প্রান্তিক ও গরিব মানুষদের বাড়ি তৈরি করার জন্য প্রকল্প রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। রাজ্যের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সেই প্রকল্পের বকেয়া টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। বঞ্চিত হচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষরা। আর, সেই কারণে সাধারণ মানুষের বকেয়া টাকা মেটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে গরিব ও প্রান্তিক মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা পাঠাতে চলেছে রাজ্য সরকার।
রাজনৈতিক মহলের মত, রাজ্য সরকার যদি এই কর্মসূচি সঠিক ভাবে পালন করতে পারে তাহলে তা মাইলফলক হয়ে থাকবে। কেন মাইলফলক বলা হচ্ছে? তাদের যুক্তি, আগে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আবাস যোজনার টাকা দেওয়া হত। কিন্তু নয়া কর্মসূচিতে সেই টাকার পুরোটাই দেবে রাজ্য সরকার। এখনও পর্যন্ত গোটা দেশের কোনও রাজ্য সরকার এক সঙ্গে এই বিপুল পরিমাণ টাকা দেয়নি। রাজ্য সরকারের এই কর্মসূচিতে একপ্রকার রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে। সেই কারণেই মাইলফলক বলা হচ্ছে।
কবে টাকা পাঠাবে রাজ্য সরকার?
বাড়ি তৈরির জন্য ধাপে ধাপে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ১২ লাখ গরিব পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির টাকা পৌঁছে যাবে।
কত টাকা করে পাবেন উপভোক্তারা?
প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা করে পাঠাবে নবান্ন। সেই টাকা খরচ করার পর দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাঠানো হবে। প্রথম কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য ৭২০০ কোটি টাকা রিলিজ করবে রাজ্য সরকার।
কতজন উপভোক্তা সুবিধা পাবেন?
প্রথমে রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছিল, ১১ লাখ ৩২ হাজার পরিবারকে অনুদান দেওয়া হবে। কিন্তু এরপর উপভোক্তার সংখ্যা বৃদ্ধি করার ঘোষণা করা হয়। জানানো হয় ১২ লাখ উপভোক্তা আবাস যোজনার টাকা পাবেন।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্নে জানিয়েছিলেন, রাজ্যে মাটির বাড়ির সংখ্যা ৩৬ লাখ। এই বছর ১২ লাখ বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ বাড়িও রয়েছে।
প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে সব অনুদান বণ্টনের সমস্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলা হবে। তারপর টাকা পাঠানো শুরু হবে। কিন্তু সম্প্রতি পঞ্চায়েত দফতর থেকে আরও একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে জানানো হয় ১৫ ডিসেম্বর থেকে টাকা পাঠানো শুরু করতে হবে। সেইমতো বড়দিনের আগেই বাড়ি তৈরির টাকা পেয়ে যাবেন উপভোক্তারা।
রাজ্যের শাসক দলের অভিযোগ, আবাস যোজনা খাতে ৮২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও তা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এছাড়াও ১০০ দিনের টাকা আটকে রাখার অভিযোগও ওঠে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। সেই দাবি-দাওয়া পূরণে দিল্লিতে গিয়ে ধরনা দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর লোকসভা ভোটের আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, আবাস যোজনার বকেয়ার টাকা দেবে রাজ্য সরকার।
ডিসেম্বর মাস তৃণমূলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাস হয়ে উঠতে চলছে। কারণ, টাকা পৌঁছনোর পর গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে উদযাপন শুরু হবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতর থেকেই এই নির্দেশ দেওয়া হবে। ব্লক স্তরে একাধিক কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে।