ইলিশ না চিংড়ি। মটন না মুরগি। ভেবেছিলেন অনেক কিছুই...। কিন্তু জামাইষষ্ঠীর সকালে বাজারে গিয়ে বাঙালি পার্টিগণিত-বীজগণিত সব এক হয়ে গেল। সব্জি থেকে মাছ - সব থেকেই যেন আগুন বেরোচ্ছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি অ্য়ান্ডি রবার্ট ছুটে আসছেন সত্তরের দশকের সাবাইনা পার্কের বাইশ গজে। তবুও জামাইষষ্ঠী বলে কথা। কী আর করা যাবে গত দু বছর তো কিছু করা যায়নি। তাই এবার একটু নয় ৫০, ৬০, ৭০-এর ঘরে নামতা আওড়াতে আওড়াতে বাজার করেছে বাঙালি।
এমনিতেই আলু-পিঁয়াজ কুলিন। সারা বছর তারা দরে বাকি থেকে অনেক এগিয়ে থাকে। এদিনও ছিল। জ্য়োতি থেকে চন্দ্রমুখীর দাম ৩০ থেকে ৪০-এর মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছে। তবে সবাইকে চমকে দিয়ে টোম্যাটো শতরান যেন মুগ্ধ করেছে বাঙালির বাজার বিলাসিতাকে। বাগমারি থেকে গড়িয়াহাট। মানিকতলা থেকে লেক মার্কেট - সর্বত্র একাই খেলছে টোম্য়াটো। জামাইকে যে সাধ করে দুটি ডাঁটি সমেত বেগুন ভেজে পাতে দেওয়া হবে, তারও জো নেই। কারণ, হাত দিলেন ৮০ টাকা। কাঁচা লঙ্কাও ঝাঁজ কতটা জানবেন কী করে ? হাত দিলেই। ৮০ থেকে ১০০ টাকা লঙ্কার দর। ভাবা যায় !
জামাইষষ্ঠীর আগে বাজারে এসেছে পদ্মার ইলিশ। এই আশাতেই হাতিবাগান থেকে ল্যান্সডাউন ছুটে ছিল সবাই। এদিন ইলিশ ৮০০ থেকে দেড় কিলোর দাম ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা। আর দেড় কিলোর উপরে উঠলে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা। ইলিশ খাবে, না দেখবে, ভাবতে ভাবতে সময় শেষ। তাহলে চিংড়ি হোক। গলদা ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। আর বাগদা ১০০০ থেকে ২০০০। দাম শুনেই বাঙালির বলছে, তা-হলে থাক। আর রুই, কাতলা, পাবদা, পার্শে - তাদের কোনও বিকল্প নেই। রোজের মতো আজও তাদের স্ট্রাইক রেট বাকি দিনের মতো।
জামাইকে একটু ফল দিতে হবে। খুব ভাল কথা। আম আর লিচু যেন ময়দানের একসময়ের কৃশাণু-বিকাশ। কেউ ১০০ টাকার কমে কথা বলতে রাজি নয়। সবে বাজারে এসেছে কাঁটাল। সেও যেন ইডেনের রজত পাতিদার। মাঠে নেমেই ১০০ থেকে ৩০০ টাকা।
তাহলে কী করবে বাঙালি ? এতদিন রান্নার গ্য়াস, জ্বালানির দাম এসবের মধ্যেই রাগ-অভিমান, তর্ক, বিতর্ক আটকে ছিল। শনিবার থেকে তো ইপিএফও-র সুদটাও কমিয়ে দিল।