২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে কী তৃণমূলে আমূল রদবদল হচ্ছে ? কালীঘাটের বৈঠকের আগে পর্যন্ত সেই জল্পনা চলছিল। সম্প্রতি ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির বৈঠকের পর যা তুঙ্গে উঠেছিল। কিন্তু কালীঘাটের বৈঠকে সেই জল্পনা আপাতত যবনিকা টেনে দিলেন তৃণমূল নেত্রী স্বয়ং। মমতা বুঝিয়ে দিলেন, ২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের অন্দরে তিনি কোনও পরিবর্তন চান না। বরং, এই টিম নিমে ময়দানে নেমে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভাবে ম্যাচ জিততে চান।
আরজি কর থেকে সাম্প্রতিক কসবা, প্রতি ঘটনাতেই সরকারের নজরদারির অভাব ঘিরে অভিযোগ উঠেছিল। কসবার ঘটনার পরেই রাজ্যে নতুন উপ-মুখ্যমন্ত্রীর দাবিও উঠেছিল তৃণমূলের অন্দর থেকে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফুলটাইম পুলিশমন্ত্রী চেয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছিলেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর।
তাঁর এই বিবৃতির পর শোরগোল পড়ে গিয়েছিল রাজ্য-রাজনীতিতে। রাজনৈতিক মহলের দাবি, অভিষেককে ঘিরে এই দাবির পরেও আরও চওড়া হয়েছিল তৃণমূলের অন্দরে নবীন-প্রবীণ দ্বন্দ্বের ফাটল। হুমায়ুনকে পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমের মতো তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতারা। আবার অভিষেকের হাত শক্ত করেছিলেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র।
বিশেষকরে আরজি করের ঘটনার পর রাজ্যে হয়ে গিয়েছে ছটি কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন। যেখানে সিতাই এবং হাড়োয়া বাংলার শাসক দল জয় পেয়েছে লক্ষাধিক ভোটে। রাজনৈতিক মহলের দাবি, কালীঘাটের বৈঠকের আগে উপ-নির্বাচনের ফল কার্যত উজ্জ্বীবিত করছে তৃণমূল নেত্রীকেও। তাই এই পরিস্থিতিতে দলবদলের ঝুঁকি এড়িয়ে তৃণমূলকে তাঁর দেখানো রাস্তাতেই হাঁটতে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
যার নিট ফল, তৃণমূলের দায়িত্ব আরও বাড়ল প্রবীণদের। কার্যত ডানা ছাঁটা হল নবীনদের। দলের শৃঙ্খলা রুখতে যে তিনটি কমিটি তৃণমূল নেত্রী তৈরি করলেন, তার ছত্রে ছত্রে প্রবীণদের প্রভাব। বিশেষ করে দিল্লির ইস্যু নিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কথা বলার দায়িত্ব দিলেও, ওই তালিকায় মমতা রেখে দিলেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলী ঘোষ দস্তিদারের মতো তৃণমূলের বর্ষীয়ান তারকাদের।
কালীঘাটের এই বৈঠকের পরে কি আর জেলায় সাংগঠনিক রদবদলে হাত দেওয়া হবে ? রাজনৈতিক মহলের কাছে যা খবর, সম্ভবত আপাতত হচ্ছে না। এতদিন তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বাইরে ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। কেষ্টকে এবার এই কমিটির মধ্যে নিয়ে এলেন তৃণমূল নেত্রী। যা কার্যত অন্য ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন তৃণমূলের একাংশের নেতারা।
এই বৈঠকের আগে খবর চাউর হয়েছিল, রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে কোচবিহারকে বাদ দিয়ে বাকি সব জেলায় সাংগঠনিক বদল চান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোর পর বিদেশ যাওয়ার আগে নতুন তালিকাও নাকি তৃণমূল নেত্রীর কাছে জমা দিয়েছিলেন তিনি। সেই তালিকা নিয়েই নাকি অভিষেকের আলোচনা করতে ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে গিয়েছিলেন সুব্রত বক্সি। কিন্তু সেই বৈঠককে আপাতত ঠান্ডা ঘরে ঠেলে দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
দিল্লিই ইস্যু নিয়ে অভিষেককে কথা বলতে নির্দেশ দিলেও সংসদের যে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি মমতা তৈরি করেছেন, তাতে কিন্তু নাম নেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঝাড়খণ্ড এবং মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটের ফল দেখে বিজেপি রুখতে এখন থেকেই কৌশল ঠিক করছে তৃণমূল। তাই মমতার পাখির চোখ এখন ২০২৬। তার আগে, তৃণমূলে তিনি কোনও পরীক্ষা চান না। আর সেটা বোঝাতে কালীঘাট থেকেই স্পষ্ট বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী।