স্বাধীনতা দিবসের মাঝরাতে আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে শহরের পথের 'দখল' নিচ্ছিলেন মেয়েরা। দিকে দিকে লম্বা হচ্ছিল মিছিল, জোরালো হচ্ছিল প্রতিবাদ, তারই সুযোগ নিয়ে বুধবার মাঝরাতেই তাণ্ডব চালানো হল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কোলাপসিবল গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব চালালেন একদল ব্যক্তি। একই সঙ্গে ভাঙচুর চালানো হয় হাসপাতালের বাইরের চত্বরেও। হামলাকারীদের আক্রমণে তছনছ হয়ে গিয়েছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের মঞ্চেও ভাঙচুর চালানো হয়।
তাণ্ডবের প্রথম ত্রিশ মিনিট, দাঁড়িয়ে দেখার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছয়। নামানো হয় র্যাফ। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করা হয়। হামলায় আহত হন বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মীও। রাত বাড়লে ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। কিন্তু হামলাকারীদের পরিচয় জানা যায়নি বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত। এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে কি না, জানা যায়নি তা-ও।
বুধবার রাত প্রায় সাড়ে ১২টা। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে তখন চলছে 'রাত দখল' অভিযান আরজি করের দিকে এগোচ্ছিল সেরকমই একটি মিছিল। ঠিক সেই সময়েই, এক দল ব্যক্তি আরজি করের জরুরি বিভাগের বাইরে তাণ্ডব চালান। তাঁদের কয়েক জনের হাতে রড এবং লাঠি ছিল বলে অভিযোগ। জরুরি বিভাগের বাইরের কোলাপসিবল গেট ভেঙে উপড়ে ফেলা হয়। ভিতরে ঢুকে সব কিছু লন্ডভন্ড করে দেন তাঁরা। ভেঙেচুরে ফেলা হয় জরুরি বিভাগের সব কিছুই। মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে ওষুধপত্র, ইঞ্জেকশনের ভাঙা ভায়াল। গোটা জরুরি বিভাগ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে চুরমার হওয়া কাচ। একতলার জরুরি বিভাগ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা
হাসপাতাল চত্বরে রাখা বাইক, পুলিশের একাধিক গাড়ি-বাইকও ভাঙচুর করা হয়। আক্রমণ চালানো হয় আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের মঞ্চেও। গোটা সময় জুড়ে চলে ইটবৃষ্টিও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে র্যাফ নামায় পুলিশ। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ শুরুতে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুষ্কৃতীদের ধরার, পড়ুয়াদের দাবি ন্যায্য ও সঙ্গত বলে উল্লেখ করেন অভিষেক।
আরজি করের তাণ্ডবের পরেও জুনিয়র ডাক্তাররা স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতেও আন্দোলন থেকে পিছু হটছেন না তাঁরা। তছনছ হয়ে যাওয়া আরজি কর থেকেই আন্দোলনরত চিকিৎসকদের মুখ থেকে ফের স্লোগান ওঠে অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে।