বাংলাদেশ ইস্যুতে সংসদে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতি দাবি করল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্য বিধানসভার শীত অধিবেশন থেকে এই দাবি তুললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের নব-র্নিবাচিত ছয় বিধায়কের শপথ অনুষ্ঠানের আগে এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ প্রশ্নে তৃণমূলের অবস্থান খুব স্পষ্ট। তাঁর সংযোজন, বাংলাদেশ নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিন প্রধানমন্ত্রী। যদি তাঁর কোনও অসুবিধা থাকে, তবে বিদেশমন্ত্রী বিবৃতি দিন। একসঙ্গে ঢাকা শান্তি সেনা পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এই ইস্যুতে তাঁর পরামর্শ, বাংলাদেশের পরিস্থিতি অবিলম্বে রাষ্ট্রসংঘে তোলা উচিত দিল্লির। এবং রাষ্ট্রসংঘের থেকে অনুমতি নিয়েই ঢাকা শান্তিরক্ষক বাহিনী পাঠানো উচিত কেন্দ্রের।
তৃণমূল নেত্রীর এই দাবির আগে অবশ্য গত সপ্তাহে সংসদে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দিল্লির অবস্থান কী তা স্পষ্ট করেছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি জানান, ২৬ নভেম্বর সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারির পর থেকে ঢাকার উপর দিল্লির নজর রয়েছে। এই ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিদেশমন্ত্রীর দাবি ছিল, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের উপদেষ্টা সরকারের কাছে অনুরোধও করেছে দিল্লি।
বাংলাদেশের এই ঘটনা হওয়ার পর থেকেই এই প্রশ্নে তৃণমূলের অবস্থান কী হবে, তা দিল্লির এবং রাজ্যের নেতাদের ঠিক করে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তাই সম্প্রতি তিনি জানিয়েছিলেন, এই ব্যাপারে কেন্দ্রের পাশেই থাকবে তৃণমূল কংগ্রেস। অতীতেও একাধিক ঘটনার উদাহরণ টেনে মমতা জানান, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে এটাই নিয়ম। এখানে রাজনীতির কোনও জায়গা নেই।
তবে, কূটনৈতিক মহলের দাবি, বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতি মুহূর্তের খবর রাখছে দিল্লি। বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে বাংলাদেশের উপদেষ্টা সরকারের কাছেও। যদিও দিল্লির এই অনুরোধের পরেও চট্টগ্রাম-সহ একাধিক জেলা থেকে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ আসছে। সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশের ৫০টি জেলা থেকে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ মিলেছে।
এই পরিস্থিতিতে কলকাতায় ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমন দাস জানিয়েছেন, জেলে চিন্ময়কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন আরও চার সন্ন্যাসী। সম্প্রতি চিন্ময়কৃষ্ণের খাবার ও ওষুধ নিয়ে চট্টগ্রামের জেলে গিয়েছিলেন তাঁরা। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন চিন্ময়কৃষ্ণের আপ্ত-সহায়কও।
শুধু পশ্চিমবঙ্গে বা ভারত নয়, সনাতনী এই হিন্দু নেতার মুক্তির দাবিতে আন্তর্জাতিক চাপও ধীরে ধীরে বাড়ছে। ইতিমধ্যে কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় পথে নেমেছেন হিন্দুরা। কড়া বিবৃতি দিয়েছে ওয়াশিংটনও। এই অবস্থায় কী করবে ইউনুস সরকার, সেটাই দেখতে চায় কূটনৈতিক মহল। কারণ, রাষ্ট্রসংঘের কাছে ইতিমধ্যেই এই সনাতনী হিন্দু নেতা সম্পর্কে নালিশ করেছে ঢাকা।