মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। এর থেকে নিস্তার চান। চান তাঁর মেয়ের ঠিক বিচার। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহকে ইমেইল করে এই কথাই জানাল আরজি কর হাসপাতালের নিহত মহিলা চিকিৎসকের পরিবার। এদিন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর জন্মদিন। তাঁর সঙ্গে দেখা করারও আর্জি জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা ও মা। বুধবার, রাজ্য সফরে আসার কথা ছিল অমিত শাহের। গত দু মাসের বেশি সময় ধরে মেয়েকে হারিয়ে শূন্য নির্যাতিতার পরিবার। ইতিমধ্যেই মেয়ের বিচার চেয়ে একাধিক জায়গায় দরবার করেছেন তাঁরা। গত ৯ অগাষ্টের পর থেকে কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে একাধিক বার গাফিলতি, প্রমাণ লোপাট এমনকি টাকা দিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করারও অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে নবান্ন।
সোমবার রাতেও জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের হাত শক্ত করতে ধর্মতলার অস্থায়ী মঞ্চে গিয়েছিল নির্যাতিতার পরিবার। কার্যত তাঁদের অনুরোধেই টানা ১৭ দিন অনশন চালানোর পর তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কিন্তু আন্দোলন থেকে পিছিয়ে আসেননি। শনিবার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক দেওয়া হয়েছে গণ কনভেনশনের। যাঁদের মেয়ের জন্য এই প্রতিবাদ-আন্দোলন তাঁরা কিন্তু সবসময় ছিলেন, এই জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে। তাঁরা নতুন করে কোনও সন্তান হারাতে চান না। অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই নির্যাতিতার পরিবারের এই উপলব্ধি।
গত ১৭ দিন এক গমগমে ধর্মতলাকে দেখেছে তিলোত্তমা। এই ধর্মতলা দিয়ে অনেকেই যান, আসেন। কিন্তু এই কদিন এই চত্বর ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। শুধুমাত্র নির্যাতিতার বিচার চেয়ে এবং রাজ্যের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তায় ১০ দফা দাবিতে অনড় থেকে অনশন চালিয়ে গিয়েছেন স্নিগ্ধা হাজরা, অর্ণব মুখোপাধ্যায়, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরার মতো এই রাজ্যের ভবিষ্যতের চিকিৎসকেরা। পুজো এসেছে, পুজো গিয়েছে স্রেফ জল খেয়ে সহকর্মীর বিচারের অপেক্ষায় আন্দোলনকে হাতিয়ার করেই বেঁচেছিল তাঁদের জীবন। ভরসা আদালত আর ‘গণদেবতা’।
আর এই কদিনে আরজি করকে কেন্দ্র করে বঙ্গ আন্দোলনের মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন এক ঝাঁক তরুণ জুনিয়র ডাক্তার। তালিকা দীর্ঘ। তবুও গত ১৭ দিনের অনশন মঞ্চে বারবার প্রতিফলিত হয়েছে দেবাশিস, কিঞ্জল, অনিকেত, রুমেলিকাদের নাম। ‘বিজয়া’র বিষন্নতা কাটিয়ে দীপের আলো জ্বলবে বাংলার ঘরে। এই সমাজে সাধারণের কাছে ডাক্তাররা আজও ভগবান তুল্য। কিন্তু এই কদিনের আন্দোলনে তাঁরা কেউ ছেলে, কেউ আবার ভাই হয়ে উঠে এসেছেন। কেউ এসে তাঁদের হাতে তুলে দিয়ে গিয়েছেন জমানো টাকা, কেউ বা ‘দাদা দিদি’দের দিতে চেয়েছে ভাইফোঁটা। সোমবার রাতেই অনশন ভাঙার পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৭ জুনিয়র ডাক্তারকে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে সবারই কম বেশি শরীর অসুস্থ। আর ধর্মতলায় ? ১৭ দিন পর সব আছে, নেই শুধু প্রতিবাদ আন্দোলনের গর্জন।