শারদীয়ার মেতেছে বাঙালি। পঞ্চমী রাত থেকেই চেনা ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে কলকাতা। ভিড় হচ্ছে মণ্ডপে মণ্ডপে। মেট্রোতে পা রাখার জো নেই। আবার একই সঙ্গে এক অন্য চিত্রের সাক্ষীও থাকছে কলকাতা। ধর্মতলা চত্বর গমগম করছে জুনিয়র ডাক্তারদের স্লোগান শাউটিং-এ। অনশন করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
এই প্রতিবাদই তাঁদের উৎসব। এই অনশন মঞ্চে গেলেই দেখা মিলবে এক ডাক্তারের। স্নিগ্ধা হাজরা। আরজি কর কাণ্ডে সহকর্মীর বিচার সহ ১০ দফা দাবি নিয়ে অনশনে বসেছেন তিনি। অন্যদিকে গত কয়েক মাসে তাঁকে চেনে না এমন লোক নেই ,দেবাশিস হালদার। জুনিয়র ডাক্তারদের লাগাতার আন্দোলনের অন্যতম মুখ তিনি। আর এই স্নিগ্ধা এবং দেবাশিষ সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী।
মাত্র ৬ মাস আগে ঘর বেঁধেছেন তাঁরা, অর্থাৎ হিসেবমতো এটিই তাঁদের প্রথম পুজো। কিন্তু এই পুজো তাঁদের কাটছে একেবারে অন্যভাবে। অনশনে বসেছেন স্নিগ্ধা, তাঁর সঙ্গে সাথ দিচ্ছেন দেবাশীষ। আন্দোলনে রয়েছেন তিনি। কর্মসূচি, পরবর্তী পদক্ষেপ সব ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কখনও ফুরসৎ পেলে স্নিগ্ধার কাছে এসে বই পড়ছেন, কখনও বা গলা মেলাচ্ছেন স্লোগানে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসক। সেখান থেকেই এগিয়েছে সম্পর্ক।
উৎসব তো হচ্ছে, আন্দোলনের উৎসব। পথ চলতি মানুষ প্যান্ডেল হপিং সেরেই দুদণ্ড এসে বসছেন তাঁদের পাশে, কেউ কেউ নতুন জামা গায়েই এসে বসছেন অবস্থানে।
৯ অগস্ট আরজি করের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই অ্যানাটমি বিল্ডিংয়ের সামনের গাছতলায় জড়ো হয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আর সেই দিন থেকেই এই গণ আন্দলোনের সঙ্গে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন দেবাশিষ -স্নিগ্ধা।
কিঞ্জল, অনিকেত, দেবাশিষরা এই মুহূর্তে আন্দোলনের মুখ। ছিপছিপে চেহারা , গালে চাপ দাড়ি, তীক্ষ্ণ ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর- প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কোথায় একটিও অপবাক্য নেই। এই দেবাশিসেরই সহযোদ্ধা স্নিগ্ধা। যদিও ডাক্তাদের পুজোর ছুটি থাকে না, এর আগে এর আগে পুজোতে একদিন ছুটি পেলে দেবাশিস ফিরে যেতেন নিজের বলাগড়ের বাড়িতে। আর স্নিগ্ধা বাঁকুড়া চলে যেতেন বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। কিন্তু এই মুহূর্তে আন্দোলনই তাঁদের উৎসব।