যাওয়ার আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, তৃণমূলকে ভোট দিলে রাজ্যের উন্নতি অগ্রসর হবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, দমদম বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে সুকৌশলে রাজ্যবাসীর কাছ থেকে ভোট চেয়ে বাগডোগরার বিমানে উঠেছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বাংলার ছটি উপ-নির্বাচনের জন্য ১০৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী বরাদ্দ করা হয়েছে। সঙ্গে থাকবে রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশ। আর এখানেই কমিশনের উপর থেকে আস্থা হারাচ্ছেন বঙ্গের বিজেপি নেতারা। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাস ভারতবিখ্যাত। কী ভাবে ঠেকানো যাবে, তা কমিশনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, বাকি পাঁচ আসনে লড়াই হবে এই বিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামছে বিজেপি। কিন্তু মাদারিহাট তাদের দখলে থাকবে কীনা, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত নন সুকান্ত-শুভেন্দুরা। ২০১৬ এবং ২০২১, দুবার এই কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন মনোজ টিগ্গা। তিনি এখন সাংসদ। এই দুঃচিন্তা কাটাতেই কী এখন থেকে বিধানসভার জন্য বঙ্গ বিজেপিকে ফোকাসের কথা বলছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা ?
কারণ, এই ম্যাচ খেলতে নামার আগেই তৃণমূলের চাপে কার্যত বোতলবন্দি শুভেন্দু-সুকান্ত। ২০২৬ সালের আগে এই ছয় কেন্দ্র থেকে পুরো ফায়দা তুলতে প্রস্তুত তৃণমূল কংগ্রেস। তাই, উত্তরবঙ্গের মাদারিহাটকে বিশেষ নজরে রেখেছে বাংলার শাসকদল। আর সেই কারণে দিল্লি ও কলকাতা দু জায়গায় গিয়েই পুলিশের বিরুদ্ধে খারাপ কথা বলার অভিযোগে নির্বাচনের আগেই শুভেন্দু ও সুকান্তর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তৃণমূল।
হাতে আছে আরজি কর। তা দিয়ে হয়তো উত্তরবঙ্গ এবং পশ্চিমাঞ্চলে জল গরম হবে না। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, উত্তর ২৪ পরগনার দুটি কেন্দ্র নৈহাটি এবং হাড়োয়ায় এই ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে। রাজনৈতিক মহলের দাবি, ২০২৬ সালে ফাইনালের আগে এই উপ-নির্বাচন বামেদের কাছে সেমিফাইনালের লড়াই। বাংলার রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন করে খাতা খুলতে হলে এই সংগঠন নিয়ে তাদের অলআউট যেতে হবে।
চতুর্মুখী লড়াইয়ের কারণে এবারের ময়দান অনেক বেশি ওপেন। সেই সুযোগটা বামেরা যদি কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে আসন না পেলেও ভোট অনেকটাই বাড়তে পারে। কারণ, এই ছয় কেন্দ্রে কংগ্রেস একা কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সন্দেহ থাকছে।
সবমিলিয়ে, দেবীপক্ষের পর বাংলার ভোট-পক্ষে সব শিবিরেই এখন শেষ বেলার প্রস্তুতি। তিন বছর আগে এই ছয় কেন্দ্রে শাসক তৃণমূলের ঝুলিতে ছিল ৫-১। ফলের কোনও পরিবর্তন হয় কীনা, নজর এখন সেই দিকেই।