রাজ্যের জালিয়াতির ইতিহাসে এক অন্য মাত্রা সৃষ্টি করেছে। পড়ুয়াদের টাকা এখন কার কাছে, এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন ? তদন্তে নেমে রোজই চোখ ছানাবড়া হচ্ছে তদন্তকারীদের। এর জাল আসলে কোথায়, রোজ তা নিয়েই নাজেহাল রাজ্যের গোয়েন্দা বাহিনী।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার গঙ্গাসাগরের মহেন্দ্রগঞ্জ হাইস্কুল। এই স্কুলেই লেখাপড়া করে অর্পিতা পাল, সুমন শী, মারিয়াম খাতুন। সরকারি প্রকল্প মেনে তাদের মতোই আরও ৩১ জনের ট্যাবের টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু সেই টাকা তাদের অ্যাকাউন্টে আসনি। তা-হলে গেল কোথায় ? মুখে কুলুপ প্রধান শিক্ষকের। পড়ুয়ারা জানিয়েছে, টাকা ফেরতের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
আজ সুমন, অর্পিতার মতো রাজ্যের কয়েক লক্ষ পড়ুয়ার রাতে ঘুম উড়েছে। কারণ, তাদের টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে সাইবার অপরাধীরা। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, চিটফান্ড থেকে আবাস -- অতীতে অনেক জালিয়াতির সাক্ষী এই বাংলা। কিন্তু ট্যাবের টাকা জালিয়াতির ঘটনা যেন মাত্রা ছাড়িয়েছে। এই ঘটনায় বিরক্ত স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।
কারণ, রাজ্যে উচ্চ-মাধ্যমিকের পডু়য়াদের পাশে দাঁড়াতে পাশে দাঁড়িয়েছিল রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন তরুণের স্বপ্ন। কী ছিল সেই প্রকল্পের মধ্যে ? একাদশ ও দ্বাদশের পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার জন্য এই প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, এই প্রকল্পের জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। স্কুল শিক্ষা দফতরকে পড়ুয়াদের নাম ও অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠাবে স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেয় সরকার। অভিযোগ অনেক পড়ুয়া সেই টাকা পায়নি। তদন্তে দেখা যায় এক পড়ুয়ার টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। সেই টাকা আবার তুলেও নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নবান্নে বৈঠক করেছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং ডিজি রাজীব কুমার। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, জালিয়াতি হয়েছে বিভিন্ন সাইবার ক্যাফে থেকে। ব্যবহার করা হয়েছে লগ-ইন ক্রেডেনশিয়ালস। যার সাহায্য বদলে দেওয়া হয়েছে অ্যাকাউন্টের নম্বর। বদল করা হয়েছে আইএফএসসি কোড। অ্যাকাউন্ট নম্বর এক থাকার ফলেও টাকা চলে গিয়েছে। রাজ্যের ছটি জেলা থেকে জালিয়াতি হয়েছে বলে দাবি।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এই প্রতারণার জাল বাংলার সীমানা পেরিয়ে পৌঁচ্ছে গিয়েছে ভিন-রাজ্যে। বিহার এবং মধ্যপ্রদেশের যোগ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। আইএফএফসি কোড বদলে সাহায্য নেওয়া হয়েছে কিষাণগঞ্জ এবং রায়পুরের। জেলা থেকে এই প্রতারণার জাল এখন কলকাতাতেও। গল্ফগ্রিন থানায় দায়ের হয়েছে অভিযোগ। কিন্তু কার জড়িত এই প্রতারণার সঙ্গে ?
ট্যাব কেলেঙ্কারির তদন্তে গ্রেফতার একাধিক। যাদের মধ্যে রয়েছে উত্তরবঙ্গের এক চা শ্রমিক। কেলেঙ্কারিতে যুক্ত অভিযোগে গ্রেফতার এক কৃষক। তবে ঘটনার এপি সেন্টার হিসাবে উঠে এসেছে মালদহের নাম। যেখানে গ্রেফতার করা হয়েছে এক সরকারি স্কুলের এক কম্পিউটার প্রশিক্ষক। তদন্তকারীদের দাবি, ট্যাবের জালিয়াতির প্রথম অভিযোগ ওঠে ঠাকুরপুকুর এবং যাদবপুরের স্কুল থেকে।
এই জালের শেষ কোথায় ? প্রশ্ন এখন সরকারের অন্দরে। ইতিমধ্যেই লেগেছে রাজনীতির রং। কারণ, পশ্চিম মেদিনীপুরে এই ঘটনায় নাম উঠেছে তৃণমূল নেতার ছেলের। তাই এই জাল এবার দ্রুত গোটাতে চান তদন্তকারীরা।