শিক্ষায় সরকারি নিয়োগে দুর্নীতি শুরু হয়ে অন্তত ১০ বছর আগে। ইডির এক সূত্রে দাবি, ২০১২ সালের প্রাথমিক টেট থেকেই দুর্নীতির শুরু। চাকরি বিক্রির জন্য অতিরিক্ত পদও নাকি তৈরি করা হয়েছিল। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে শিক্ষা দফতরের একাধিক নথি উদ্ধার করেছে ইডি। ইডি সূত্রে খবর, পার্থ ও অর্পিতাকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করেও এই তথ্য উঠে এসেছে তাঁদের হাতে।
ইডির তদন্তকারী আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ২০১২ সালে প্রাথমিক টেট হয়েছিল। পরে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে টেট হয়। ২০১৭ সালের টেট হয় ২০২১ সালে। ২০১৪-র টেটের পরীক্ষারও সময় অনুযায়ী হয়নি। পরীক্ষার মূল্যায়নের ভিত্তিতে এখনও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। ইডি জানিয়েছে, এসএসসি, প্রাথমিক টেট ও উচ্চমাধ্যমিকের সব নিয়োগ পরীক্ষা পদ্ধতি ধোঁয়াশায় ভরা। ইডির দাবি, পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ২০১২ সালে তিনি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন না। তাই বিষয়টি জানেন না। ইডি সূত্রে দাবি, তদন্ত যত এগোচ্ছে, নিয়োগ দুর্নীতে আরও প্রভাবশালীর নাম উঠে আসছে। রাজ্যজুড়ে শাসকদলের মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, পুরসভার কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত কর্তাদের সুপারিশে অজস্র চাকরি হয়েছে। এতে টাকার লেনদেনও হয়েছে বলে দাবি তদন্তকারী আধিকারিকদের।
আরও পড়ুন: স্বস্তি দিয়ে রাজ্যে করোনা ৫০০-এর নীচে, দক্ষিণ দিনাজপুরে শূন্য
তদন্তকারীদের দাবি, শাসকদলের কর্মীদের বেআইনিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। সবক্ষেত্রেই আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমেই করা হয়েছে। ইডির এক কর্তা জানিয়েছেন, তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। একাধিক প্রভাবশালী ও শিক্ষা দফতরের একাধিক কর্তা-কর্মীদের যোগসাজশের তথ্য সামনে আসেছে। ইতিমধ্যেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত সচিব সুকান্ত আচার্য, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য-সহ একাধিক আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুর্নীতি কাণ্ডের লভ্যাংশের টাকা কোথায় পৌঁছেছে, সম্পত্তি-সহ কোথায় বিনিয়োগ করা হয়েছে, তারও একাধিক সূত্র হাতে এসেছে ইডির।
সোমবার ইডির তদন্তকারী আধিকারিকদের দাবি, অর্পিতা তদন্তকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করছেন। প্রথম পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদে অর্পিতার দাবি, ৫-৬ বছর পরিচয় হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। সম্প্রতি শান্তিনিকেতনের একটি বাড়ির দলিলে দেখা গিয়েছে, ২০১২ সাল থেক পার্থ ও অর্পিতা যৌথ সম্পত্তির মালিক। তদন্তকারীদের কথায়, জেরার সময় কান্নাকাটি করছেন। অনেক কিছু এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করছেন বলে অভিযোগ অর্পিতার বিরুদ্ধে। শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের ওপর দোষারোপ করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। অর্পিতার বাড়ি থেকে এত টাকা কীভাবে উদ্ধার হল, তাও এড়িয়ে যান তিনি।
এদিকে সোমবার ইডির কাছে আবাসনের নথি জমা দিয়ে এলেন বেলঘরিয়ার 'ক্লাব টাউনস হাইটস'-এর আবাসন কর্তৃপক্ষ। মূল প্রবেশদ্বারের রেজিস্ট্রারে খাতাও ইডির কাছে জমা দেওয়া হয়। সিসি ক্যামেরার তথ্যও নিয়ে যেতে অনুরোধ করেছে আবাসন কর্তৃপক্ষ।