আমরণ অনশন প্রত্যাহার জুনিয়র ডাক্তারদের ।গত ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় অনশনে বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা । ১০ দফা দাবি আদায়ে অনশনে বসেছিলেন তাঁরা । অবশেষে ১৭ তম দিনে অনশন প্রত্যাহার করলেন । একইসঙ্গে মঙ্গলে যে ধর্মঘট কর্মসূচি ছিল, তাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে ।সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠকের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তাঁদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা ।
এদিন, নবান্নের বৈঠক থেকে বেরিয়ে জিবি মিটিং করেন জুনিয়র ডাক্তাররা । তারপর সাংবাদিক বৈঠক করে জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার জানান, তাঁরা অনশন প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন । কিন্তু তাঁর কথায়, এদিন বৈঠকে প্রশাসনের ‘শরীরী ভাষা’ তাঁদের ভাল লাগেনি। তাঁরা এই অনশন প্রত্যাহার করছেন নির্যাতিতার বাবা-মা ও সাধারণ মানুষের অনুরোধে । দেবাশিস বলেন, "তিলোত্তমার মা-বাবা ও সমাজের বিশিষ্টজনের কথার সম্মান রেখে আমরণ অনশন প্রত্যাহার করছি। এই গোটা বিষয় রাজি করাতে কাকু-কাকিমা রাজি করিয়েছেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য ধর্মঘটও প্রত্যাহার করলাম। "
এদিন নবান্নের বৈঠকে লাইভ স্ট্রিমিং হয় । তবে, যে ১৭ জন জুনিয়র ডাক্তার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের বিষয়টা জানতেন না, এমনই দাবি করেছেন দেবাশিস হালদার । তবে, বৈঠকে তাঁরা সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়েছেন । জুনিয়র ডাক্তারদের অভিযোগ, "আমরা থ্রেট কালচার নিয়ে কথা বলেছি। মুখ্যমন্ত্রী হুমকি দিয়ে বলেছেন, আমাকে জানিয়ে কেন মনিটরিং কমিটি গঠন করা হল না? যাঁরা সেখানে ছিলেন, এমনকি, আর জি করের অধ্যক্ষকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের রীতিমত থ্রেট দেওয়া হয়েছে।"
ধর্মঘট, অনশন প্রত্যাহার করা হলেও আন্দোলন তাঁদের চলবে বলে জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা । দেবাশিস জানান, শনিবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মহা গণকনভেনশনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে ।
নবান্নের বৈঠকে কী হল ?
থ্রেট কালচার নিয়ে একাধিক অভিযোগ জুনিয়র ডাক্তারদের।
এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমও। নবান্নের বৈঠকে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমকে অপসারণের দাবি করলেন দেবাশিস হালদার, অনিকেত মাহাতো, কিঞ্জল নন্দরা।
এদিন চিকিৎসক দেবাশিস হালদার বিরূপাক্ষ ও অভীকের নাম নিতেই থামিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, যখন কেউ উপস্থিত নেই, তার নাম না নেওয়াই ভাল। ১৪ অগাস্ট রাতে আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুরে অভিযোগে ধৃতদের জামিন দেওয়া হয়। সেই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মতামত জানতে চান আন্দোলনকারী চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ। মুখ্যমন্ত্রী তখন জানান, "এটা নতুন দাবি।" চিকিৎসকরা জানান, এটা তাঁদের দাবি নয়, মতামত জানতে চাইছেন তাঁরা। নবান্নের বৈঠকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তোলেন অনিকেত মাহাতো। তিনি জানান, "আরজি করের মতো দ্বিতীয় ঘটনা যাতে না হয়, তা দেখা হোক। মেয়েদের নিরাপত্তার জায়গাটা দেখা হোক।" জুনিয়র ডাক্তাররা রাজ্যস্তরের টাস্কফোর্স গঠন করার দাবি করেন।
জুনিয়র ডাক্তারদের প্রত্যুত্তরে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ বলেন, "ইতিমধ্যে অনেক কাজ এগিয়েছে। প্রত্যেক মেডিকেল কলেজ যাতে নিরাপদ পরিবেশ থাকে, তা আমাদেরও প্রচেষ্টা। আমরা স্টেট লেভেল টাস্ক ফোর্স করেছি। গ্রিভ্যান্স রিড্রেসল সেলও গঠন করা হয়েছে। ইমেল আইডি দিয়েছি। যেখানে অভিযোগ জানাতে পারবেন।" ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন মনোজ পন্থ।
ডাক্তারদের প্রশ্ন নিয়ে বৈঠকে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রীও। তিনি জানান, "কাজটা তোমরাই করবে। তোমাদের মতামতকে স্বাগত জানাই।" আরজি কর হাসপাতালের অধ্যক্ষকে ধমক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, কোনও সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো উচিত। মমতা বলেন, "এভাবে তাঁদের না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে না। প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে না। আরজি করের প্রিন্সিপাল কেন ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করলেন কেন? কীভাবে নিজে এই সিদ্ধান্ত নিলেন? রাজ্য সররকারকে জানানো প্রয়োজন মনে করলেন না? এটা থ্রেট কালচার নয়? তদন্ত না করে কাউকে সাসপেন্ড নয়। ইচ্ছে মতো কাজ করবেন না। কেউ কাউকে থ্রেট করবেন না। আমি ক্ষমতায় বলে থ্রেট করতে পারি না।"
ব়্যাগিং নিয়েও মুখ খোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, "আমরা চাই না ব়্যাগিং হোক।" সুপ্রিম কোর্টের শুনানি নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবীকে নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে আইনজীবী বললেন, হাসপাতালে শুধু তুলো ছাড়া পাওয়া যায় না।" মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপালগুলিকে মুখ্যমন্ত্রী জিজ্ঞাসা করেন, এটা ঠিক কিনা। দেশের কাছে রাজ্য়ের মুখ পুড়েছে বলেও মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী।